কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি : কুড়িগ্রামের উলিপুরে গুনাইগাছ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পলাতক থাকায় পরিষদের স্বাভাবিক কার্যক্রম চরম ব্যাহত হচ্ছে। চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতির কারনে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন পরিষদে সেবা নিতে আসা জনসাধারণ। এ অবস্থায় জনভোগান্তি লাঘবে প্যানেল চেয়ারম্যানের উপর দায়িত্ব অর্পণের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ দিয়েছেন পরিষদের ৬ জন সদস্য।
এলাকাবাসী ও গুনাইগাছ ইউপির কয়েকজন সদস্য জানান, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফলে সরকার পতনের পর অন্তবর্তীকালীন সরকার দায়িত্বগ্রহন করেছেন। এরপর থেকে গুনাইগাছ ইউপি চেয়ারম্যান ও সাবেক ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি মোখলেছুর রহমান গ্রেপ্তার আতংকে পলাতক রয়েছেন। গ্রেপ্তার এড়াতে বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে তিনি পরিষদে অনুপস্থিত রয়েছেন। তার অনুপস্থিতির কারনে ইউনিয়নের জনসাধারন চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। জরুরী প্রয়োজনে পরিষদে এসে নাগরিকত্ব, জন্মনিবন্ধন, ট্রেড লাইসেন্স, প্রত্যয়নপত্র, ওয়ারিশসনদ, মৃত্যুসনদসহ প্রয়োজনীয় সেবা না পেয়ে মানুষজন ফিরে যাচ্ছে।
সরেজমিন সোমবার (৬ জানুয়ারী) দুপুরে গুনাইগাছ ইউপি পরিষদে গিয়ে দেখা যায়, নাগরিকত্ব সনদপত্র, জন্মনিবন্ধন সনদ ও ট্রেড লাইসেন্স করার জন্য দীর্ঘক্ষন কেউ বসে বা দাঁড়িয়ে আছেন। কিন্তু পরিষদে ইউপি চেয়ারম্যান-সচিব কেউ নেই। পরিষদের একটি কক্ষে বসে রয়েছেন হিসাব সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর নাজমুল হুদা। তার কাছে সেবাপ্রার্থীরা ধরনা দিলেও কোন সুফল মিলছে না। এ সময় কথা হয় সেবাপ্রার্থী অনেকের কাছে।
গুনাইগাছ ইউনিয়নের দালালী পাড়া এলাকার শাহার উদ্দিন জানান, অসুস্থতাজনিত কারনে আমার একটি প্রত্যয়নপত্র প্রয়োজন কিন্তু প্রায় চার মাস থেকে পরিষদে এসে ঘুরে যাচ্ছি। চেয়ারম্যান সাহেবের দেখা পাচ্ছি না। রামধন এলাকার জয়নাল আবেদীন বলেন, একটি জন্মনিবন্ধনের জন্য তিন-চার মাস থেকে ঘুরতেছি কিন্তু চেয়ারম্যান বা সচিবের কোন দেখাই পাচ্ছি না। আমার মেয়ের মাতৃত্বকালীন কার্ড করার জন্য জন্মনিবন্ধনের খুবই প্রয়োজন।
পশ্চিম কালুডাঙ্গা এলাকার কাজিম এগ্রো ফার্মের সত্বাধিকারী আকতারুল ইসলাম জানান, পূর্বের ট্রেড লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হওয়ার কারনে নতুন করে নবায়ন করতে পরিষদে এসেছি। কিন্তু পরিষদে শুধুমাত্র হিসাব সহকারী ছাড়া কেউ নেউ। হিসাব সহকারীকে নবায়নের বিষয়ে জানালে তিনি বললেন এখন ঝামেলা চলছে ট্রেড লাইসেন্সের কাজ হবে না ।
ঢাকায় পোষাক শ্রমিক হিসাবে কাজ করে ওই ইউনিয়নের কাঁঠালবাড়ী এলাকার আলামিন (২২)। তিনি বলেন, অফিস থেকে দুই দিনের ছুটি নিয়ে নতুন ভোটার হওয়ার জন্য বাড়ি এসেছি। পরিষদে এসেছি নাগরিকত্বসনদসহ কিছু প্রয়োজনীয় কাগজে চেয়ারম্যানের স্বাক্ষর নিতে কিন্তু অনেকের মুখে শুনতেছি চেয়ারম্যান পলাতক। এখন চাকুরী রক্ষা করবো না ভোটার হবো সেই চিন্তায় আছি।
কৃষ্ণমঙ্গল এলাকার লিলি বেগম বলেন, আমার ও স্বামীর জন্মনিবন্ধন করার জন্য এসেছি কিন্তু পরিষদে চেয়ারম্যান বা সচিব কেউ নেই। জন্মনিবন্ধন ছাড়া স্কুলে সন্তানকে ভর্তি করাতে পাচ্ছি না। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, এখন আমরা কার কাছে যাবো ?
গুনাইগাছ ইউনিয়ন পরিষদের হিসাব সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর নাজমুল হুদা জানান, দীর্ঘদিন থেকে চেয়ারম্যান সাহেব পরিষদে না থাকার কারনে প্রায়দিন অনেক সেবাপ্রার্থী এসে ঘুরে যান।
গুনাইগাছ ইউনিয়ন পরিষদের ৬নং ওয়ার্ডের সদস্য আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, চেয়ারম্যান মোখলেছুর রহমান গ্রেপ্তার আতংকে পরিষদে আসেন না। তার না থাকার কারনে জনসাধারনকে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। আমরা সদস্যগণ প্যানেল চেয়ারম্যান নির্বাচনের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে আবেদন করেছি।
এ বিষয়ে গুনাইগাছ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোখলেছুর রহমানের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) কাজী মাহমুদুর রহমান বলেন, পরিষদের ৬জন সদস্য চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতির বিষয়ে অভিযোগ করেছেন। বিষয়টি তদন্ত করার জন্য প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তদন্ত রিপোর্ট হাতে পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।