প্রতিবেশীর জমির উপর থেকে জোর করে রাস্তা বানিয়েছে সেনা সদস্যের পরিবার

আপলোড সময় : ২৬-০১-২০২৫ ০৬:৫৪:৫৫ অপরাহ্ন , আপডেট সময় : ২৬-০১-২০২৫ ০৬:৫৪:৫৫ অপরাহ্ন




 
বিশেষ প্রতিনিধি:
 
পিরোজপুরের কাউখালীতে প্রতিবেশীর জমির উপর দিয়ে অন্যায়ভাবে একটি রাস্তা তৈরির অভিযোগ উঠেছে এক সেনা সদস্যের পরিবারের লোকজনের বিরুদ্ধে। এর আগে ভূক্তভোগী একটি পরিবারের সকল সদস্যকে মামলায় আসামী করে তাদেরকে এলাকা ছাড়া করা হয়েছে এবং জমির অন্য শরীকদেরও মামলায় আসামী করার ভয়ভীতি দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার শিয়ালকাঠি ইউনিয়নের ফলইবুনিয়া গ্রামে রাস্তার পাশে ৪ কাঠা জমির অংশীদার ওই গ্রামের মোশারেফ সিকদার, আব্দুল হালিম সিকদার, মজিদ সিকদার এবং সালাম সিকদার। কাউখালী উপজেলা ভূমি অফিসের অফিস সহায়ক সালাম সিকদারের বড় ছেলে মিরাজ সিকদার বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে সার্জেন্ট পদে এবং তার মেঝ ছেলে সবুজ সিকদার ট্যুরিস্ট পুলিশে কর্মরত। দীর্ঘ দিন ধরে জমিটি আড়াআড়িভাবে ভাগ করে এর ওয়ারিশরা ভোগদখল করে আসছিল। তবে সম্প্রতি সালাম সিকদার তার জমিতে একটি পাকা ভবন তৈরি করে এবং ঘর থেকে সামনো পাকা রাস্তা পর্যন্ত একটি সংযোগ রাস্তা নির্মানের জন্য অন্য তিনজনের জমি কিনতে চাইলে তারা জমি বিক্রি করতে অস্বীকৃতি জানায়। এরই মধ্যে পাকা ভবন নির্মানের পর প্রায় এক মাস আগে নতুন ঘরে বসবাস শুরু করে সালামের পরিবারের সদস্যরা। এরপর থেকে ঘরের সামনের ওই জমির উপর দিয়ে লম্বালম্বিভাবে রাস্তাটি নির্মানের জন্য তোড়জোর শুরু করে সালাম। এজন্য সে উপজেলা ভূমি অফিস ও স্থানীয় থানায় যোগাযোগ করে।

তবে ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি হওয়ায়, কেউই তাদেরকে এ বিষয়ে কোন ধরণের সহযোগীতা করতে অপরাগতা প্রকাশ করে। সর্বশেষ কিছু দিন পূর্বে ছুটি নিয়ে বাড়িতে আসেন মিরাজ এবং সবুজ। এরপর তারা ওই জমির উপর থেকে জোরপূর্বক রাস্তা নির্মানের প্রস্তুতি নেয়। এরই মধ্যে মিঠু নামের এক আত্মীয়কে মোটরসাইকেলযোগে পিরোজপুর বাসস্ট্যান্ডে পৌছে দেওয়ার জন্য গত ১৯ জানুয়ারি ভোররাত ৩টার দিকে সার্জেন্ট মিরাজ বাড়ি থেকে রওনা দেয়। তাদের মোটরসাইকেল টি বাড়ি থেকে ৭ কিলোমিটার দূরে পিরোজপুর সদর উপজেলার রানিপুর গ্রামে পৌছার পর আক্রমনের শিকার হয় তারা দুইজন এবং এতে মিরাজের মুখমন্ডলে জখম হয়। সেখান থেকে মিরাজ ও মিঠুকে উদ্ধার করে প্রথমে পিরোজপুর জেলা হাসপাতালে এবং পরবর্তীতে তাদেরকে ঢাকায় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) নেওয়া হয়। বর্তমানে তারা সেখানেই চিকিৎসাধীন রয়েছে।

