ইসলাম: মানবসেবাকে উৎসাহ দিয়েছে

আপলোড সময় : ৩১-০১-২০২৫ ১১:৫৮:৩৬ অপরাহ্ন , আপডেট সময় : ৩১-০১-২০২৫ ১১:৫৮:৩৬ অপরাহ্ন



গাজী মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম জাবির 

শান্তির ধর্ম ইসলাম। মানবতার ধর্ম ইসলাম।মানবসেবা, মানবকল্যাণ এবং জনহিতকর কাজকে গুরুত্ব প্রদান করেছে ইসলাম। কেবল গুরুত্ব দিয়ে -ই শেষ নয়, এ কাজে অংশগ্রহণ করার ব্যাপারে উৎসাহও দিয়েছে। ইসলামে মানবসেবা বা পরোপকার সর্বোত্তম গুণ হিসেবে বিবেচিত । বেশ গুরুত্ব সহকারে মানবসেবার বিষয়টি ইসলামে আলোচিত হয়েছে।

মানবসেবা ইসলামের একটি অন্যতম কাজ। মুসলমান হিসেবে আমাদের কর্তব্য মানুষের দুঃখে কষ্টে পাশে থাকা, সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়া। আল্লাহর প্রেরিত নবী রাসূল এবং পীর-আউলিয়ারা যারা ইসলাম প্রচারের জন্য এ দেশে এসেছিলেন, তারা সবাই মানবতার সেবায় নিবেদিত ছিলেন।

হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 'যে ব্যক্তি কোনো মুমিনের পার্থিব কষ্টসমূহ থেকে কোনো কষ্ট দূর করবে কিয়ামতের দিন ঐ ব্যক্তির কষ্টসমূহ থেকে আল্লাহ তায়ালা তার কষ্ট দূর করবে,ঐ ব্যক্তি কোনো অভাবীকে দুনিয়াতে ছাড় দেবে আল্লাহ তাকে দুনিয়া ও আখিরাতে ছাড দেবেন। যে ব্যক্তি কোনো মুমিনের দোষ গোপন রাখবে, আল্লাহ দুনিয়া ও আখিরাতে তার দোষ গোপন রাখবেন। আর আল্লাহ বান্দার সাহায্যে থাকেন যতক্ষণ সে তার ভাইয়ের সাহায্য করে যায়।' (মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিজি)।


মানুষের সেবা করা, দুখী মানুষের পাশে দাঁড়ানো একটি উত্তম ইবাদত। যুগে যুগে ইসলামী মনীষীগণ মানব সেবার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন। বিদায় হজে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, 'তোমাদের তথা প্রতিটি মুসলমানের জান, মাল, সম্পত্তি, ইজ্জত, শরীরের চামড়া যেভাবে আজকের এ মহান ইয়ামুন্নাহারের দিনে, এ পবিত্র জিলহজ মাসে এ পবিত্র হেরেম শরিফে হারাম ও সুরক্ষিত, ঠিক তেমনিভাবে সব দিন, সব মাস ও সর্ব স্থানে হারাম ও সুরক্ষিত বলে গণ্য হবে। খবরদার! তোমরা আমার অবর্তমানে পুনরায় কাফেরদের ন্যায় পরস্পর মারামারি, কাটাকাটিতে লিপ্ত হবে না' (বুখারি)।


মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম 'হিলফুল ফুজুল' নামে একটি সংগঠন করে আর্তমানবতার সেবা, অসহায়দের সাহায্য- সহযোগিতা করে আরবের মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছিলেন। রাসূলের এই মানব সেবামূলক কাজ বিধর্মীদের কাছেও প্রশংসনীয় ছিল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা নিজে না খেয়ে গরীব দুঃখীকে খাবার দিয়েছেন। অন্যকে সাহায্য করার জন্য নিজের প্রয়োজনকে ত্যাগ করেছেন।


মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, 'আল্লাহর ইবাদত কর, দরিদ্রকে খাদ্য দান কর এবং উচ্চ শব্দে সালাম কর। নিরাপত্তা সহকারে জান্নাতে প্রবেশ করবে।' এই ছিল মহানবী (সা.) এর শিক্ষা। মহানবী আমাদের ভোগ বিলাস ত্যাগ করে অন্যের সাহায্যে নিজেকে নিয়োজিত করার জন্যে উৎসাহ দিয়েছেন। অসহায়কে সাহায্য করাকে নবীজি (সা.) জিহাদের সঙ্গে তুলনা করেছেন।


হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে; তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, 'বিধবা ও অসহায়কে সাহায্যকারী ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারীর সমতুল্য।' (বর্ণনাকারী বলেন,) আমার ধারণা তিনি আরো বলেন, 'এবং সে ওই সালাত আদায়কারীর ন্যায় যার ক্লান্তি নেই এবং ওই সিয়াম পালনকারীর ন্যায় যার সিয়ামে বিরত নেই।' (সহিহ বোখারি, সহিহ মুসলিম)।


মানব সেবায় ইসলাম এতো উৎসাহ দিয়েছে যে রাস্তা ও চলার পথ হতে সামান্য পাথর সরিয়ে ফেলার জন্যেও রয়েছে সাওয়াব। হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, 'ইমানের ৭২টি শাখা রয়েছে। এগুলোর মধ্যে একটি হলো রাস্তা থেকে কোনো কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে দেওয়া'(মুসলিম শরিফ)।


মানুষের জন্যে যার মনে কোনো দয়া নেই আল্লাহ তায়ালার রহমতও তার ওপর নেই।

হাদিস শরীফে এসেছে- মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, 'যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি দয়া প্রদর্শন করে না আল্লাহও তার প্রতি রহমত করেন না।' (তিরমিযী শরীফ)। দরিদ্রের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে প্রতিদান সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কেউ হালাল উপার্জন থেকে দান করলে আল্লাহ নিজে সেই দান গ্রহণ করেন, সেটি উত্তমরূপে সংরক্ষণ করেন। এক সময় সেই দানের সওয়াব পাহাড় তুল্য হয়ে যায়' (বুখারি ও মুসলিম)।


ইসলাম মানবিক কারণে সামান্য পরিমাণ সহায়তাকেও খাটো করে দেখে না। সে জন্য অতি নগণ্য পরিমাণ দানকেও উৎসাহিত করা হয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি দান-সাদকা দেয়, তা একটি খেজুর পরিমাণও হোক না কেন, আল্লাহ তা নিজ হাতে গ্রহণ করেন। তবে শর্ত এই যে, তা বৈধ পথে উপার্জিত হতে হবে। কেননা, আল্লাহ এই বস্তুকেই পছন্দ করেন এবং তা বৃদ্ধি করে নেন আর তা এতটাই যে, এই খেজুর এক পাহাড় পরিমাণ হয়ে যায়' (বুখারি ও মুসলিম)।


মানবসেবা, মানবতার কল্যাণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করাই ছিল মানবতার নবীর জীবনের মহান ব্রত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের মাঝে যারা তার প্রতিবেশীকে উপোস রেখে খাবার গ্রহণ করে, সে আমার অনুসারী নয়। ইসলাম ও ইসলামের নবী এভাবেই মানবসেবাকে গুরুত্ব প্রদান করেছেন। একজন মুসলমান হিসেবে মানবকল্যাণমূলক কাজে জড়িত থাকা, মানবসেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখা ঈমানি দায়িত্ব। ইসলাম ধর্মের অনুসারী হিসেবে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উম্মত হিসেবে আমাদের সবার উচিত সাধ্য-সামর্থ্য অনুযায়ী মানবসেবায় নিয়োজিত থাকা। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে মানবসেবামূলক কাজে বেশি বেশি অংশগ্রহণ করার মাধ্যমে প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আদর্শ ও ইসলামের নির্দেশ পালন করার তাওফিক দান করুন, আমিন। 




 

সম্পাদকীয় :

প্রকাশক ও সম্পাদক : মোঃ গোলাম মাওলা শাওন
মোবাইল : ০১৭১১-০০৬২১৪

অফিস :

প্রধান কার্যালয় : ৩১/১ শরীফ কমপ্লেক্স ৫ম তলা পুরানা পল্টন ঢাকা ১০০০

মোবাইল : ০১৯৯৯-৯৫৩৯৭০

ই-মেইল : [email protected],  [email protected]