গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি :
বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার এম ইকবাল হোসাইনের গাড়ি বহরে হামলা-ভাংচুরের ঘটনায় পালটা-পালটি মামলা-সংবাদ সম্মেলন ও বিক্ষোভ মিছিলে উত্তপ্ত শহর এখন ময়মনসিংহের গৌরীপুর। সোমবার (১৩ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় ইঞ্জিনিয়ার ইকবাল গ্রুপের নেতা উত্তর জেলা বিএনপির সদস্য অ্যডভোকেট আব্দুস সোবহান সুলতানসহ বিএনপি’র নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
প্রতিবাদ সমাবেশে উত্তর জেলা বিএনপির সদস্য ও বোকাইনগর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. হাবিবুল ইসলাম খান শহিদ বলেন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মদদে দায়েরকৃত এ মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে। এ মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে আজ বুধবার (১৫ জানুয়ারি) ময়মনসিংহ রেঞ্জ ডিআইজি অফিসের সামনে নেতাকর্মীরা অবস্থান কর্মসূচী পালন করবে। এরমধ্যে মামলা প্রত্যাহার না হলে পরবর্তী কর্মসূচী দেয়া হবে।
প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক জিয়াউর আবেদীন জিল্লু, মো. মাইনুল ইসলাম শাহীন, একদিন হোসেন তালুকদার, উত্তর জেলা যুবদলের সিনিয়র সহসভাপতি মুহাম্মদ মাহফুজুর রহমান, উত্তর জেলা যুবদলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক তাজিজুল ইসলাম রাঙা, সহ শ্রম বিষয়ক সম্পাদক মো. গোলাম আলিমেল হাকিম মুনশী, সদস্য মো. মিন্টু মিয়া, উসমান গণি তান্না, উত্তর জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. জুয়েল মিয়া, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব আব্দুল কাদির, পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক শাহিন আলম তারা, সদস্য সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম, পৌর ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মেহেদী হাসান সাগর প্রমুখ।
উল্লেখ্য যে, গত ৬জানুয়ারি সোমবার কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার এম ইকবাল হোসাইন বালিয়াপাড়া এলাকায় যুবদল নেতার ছেলের আকিকা অনুষ্ঠানে যাওয়ার পথে টেঙ্গুরিপাড়া এলাকায় তার গাড়ি বহরে হামলা-ভাংচুর করে। এছাড়াও এ হামলায় ৭/৮টি মোটর সাইকেল ভাংচুর ও সংঘর্ষে ১০-১৫জন আহত হন। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) সিধলা ইউনিয়নের পাইস্কা গ্রামের মৃত আবুল হাশেমের পুত্র মো. সেলিম বাদী হয়ে ২৯জনের নাম ছাড়াও অজ্ঞাতনামা ১৫/২০জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করেন।
একই ঘটনায় টেঙ্গুরিপাড়া গ্রামের মো. আব্দুল জলিলের পুত্র মো. নুরুজ্জামান বাদী হয়ে উত্তর জেলা বিএনপির সদস্য অ্যাডভোকেট আব্দুস সোবহান সুলতানসহ ২৭জন নাম উল্লেখ্য ছাড়াও ৩০/৪০জনকে অজ্ঞাতনামা আসামী দিয়ে রোববার (১২ জানুয়ারি) দ্রুত বিচার আইনে মামলা দায়ের করেন। ইঞ্জিনিয়ার ইকবাল হোসাইন গ্রুপের দাবী, এ হামলা করেছে উত্তর জেলা বিএনপির সদস্য আহাম্মদ তায়েবুর রহমান হিরণ গ্রুপের নেতাকর্মীরা।
এ অভিযোগ প্রত্যাখান করেন হিরণ গ্রুপের নেতাকর্মীরা। হামলা বিষয়ে অপপ্রচারের প্রতিবাদে ময়মনসিংহ উত্তর জেলা বিএনপির সদস্য আহাম্মদ তায়েবুর রহমান হিরণ গৌরীপুর প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন।
গত মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, জমিসংক্রান্ত বিরোধকে কেন্দ্র করে ইঞ্জিনিয়ার ইকবালকে বয়কটের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। এরপরে তিনি (ইঞ্জিনিয়ার ইকবাল) আকিকার দাওয়াতে যাওয়ায় গ্রামবাসীর সাথে সংঘর্ষ হয়েছে। এ ঘটনায় আমার বা আমার সমর্থক নেতাকর্মীদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
