নিজস্ব প্রতিবেদক
তাবলীগ জামাতের উভয় পক্ষের মধ্যে বৈষম্য নিরসন ও চলমান সংকটের স্হায়ী সমাধানের দাবিতে মুন্সিগঞ্জের সচেতন ছাত্র সমাজের উদ্যগে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে ।
উক্ত অনুষ্ঠানে সচেতন ছাত্ররা জানান, তাবলীগ জামাত যা মুসলিম উম্মাহর ঐক্যের প্রতীক এবং সারা বিশ্বে ইসলামের দাওয়াহ কার্যক্রমের অন্যতম মাধ্যম।আমরা লক্ষ্য করছি যে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তাবলীগ জামাতের অভ্যন্তরীন বিভেদ সংঘর্ষে রুপ নিয়েছে যার ফলশ্রুতিতে প্রাণহানির মতো দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছে যা দেশের সার্বিক স্থিতিশীলতা ও শান্তি শৃঙ্খলার জন্য হুমকি স্বরূপ। এই পরিস্হিতি শুধু তাবলীগ জামাতেরই ক্ষতি করছে না বরং বৃহত্তর মুসলিম সমাজের ঐক্য ও সৌহার্দ্যকেও প্রশ্নবিদ্ধ করছে। আমরা নিবিড় ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি যে তবলীগ জামাতের বিবদমান পক্ষদ্বয়ের মধ্যে এক পক্ষ চরম বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। তাই আজকে আমরা আপনাদের মাধ্যমে দেশবাসীকে সেই বৈষম্যের চিত্র তুলে ধরতে চাই এবং এর সমাধানের সম্মিলিত প্রচেষ্টার আহ্বান জানাই।
বৈষম্যের চিত্র
১, প্রধান মুরুব্বিদের আগমনে বৈষম্য :
শুরাই নেজামের প্রধান মুরুব্বিরা ভারত ও পাকিস্তান থেকে নির্বিঘ্নে আসতে পারেন। অথচ বিশ্ব মারকাজ নিজামুদ্দিনের (মুলধারার তাবলীগ) অনুসারীদের সর্বোচ্চ মুরুব্বি বিশ্ব আমির মাওলানা সাদ কান্দ লভি সাহেব বারবার বাধার সম্মুখীন হয়েছেন এবং এখনো আসতে পারছেন না।
২, কাকরাইল মসজিদ ব্যবহারে বৈষম্য
কাকরাইল মসজিদ, যা তাবলীগ জামাতের প্রধান কেন্দ্র গুলোর একটি, তাবলীগের বিশ্ব মারকাজ নিজামুদ্দিনের অনুসারীরা এতোদিন যাবত ১৪ দিন তাদের কার্যক্রম পরিচালনায় ব্যবহার করতেন, তারপর শুরাই নেজাম (মাওলানা জুবায়ের সাহেবের অনুসারীরা) ২৮দিন ব্যবহার করতেন। এভাবে ধারাবাহিকভাবে এক পক্ষ ১৪ দিন এবং অপর পক্ষ ২৮ দিন কাকরাইল মসজিদ ব্যবহার করতেন যা স্পষ্ট বৈষম্য। কিন্তু বর্তমানে একপক্ষ জোরপূর্বক কাকরাইল মসজিদের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে রেখেছেন যা বৈষম্যর চরম প্রতিফলন।
৩, টংঙ্গীর ইজতেমা ময়দানের নিয়ন্ত্রণে বৈষম্য
টংঙ্গীর ময়দান যা বিশ্ব ইজতেমার কেন্দ্রেস্হল, বছরের অধিকাংশ সময় শুরাই নেজামের নিয়ন্ত্রণে থাকে।নিজামুদ্দিনের মূলধারার তাবলীগ শুধু ইজতেমার সময় সীমিত কয়েকদিন ময়দান ব্যবহার করতে পারেন।
৪, ইজতেমার সময় বরাদ্দে বৈষম্য
বিগত বছরগুলোতে শুরাই নেজাম প্রথম পর্বের ইজতেমা আয়োজন করে আসছেন। বিশ্ব মারকাজ নিজামুদ্দিনের অনুসারীদের অনিচ্ছা সত্ত্বেও বারবার দ্বিতীয় পর্বে ইজতেমা করতে হচ্ছে।
