বাকৃবি প্রতিনিধি:
বাংলাদেশ সোসাইটি ফর ভেটেরিনারি এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ’ (বিএসভিইআর)-এর আয়োজনে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) ৩১তম বার্ষিক বৈজ্ঞানিক সম্মেলন শুরু হয়েছে। দুই দিনব্যাপী এ সম্মেলনে বাকৃবি ছাড়াও দেশের ১৩টি বিশ্ববিদ্যালয় ও ছয়টি প্রতিষ্ঠানসহ দেশি-বিদেশি ৫০০-র বেশি গবেষক, ভেটেরিনারিয়ান ও শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করছেন। এবারের সম্মেলনের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘প্রাণীর স্বাস্থ্য ও খাদ্য নিরাপত্তার ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব’।
শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন মিলনায়তনে এ সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাকৃবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়া।
বিএসভিইআরের সভাপতি ও সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আলিমুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, ভেটেরিনারি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. বাহানুর রহমান, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. আবু সুফিয়ান, ফ্লেমিং ফান্ড কান্ট্রি গ্রান্ট টু বাংলাদেশের টিম লিডার অধ্যাপক ড. শাহ মনির হোসাইন এবং ইন্টার এগ্রো বিডির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. এ কে এম খশরুজ্জামান।
সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন রবিবার (২ ফেব্রুয়ারি) ১২টি টেকনিক্যাল সেশনে ৯০টি মৌখিক গবেষণা এবং ১৬২টি পোস্টার উপস্থাপন করা হবে। এর মধ্য থেকে সেরা পোস্টার উপস্থাপনায় ছয়টি এবং সেরা মৌখিক উপস্থাপনায় ১২টি পুরস্কার প্রদান করা হবে।
সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) ঘানায় নিযুক্ত সিনিয়র অ্যানিমেল প্রোডাকশন অ্যান্ড হেলথ অফিসার অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শামছুদ্দিন। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে উষ্ণতা বৃদ্ধি, অনিয়মিত বৃষ্টিপাত এবং গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের ফলে খাদ্য নিরাপত্তা ও প্রাণিসম্পদ খাত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পশুখাদ্যের গুণগতমান ও প্রাণিসম্পদের উৎপাদনশীলতা কমছে। পাশাপাশি দূষণ ও অ্যান্টিবায়োটিকের অতিরিক্ত ব্যবহারের কারণে খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে। প্রতিবছর প্রায় ৩০ মিলিয়ন মানুষ খাদ্যবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে এবং অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্সের কারণে ২০৫০ সালের মধ্যে প্রতি বছর ১০ মিলিয়ন মানুষের মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে।
সম্মেলনের অন্যতম বিশেষ আয়োজন হিসেবে এবারই প্রথমবারের মতো স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীদের জন্য ‘উদ্যোক্তা সন্ধ্যা’ আয়োজন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা উদ্যোক্তা হওয়ার সুযোগ ও চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ পাবেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাকৃবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়া বলেন, দেশের উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে প্রতিটি পেশার দায়িত্বও বেড়েছে। গবেষণালব্ধ জ্ঞান শুধু বইয়ের পাতায় সীমাবদ্ধ না রেখে দ্রুত মাঠপর্যায়ে খামারিদের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। উচ্চ শিক্ষার প্রচলিত কাঠামো সময়ের সঙ্গে পরিবর্তন করা প্রয়োজন, যেন তা বাস্তব চাহিদার সঙ্গে মানানসই হয়।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক ড. মো. আলিমুল ইসলাম বলেন, বিশ্বজুড়ে নতুন নতুন রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিচ্ছে, যা প্রতিরোধে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরি। প্রাণিজ উৎপাদনের পাশাপাশি প্রাণিস্বাস্থ্য ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত না করলে কোনো উন্নয়ন টেকসই হবে না। তাই সময়োপযোগী গবেষণা এবং শিক্ষার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান খুঁজতে হবে।