অপরদিকে রোববার (১২ জানুয়ারি ২০২৫) টেঙ্গুরিপাড়া গ্রামবাসী সংবাদ সম্মেলনে বলেন, এ ঘটনার সঙ্গে তাদের গ্রামের মাত্র ৩জন জড়িত। যারা এ হামলায় জড়িত তারা সবাই হিরণ গ্রুপের নেতাকর্মী। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন টেঙ্গুরিপাড়াবাসীর পক্ষে আনন্দ মোহন সরকারি কলেজের অনার্স দ্বিতীয়বর্ষের শিক্ষার্থী রিয়াদ হাসান। বক্তব্য রাখেন সিধলা ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার মো. দুদু মিয়া, সাবেক ইউপি সদস্য মো. কাজিম উদ্দিন, টেঙ্গুরিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা সোহান মিয়া, নিজাম উদ্দিন মন্ডল, মো. দেলোয়ার হোসেন দাদুল। এ ঘটনায় গত বুধবার (৮ জানুয়ারি) উপজেলা ও পৌর বিএনপি-অঙ্গসহযোগী সংগঠন সংবাদ সম্মেলন করেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ময়মনসিংহ উত্তর জেলা বিএনপির সদস্য অ্যাডভোকেট আব্দুস সোবহান সুলতান বলেন, গত সোমবার (৬ জানুয়ারি) যুবদল নেতার সন্তানের আকিকা অনুষ্ঠানে যাওয়ার পথে উত্তর জেলা বিএনপির সদস্য আহাম্মদ তায়েবুর রহমান হিরণ গ্রুপের নেতাকর্মী তাদের ওপর হামলা করেছে। শুধু তাই নয়; এ ঘটনার প্রতিবাদে ওই রাতে বিক্ষুব্দ নেতাকর্মীরা প্রতিবাদ মিছিল বের করলে সেখানেও হামলা করা হয়।
অপরদিকে গত বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি ২৫) উপজেলার সিধলা ইউনিয়নের পাইস্কা গ্রামের মৃত আবুল হাশেমের পুত্র মো. সেলিম বাদী হয়ে ২৯জনের নাম ছাড়াও অজ্ঞাতনামা ১৫/২০জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করেন।
মামলা সূত্রে জানা যায়, উপজেলার বালিয়াপাড়া গ্রামে যুবদল নেতা সুজাত মিয়ার বাড়িতে ছেলের আকিকা অনুষ্ঠানে যাওয়ার পথে টেঙ্গুরিপাড়া এলাকায় কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার এম ইকবাল হোসাইনের গাড়ি বহরে হামলা-ভাংচুরে ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় রফিক (৩৫), নুরুজ্জামান (৩৫), শাহজাহান (৩২), মুন (২৮), বাবুল মিয়া (৪৫), সাইদুর রহমান (৪৩), সবুজ মিয়া (৩২), ওয়াসিম রাজিব (২৭), তোতা মিয়া (২৮), নজরুল ইসলাম (৩৭), সাকিবুল ইসলাম শহিদ (৩২), অন্তর সরকার (২২), আব্দুল হামিদ (৩৪), আব্দুল হাই (৩২), ফয়সাল মিয়া (২৫), রাসেল মিয়া (২৫), সেলিম মিয়া (২৪), আল আমিন (২৭), আমিরুল ইসলাম (২৮), রায়হান উদ্দিন (২৬), রাকিব মিয়া (২২), আব্দুল কাদির (২২), কামরুল ইসলাম (২৬), পিয়াস মিয়া (২৪), এরশাদুল হক (২৮), ছোটন মিয়া (২৫), পারভেজ মিয়া (২৬), আবু হুবায়রা (২৭), আসাদুজ্জামান ডানু (৪০)। এছাড়াও মামলায় ১৫/২০জনকে অজ্ঞাতনামা আসামী করা হয়েছে।
এদিকে টেঙ্গুরিপাড়া গ্রামের মো. আব্দুল জলিলের পুত্র মো. নুরুজ্জামান বাদী হয়ে ইঞ্জিনিয়ার এম ইকবাল হোসাইন গ্রুপের উত্তর জেলা বিএনপির সদস্য অ্যাডভোকেট আব্দুস সোবহান সুলতানসহ ২৭জন নাম উল্লেখ্য ছাড়াও ৩০/৪০জনকে অজ্ঞাতনামা আসামী দিয়ে রোববার (১২ জানুয়ারি) দ্রুত বিচার আইনে মামলা দায়ের করেন।
মামলার আসামীরা হলেন সেলিম (৪৫), সুজাত (২৫), আক্রাম (২৩), রিয়েল (২৫), রাসেল (২৭), রিপন তালুকদার (৩০), সাদ্দাম মিয়া (৩২), ইসমাইল (৪৮), হারুন (৩২), জহিরুল ইসলাম (৩৫), জলিল (৪০), সাদ্দাম হোসেন (২৮), আনোয়ার (৩২), আক্রাম হোসেন (৩৫), আব্দুস ছালাম (৪০), আনোয়ার উদ্দিন (৩৯), আব্দুস ছোবাহান (৬০), মো. সিদ্দিক তালুকদার (৪৫), আল আমিন (২৮), আব্দুল্লাহ (৩০), সাত্তার (৩০), গিয়াস উদ্দিন (৪৮), আব্দুল মোতালেব (৫০), আব্দুল হাই (৩৭), ঝুলন (৪০), আতাউর রহমান (৪৫), আব্দুল মোতালিব (৪২) ও অজ্ঞাতনামা ৩০-৪০জন।