৫, মসজিদকেন্দ্রিক আমলে বাধা প্রধান ও বৈষম্য
বিশ্ব মারকাজ নিজামুদ্দিনের অনুসারী মূলধারার তাবলীগের কর্মিরা বিভিন্ন মসজিদে আমল করতে গেলে প্রায়ই বাধার সম্মুখীন হয়। মসজিদ গুলোতে তাদের অবস্থান, দাওয়াহ কার্যক্রম এবং আমল পরিচালনায় শুরাই নেজামের পক্ষ থেকে বাধা প্রধান করা হয়। এ ধরনের আচরণ তাবলীগের মূল দর্শনের পরিপন্থী এবং দাওয়াহ কার্যক্রমে সংকট তৈরি করছে।
৬, পাঁচ দিনের জোড় আয়োজনে বৈষম্য
শুরাই নেজাম টংঙ্গীর ময়দানে পাঁচ দিনের জোড় সফলভাবে আয়োজন করছেন। কিন্তু বিশ্ব মারকাজ নিজামুদ্দিনের অনুসারী মূলধারার তাবলীগের কর্মীরা এই সুযোগ থেকে সম্পুর্ন বঞ্চিত হয়েছেন।
অতএব, এই বৈষম্য নিরসনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। সাম্প্রতিক সময়ে সরকার গুরুত্বপূর্ণ কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, আমরা এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। কিন্তু সম্পুর্ণ বৈষম্য নিরসনে এই উদ্যোগ যথেষ্ট নয়।আমরা চাই এই বৈষম্য বিরোধী সরকার তাবলীগ জামাতের বিবদমান উভয় পক্ষের মধ্যে ইনসাফ ও ন্যায়৷ বিত্তিক স্হায়ী সমাধানে উদ্যোগী হবে। তাই আমরা সচেতন ছাত্র সমাজ এর পক্ষ থেকে ইনসাফ ও ন্যায়ভিত্তিক স্হায়ী সমাধানের লক্ষ্যে নিম্নলিখিত (০৩) তিনটি প্রস্তাবনা পেশ করছি।
প্রস্তাবনা ১: উভয় পক্ষই যেন তাদের সর্বোচ্চ মুরুব্বিদের নিয়ে যার যার কার্যক্রম(অর্থাৎ জোড়, ইজতেমা ও অন্যান্য আমল) পরিচালনা করতে পারে তা নিশ্চিত করা।
প্রস্তাবনা ২: উভয় পক্ষের জন্যই কাকরাইল মসজিদ টংঙ্গীর ইজতেমা ময়দান এবং দেশের প্রতিটি মসজিদে তাবলীগের আমলে সমতা নিশ্চিত করা।
প্রস্তাবনা ৩: দেশের সামপ্রদায়িক সম্প্রীতি ও শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে উভয় পক্ষকে একে অপরের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের উস্কানীমূলক বক্তব্য এবং কার্যক্রম থেকে বিরত রাখা এবং ২০১৮ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ঘটে যাওয়া সমস্ত অনাকাঙ্ক্ষিত হত্যাকান্ডের বিচার বিভাগীয় নিরপেক্ষ তদন্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা।
পরিশেষে বলতে চাই অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে উপরোক্ত প্রস্তাব সমূহের আলোকে দৃশ্যমান কোন পদক্ষেপ গৃহীত না হলে, বিগত ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪ তারিখের স্হগিতকৃত "প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি" দেশের সচেতন ছাত্র সমাজ এবং সচেতন নাগরিকদেরকে নিয়ে আরো জোরালো ভাবে পালন করতে বাধ্য হবো। সচেতন ছাত্র সমাজের পক্ষ থেকে উপস্থিত সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ এবং মোবারকবাদ।