
পটুয়াখালী প্রতিনিধি; মনজুর মোর্শেদ তুহিন
শীতের শেষ ও ফাল্গুন আসার পূর্ব থেকেই কুয়াকাটায় বাড়ছে পর্যটকদের চাপ। আগত পর্যটকদের কেন্দ্র করেই শুরু হয়েছে বিভিন্ন নামে চাঁদাবাজি। উপজেলা প্রশাসনের নামে চাঁদা আদায়ের রশিদ কেটে প্রতিটি যানবাহন থেকে আদায় করে টাকা। রশিদে উল্লেখিত পরিমান টাকার বাইরেও আদায় হয় কয়েক গুণ টাকা। চাঁদা সংগ্রহে রয়েছে বেতনভুক্ত কর্মী।
সারেজমিনে জানা যায়, কুয়াকাটা সৈকতে দেশের প্রতিটি জেলা থেকে প্রতিদিন ঘুরতে আসছে হাজার হাজার মানুষ। অধিকাংশই দল বেঁধে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, সংগঠন কিংবা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে পরিবহনের বাস নিয়ে বেড়াতে আসে এখানে। কুয়াকাটা পৌর বাস টার্মিনাল ছাড়াও আরো তিনটি স্থানে বাস পার্কিংয়ের জায়গা রয়েছে। এছাড়াও সৈকত সংলগ্ন ভেরিবাধে সারিবদ্ধভাবে পার্কিং করা হয়। প্রতিদিন গড়ে ৭০-৮০টি বাস নিয়ে ঘুরতে আসে পর্যটকরা। পৌর বাস টার্মিনাল বাদে পৌরসভায় প্রবেশ করতে দিতে হয় ১০০ টাকা, প্রতিটি পার্কিংয়ের জন্য গুনতে হয় ৩০০-৫০০ টাকা, বেড়াতে আসা টুরিস্টদের অস্থায়ী রান্নার জন্য গুনতে হয় ৫০০-৬০০ টাকা, পানি সরবরাহের জন্য গুনতে হয় আরো ৪০০ টাকা। উপজেলা প্রশাসনের স্বঘোষিত নিয়মের ব্যত্যয় ঘটলে গুনতে হয় আরো ৩০০থেকে ৫০০ টাকা। পৌরসভার মাধ্যমে চারটি পাবলিক টয়লেট থাকা সত্ত্বেও অস্থায়ী টয়লেট বসিয়ে আদায় করা হয় টাকা। দুপুর ২ টার পর কোন বাস অবস্থান করলে তাকে গুনতে হবে পরবর্তী দিনের ভাড়া। একটি বাস কুয়াকাটার অবস্থান করলে গুনতে হবে ১৫০০-১৮০০ টাকা। এসব সংগ্রহে নিয়োজিত রয়েছে উপজেলা প্রশাসন থেকে ১০-১৫ জনের একদল কর্মী। রয়েছে উপজেলা প্রশাসনের নামে চাঁদা আদায়ের রশিদ। কুয়াকাটা টুরিস্ট এলাকায় প্রতিদিন গড়ে ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকার উপরে প্রশাসনের নামে চাঁদা আদায় হয়। এছাড়াও পার্কিং সংলগ্ন অন্তত ১৫০ টির মত অস্থায়ী দোকান বসার অনুমতি দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ভাতের হোটেল, চকলেট আচার, ঝিনুক মালা সহ চা সিগারেটের দোকান। বিগত বছরগুলোয় মাসে ১০ হাজার টাকা ভাড়া দিলে এবছর এখনো কোনো ভাড়া নির্ধারণ হয়নি।
জানা যায়, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের আমলে এই চাঁদাবাজি প্রথা চালু করে কুয়াকাটা পৌর আওয়ামী লীগ। ৫ ই আগস্ট স্বৈরশাসক পতনের পর দায়িত্ব নেয় কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার যিনি বর্তমানেও দায়িত্বে আছেন। উপজেলা জনপ্রতিনিধি না থাকার সুযোগে নির্বাহী কর্মকর্তা পৌরসভা থেকে প্রতিটি ইউনিয়নে চালাচ্ছে তার আধিপত্য। এছাড়াও উপজেলা সহকর্মীদের উপর চালাচ্ছে প্রভাব। স্বৈরশাসকের প্রচলিত প্রথার কোন পরিবর্তন হয়নি তাহার মাধ্যমে।
সরাসরি চাঁদা আদায়কারী মোঃ কবির হোসেন বলেন, আমি আছি টোটাল মাঠের দায়িত্বে। আমি ইউএনও স্যারের সাথে এইটার দ্বায়ীত্বে। আমাকে বেতন দেয় ১০ হাজার টাকা। আমি ছাড়াও সবখানে স্যারের লোক রয়েছে। যেখানে যেখানে গাড়ি রাখে সব জায়গায় স্যারের লোক আছে। এই মাঠের ভিতরে ঢুকলে সব টাকা আমি আদায় করি। বাসপ্রতি ১৬০০ টাকা আসে আমি ১৫০০ পর্যন্ত রাখতে পারি। এর চেয়েও কমাতে চাইলে ইউএনও স্যারের সাথে আলাপ করেন।
বাস চালক আবুল কালাম বলেন, আমি প্রতিমাসে ২-৩ বার টুরিস্টদের নিয়ে আসি। স্থানীয় চাঁদাবাজদের উৎপাতে আমরা অতিষ্ঠ। রাস্তায় দাঁড়ানো থেকে শুরু করে সবখানে চাঁদা দিতে দিতে আমরা ক্লান্ত। টাকা পরিশোধ না করায় অনেকের গাড়ির চাবি নিয়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।
কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ রবিউল ইসলাম বলেন, রশিদ কেটে যেটা আদায় হয় সেটা লিগাল এবং খাস আদায় চলমান। এটা জেলা প্রশাসনের পার্কিং। জেলা প্রশাসকের নির্দেশে গাড়িগুলো সুশৃংখলভাবে রাখার জন্য ডাল দিয়ে সুশৃঙ্খভাবে রাখার জন্য প্রতিবছর এ ব্যবস্থা করা হয়। বরং এটা বাদে বাকি সবগুলোই ইলিগাল। বাস প্রতি সর্বোচ্চ ৩০০ টাকা নির্ধারণ করা অতিরিক্ত কেহ নিলে তাদের বিরুদ্ধে অ্যাকশন নেয়া হবে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (ডিডিএলজি) জুয়েল রানা বলেন, ডিসি স্যার ছুটিতে থাকায় আমি ভারপ্রাপ্ত দায়িত্বে আছি। আমি এই ব্যাপারটি প্রথম অবগত হলাম। এখানে কোন অনিয়ম আছে কিনা ব্যাপারটি খতিয়ে দেখব।