এ ঘটনায় ওই দিন দুপুরে সালাম সিকদার বাদী হয়ে পিরোজপুর সদর থানায় হালিম সিকদার (৫৫), তার স্ত্রী হাসিনা বেগম হাঁসি (৫০), চার মেয়ে নুপুর বেগম (৪০), ঝর্না বেগম (৩৫), খুশি (৩০) ও নিশি (২৫), নুপুরের স্বামী মামুন হাওলাদার (৪৫), তাদের মেয়ে কলেজ পডুয়া মারিয়া আক্তার (১৯), ছোট মেয়ের স্বামী মোঃ রিজভী (৩৫), হাসির ভাইয়ের স্ত্রী খাদিজা বেগম (৪৫) এবং অজ্ঞাত আরও ২-৩ জনকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করে। এরপর সেনা সদস্যরা অভিযুক্তদের মধ্য থেকে ৪ জন এবং অজ্ঞাত ২ জনকে আটক করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। পরবর্তীতে তারা আদালত থেকে জামিন নিয়ে জেল থেকে বেরিয়ে আসে।

হালিমের মেয়ে তানিয়া জানায়, আসামীর তালিকায় নাম না থাকলেও তাকেও গ্রেফতার করা হয় এবং আতঙ্কে তার পরিবারের সকল সদস্য এবং ওই জমির অন্যান্য ওয়ারিশরা পালিয়ে বেড়াচ্ছিল। সেই সুযোগে জোর করে বাগানের বড় বড় গাছ কেটে তাদের জমির  উপর থেকে ১৯ জানুয়ারি রাস্তা তৈরি করে নেয় সালাম সিকদারের লোকজন।

তানিয়া আরও জানায়, রাস্তার কাজ শুরু করার কয়েক দিন আগে থেকেই বাড়িতে আত্মীয় স্বজনদের জড় করতে থাকে সালাম। এরপর মিরাজের উপর হামলার দোষ তাদের উপর চাপিয়ে তাদেরকে এলাকা ছাড়া করে। এমনকি বর্তমানেও সালামের ছেলেরা তাদেরকে বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শন করছে। গ্রেফতার আতঙ্কে বাড়ি থেকে পালিয়ে থাকার সুবাদে তাদের ঘরবাড়িতে সালামের লোকজন ভাঙচুর করেছে বলে অভিযোগ করেন তানিয়া। এছাড়া তাদের গৃহপালিত পশুপাখিকেও যাতে কেউ কোন খাবার না দেয় এজন্য অন্যদেরও শাসিয়েছে বলে দাবি করে সে। তার দাবি, তার বাবা হার্টের রোগী এবং তারা আর্থিকভাবে খুবই অসচ্ছল। এমনকি তাদের কোন ভাই না থাকায়, খুবই কষ্টে দিন চলে তারা মা-বাবার। আর তাই অর্থ ও ক্ষমতার জোরে তাদেরকে কোনঠাসা করে রেখেছে সালাম সিকদার।

স্থানীয়রা জানায়, হালিম সিকদার ও সালাম সিকদারের মধ্যেকার জমিজমার এ সমস্যাটি সমাধানের জন্য দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয়ভাবে মীমাংসার চেষ্টা করা হয়েছে। তবে এর কোন সমাধানে পৌছানো যায়নি। এদিকে অভিযোগের বিষয়ে সালাম সিকদারের ছোট ছেলে সজীব সিকদার দাবি করেন, লম্বালম্বিভাবে তাদের জমির উপর থেকে তারা রাস্তা তৈরি করেছে। তার দাবি হালিম সিকদারের লোকজনই তার ভাই মিরাজের উপর হামলা করেছে। তবে হালিম সিকদারের ঘরবাড়িতে ভাঙচুর করার অভিযোগ অস্বীকার করেছে সজীব।

এদিকে জোর করে রাস্তা নির্মানের পর কাউখালী থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছে হালিম সিকদার। বিষয়টি সমাধানের জন্য উভয় পক্ষকেই থানায় ডাকা হয়েছে বলে জানান কাউখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ সোলায়মান।


অন্যদিকে পিরোজপুর সদর থানায় সালামের দায়ের করা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রাধা রমন ভৌমিক জানান, সার্জেন্ট মিরাজের উপর হামলার ঘটনাটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। বর্তমানে সে চিকিৎসাধীন থাকায় তার সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে মামলার তদন্ত শেষ হলে প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে বলে জানান তিনি।



 

সম্পাদকীয় :

প্রকাশক ও সম্পাদক : মোঃ গোলাম মাওলা শাওন
মোবাইল : ০১৭১১-০০৬২১৪

অফিস :

প্রধান কার্যালয় : ৩১/১ শরীফ কমপ্লেক্স ৫ম তলা পুরানা পল্টন ঢাকা ১০০০

মোবাইল : ০১৯৯৯-৯৫৩৯৭০

ই-মেইল : [email protected],  [email protected]