
আশরাফুর রহমান হাকিম, নিজস্ব প্রতিবেদক: মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার বাঁশগাড়ি ইউনিয়নে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুই গ্রæপের সংঘর্ষে ঘটনা ঘটে। ইউপি সদস্য ও তার ছেলে এবং একজন সমর্থক সহ মোট তিনজন নিহত হয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছে অন্তত ১৫ জন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে এলাকায় সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। নিহত আক্তার শিকদার মাদারীপুর জেলার কালকিনি উপজেলার বাঁশগাড়ী ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি। তার ছেলে মারুফ সিকদার (১৮) ও একই এলাকার রশিদ চৌকিদারের ছেলে সিরাজুল চৌকিদার (৩৫)। সিরাজুল চৌকিদার ইউপি সদস্যের আক্তারের সমর্থক।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কালকিনির বাঁশগাড়ি ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান সুমনের সঙ্গে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দীর্ঘদিন যাবত আক্তার শিকদারের বিরোধ চলছিল। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের সরকারের পতনের পর এলাকা ছাড়েন আক্তার। বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর ) বিকেলে সুমন চেয়ারম্যানের লোকজন আকতার মেম্বারের ঘর আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয় বলে জানা যায়। আগুনের খবর পেয়ে চার মাসেরও বেশি সময়ের পর রাত ১০ টার দিকে গ্রামের বাড়িতে আসে ইউপি সদস্য আকতার মেম্বার ও তার ছেলে মারুফ শিকদার। সুমন চেয়ারম্যানের সমর্থকরা সকালে দুই শতাধিক লোক নিয়ে প্রতিপক্ষের লোকজনের বাড়িঘরে হামলা চালান বলে জানা যায়। এতে ফকির বংশের লোকজন একত্রিত হয়ে পাল্টা হামলা করলে উভয় পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।
শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) সকালে বোমা বিস্ফোরণ করে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে পুনরায় সুমন চেয়ারম্যানের লোকজন আক্তার মেম্বারের বাড়িতে ও কর্মী সমর্থকদের উপড় হামলা চালায়। এসময় আক্তার শিকদারকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। সংঘর্ষে আহত হন আক্তার শিকদারের ছেলে মারুফসহ অন্তত ১৫ জন। পরে হাসপাতালে নেওয়া পথে মারুফ ও সিরাজুল মৃধা মৃত্যু হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কালকিনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হুমায়ুন কবীর।
বাঁশগাড়ী ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান সুমন বলেন, আক্তার মেম্বারের (ইউপি সদস্য) নামে ৩৫টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে পাঁচটি হত্যা মামলা তবে সবগুলো মামলায় জামিনে আছে। সরকার পতনের পর এলাকা থেকে চলে যান তিনি। শুক্রবার আবার নতুন করে দলবল নিয়ে এলাকায় প্রবেশ করার চেষ্টা করেন। মধ্যেরচর এলাকার লোকজন তাদের প্রতিরোধ করতে গেলে সংঘর্ষ বাধে। বোমা বিস্ফোরণে আক্তার, তার ছেলে ও এক সমর্থকের মৃত্যুর সংবাদ পেয়েছি। এ ঘটনায় আরও অনেকেই আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় জড়িতদের বিচার নিশ্চিত করার দাবি জানাই।
নিহত আক্তার মেম্বারের বাবা মতি শিকদার বলেন, সুমন চেয়ারম্যানের ও তার ভাই সহ একাধিক লোকজন আমার ছেলের উপর হামলা চালিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে এবং আমার নাতীকে হত্যা করে আমি তাদের বিচার চাই।
কালকিনি উপজেলা নির্বাহী অফিসার উত্তম কুমার দাশ বলেন, সকালে বোমা বিস্ফোরণ সহ মারামারিতে তিনজন নিহত হওয়ার সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করি এবং এপর্যনÍ তিনজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে এবং যৌথ বাহিনীর নিরলস প্রচেষ্টায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ঘটনা সংবাদ পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে পুলিশ, র্যাব ও সেনাবাহিনী কাজ করছে।