এম মনির চৌধুরী রানা চট্টগ্রাম
গত এক মাসে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এবং পার্বত্য অঞ্চলে এরকম ১০টি সড়ক পৃথক দুর্ঘটনায় অন্তত ১৮ জন মোটরসাইকেল আরোহী প্রাণ হারিয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ৩০ জন। এছাড়া গত এক মাসে সড়ক দুুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন আরও অন্তত ১৫ জন। এরমধ্যে বেশিরভাগ দুর্ঘটনা ঘটেছে মহাসড়কে। বেপরোয়া বাস কিংবা দ্রুতগতির ট্রাক অধিকাংশ দুর্ঘটনার জন্য দায়ী।
বেপরোয়াভাবে মোটরসাইকেল ও ভারী যানবাহন চালানো, ট্রাফিক আইন না জানা ও না মানার প্রবণতা, দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনাসহ নানা কারণে চট্টগ্রামের সড়কে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা থামছে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। মোটরসাইকেলের বেপরোয়া গতি রোধ করা এবং ট্রাফিক আইন কড়াকড়ি করাসহ সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে দুর্ঘটনা কমানো সম্ভব বলেও মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
বেসরকারি সংগঠন রোড সেফটি ফাউন্ডেশন ও বাংলাদেশ যাত্রী কল্যান সমিতি সড়ক দুর্ঘটনার তথ্য সংরক্ষণের কাজ করে থাকে। ২০২৪ সালের তাদের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, চট্টগ্রাম বিভাগে ১ হাজার ২৯৮টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। যা সারাদেশের মোট দুর্ঘটনার ১৮.৭৩ শতাংশ। এরমধ্যে মারা গেছেন ১ হাজার ৪১৩ জন। যা সারাদেশের মোট নিহতের ১৯.৩৭% শতাংশ। এই হিসাবে চট্টগ্রাম অঞ্চলে দুর্ঘটনা ও দুর্ঘটনায় মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি। দুর্ঘটনার মধ্যে সবচেয়ে বেশি হচ্ছে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা। এক্ষেত্রে মৃত্যুর সংখ্যাও বেশি।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্যানুসারে ২০২৪ সালে দেশে ৬ হাজার ৯২৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৭ হাজার ২৯৪ জন নিহত হয়েছেন। এসব দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন ১২ হাজার ১৯ জন। দুর্ঘটনায় মানবসম্পদের ক্ষতির আর্থিক মূল্য ২১ হাজার ৮৮৬ কোটি ৩২ লাখ টাকা। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি হয়েছে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা। ২০২৪ সালে ২ হাজার ৭৬১টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত ২ হাজার ৬০৯ জন। এটি মোট নিহতের প্রায় ৩৬ শতাংশ। আর মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার প্রায় ৪০ শতাংশ। দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি হলো পণ্যবাহী যানবাহন। এর পরেই আছে মোটরসাইকেল।
সড়ক খাতের বিশেষজ্ঞদের মতে, চট্টগ্রামের সড়কগুলোতে মোটরসাইকেল ও ভারী যানবাহন বেপরোয়া গতিতে চলাচল করে। গতির প্রতিযোগিতা হয় সড়কে। এছাড়া চালকদের দক্ষতার ঘাটতি রয়েছে। ট্রাফিক আইন মানতে চান না কেউ। এ ব্যাপারে রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান বলেন, চট্টগ্রাম বাণিজ্যিক রাজধানী হলেও অনেক সড়ক অপ্রশস্ত। এছাড়া বেপরোয়া গতি ও অদক্ষ ব্যক্তি গাড়ি চালানোর কারণে দুর্ঘটনা ঘটছে।
সড়কে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা কমানোর ব্যাপারে তিনি বলেন, দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ নিতে হবে। চালকদের বেতন কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করা; পরিবহন মালিক শ্রমিক, যাত্রী ও পথচারীদের প্রতি ট্রাফিক আইনের বাধাহীন প্রয়োগ নিশ্চিত করা এবং মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন বন্ধ করে, এগুলোর জন্য আলাদা পার্শ্বরাস্তা তৈরি করা গেলে দুর্ঘটনা অনেকাংশে কমে আসবে বলে মনে করেন তিনি।
চট্টগ্রামের বার আউলিয়া হাইওয়ে পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, পুলিশের বিভিন্ন নির্দেশনা রয়েছে। অনেক গাড়ি চালক এসব নিয়ম না মেনে গাড়ি চালান। এছাড়া হেলমেট ব্যবহার, ট্রাফিক নিয়ম না মানা, বেপরোয়া গতি এবং নেশাগ্রস্ত অবস্থায় গাড়ি চালানোয় দুর্ঘটনা বাড়ছে।