রুবেল ইসলাম ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধি : বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা: শফিকুর রহমান বলেছেন, বাংলাদেশের ১৬ ডিসেম্বর উপলক্ষ্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি টুইট করেছে যে বাংলাদেশের ১৬ ডিসেম্বরের বিজয় দিবসে তাদের ভূমিকায় বেশি। তারা এই বিজয়কে তাদের বিজয় বলে দাবী করেছে। আমরা নরেন্দ্র মোদির টুইট এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে কোন নির্বাচনেই সুষ্ঠু হয়নি। নির্বাচন আসলেই একটি দেশ (ভারত) ঠিক করে কে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হবেন কিন্তু এবার সেই সুযোগ আর নাই। আমাদের তরকারীতে আমরাই লবণ দিবো। দেশের জনগন লবণ দিতে জানে। তাই ভারতকে বলব আমাদের তরকারিতে লবণ না দিয়ে আপনরা আপনাদের তরকারিতে লবণ দেন।
আজ (৩০ ডিসেম্বর) সোমবার বিকেলে ঠাকুরগাঁও সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় (বড় মাঠে) জেলা জামায়াতে ইসলামীর আয়োজনে কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, পনেরটি বছর আমরা নির্যাতনের শিকার হয়ে প্রতিবাদ করেছি, কিন্তু স্বৈরাচার সরকরের পতন ঘটাতে পারিনি। আমাদের ছেলে-মেয়েদের হাতে তাদের নেতৃত্বে আমরা দেশবাসী ছিলাম। অগ্রভাগে তারাই ছিল। এটা আমাদের গর্বের। ৫ আগস্ট বাংলাদেশের মানুষকে স্বাধীনতা ও মুক্তি উপহার দিয়েছে তরুণরা। আগে মানুষ ভয়ের সংস্কৃতির মধ্যে ছিল। মুখ দিয়ে কথা বলতে পারতো না। স্বস্তির সাথে নিজের জীবন নিয়ে চলাফেরা করতে পারতো না। এখন মানুষ স্বস্তির সাথে সব পারে।
জামায়াতের আমীর বলেন, দেশের প্রতি যাদের ভালোবাসা আছে, দরদ আছে তারা কখনো দেশ ছেড়ে পালায় না। আপনারা জানেন জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতাদের আওয়ামী লীগ বিনা অপরাধে ফাসি দিয়েছে। বিচারিক আদালতের নামে তাদেরকে হত্যা করেছে। নেতাদের একজনও বাংলাদেশ থেকে পালায়নি। কিন্তু আমি আর ডামি সরকারের এমপি-মন্ত্রীরা দেশ থেকে পালিয়ে গেছে। দেশের প্রতি তাদের ভালোবাসা ও দরদ নাই বলেই পালিয়ে গেছে। তারা আবার স্বপ্ন দেখছে দেশে ফেরার। জনগণও চাই আপনারা দেশে আসুন। তারা আপনাদের বিচার করার জন্য অধীর আগ্রহে রয়েছে।
ডাঃ শফিকুর রহমান বলেন, অপার সম্ভাবনার একটি দেশ বাংলাদেশ। এই দেশের জমিনের ওপরে সবুজ গালিচায় ঢাকা মাটিতে আল্লাহ প্রচুর খনিজ সম্পদ দান করেছেন। এ দেশের বাতাস বসবাসের উপযোগী ও অনুকূল। এমন একটি দেশের কেন এমন পরিণতি হলো। এর কারণ হচ্ছে যারা বিভিন্ন সময়ে দেশ শাসন করেছেন তারা জনগণের আমানত রক্ষা করেনি। তারা জনগণের আমানতকে নিজের পকেটে ঢুকিয়েছে। তারা তসরুপ করেছেন, চুরি করেছেন, ডাকাতি করেছেন, জনগণের সম্পদ লুণ্ঠন করেছেন এবং সেই সম্পদ দেশের বাইরে পাচার করেছেন। ১৫ বছরে লক্ষ কোটি টাকা বাইরে পাচার করা হয়েছে। কারা পাচার করেছে আপনারা তা জানেন।
তিনি আরো বলেন, আমরা এমন একটি দেশ গড়তে চাই যে দেশে কোনো বৈষম্য থাকবে না। সব ধর্মের সব বর্ণের মানুষ মিলেমিশে সমান অধিকারের ভিত্তিতে বসবাস করবে। সর্বক্ষেত্রে দেশাত্ববোধের মাধ্যমে দেশকে উন্নত করতে সচেষ্ট থাকবে। কোনো চাঁদাবাজ, দুষ্কৃতকারী, দুর্নীতিবাজ থাকবে না। কেউ কোনোভাবে অন্যায়ের শিকার হবে না।
ঠাকুরগাঁওয়ের উন্নয়ন প্রসঙ্গে জামায়াতের শীর্ষ এই নেতা বলেন, ঠাকুরগাঁও জেলা হলো বাংলাদেশের ভেতরে। বাইরের না। অথচ এই জেলা অনেক কিছু থেকে উন্নয়ন বঞ্চিত। এ জেলা মানুষের অনেক দিনের দাবী বিমানবন্দরটি পুনরায় যেন চালু। সুচিকিৎসার জন্য একটি মেডিকেল কলেজ ও একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের। আমরা আজকের এই ঠাকুরগাঁওয়ের ঐতিহাসিক কর্মী সম্মেলন থেকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টারের ঠাকুরগাঁওবাসীর সকল দাবিগুলো তুলে ধরব। এই সরকারের আমলে বড় কোন বাজেট আসলে যাতে জেলাবাসীর দাবিগুলো বাস্তবায়ন করে।
সামবেশে আরো বক্তব্য দেন, কেন্দ্রীয় সহকারি সেক্রেটারি মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, সহকারি সেক্রেটারি মাওলানা আব্দুল হালিম, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা মমতাজ উদ্দিন, কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বেলাল, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও ঠাকুরগাঁও জেলা সাবেক আমির মাওলানা আব্দুল হাকিম, কেন্দ্রীয় ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারি সেক্রেটারি দেলাওয়ার হোসেন, জেলা আমীর অধ্যাপক বেলাল উদ্দিন প্রধান, সেক্রেটারি মোহাম্মদ আলমগীর ও সহকারি সেক্রেটারি অধক্ষ কফিন উদ্দিন আহমেদ প্রমুখ।