নিজস্ব প্রতিবেদক
রাজনীতির দীর্ঘ পথ-পরিক্রমা ও উত্থান-পতনে প্রমাণ হয়েছে, জামায়াতে ইসলামী জনগণের দল, গণমানুষের দল ও মানুষের প্রাণপ্রিয় কাফেলা; তাই আগামীর বাংলাদেশ হবে জামায়াতের বাংলাদেশ বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতের ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন।
তিনি গতকাল রাতে রাজধানীর একটি মিলনায়তনে রূপনগর থানা জামায়াত আয়োজিত এক সহযোগী সদস্য সম্মেলন ও মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। থানা আমীর আবু হানিফের সভাপতিত্বে এবং সেক্রেটারি মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়ার পরিচালনায় সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন ঢাকা মহানগরী উত্তরের নায়েবে আমীর আব্দুর রহমান মূসা এবং সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম। উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগরী উত্তরের কর্মপরিষদ সদস্য নাসির উদ্দীন ও প্রকৌশলী সিরাজুল ইসলাম, পল্লবী উত্তর থানা আমীর মাওলানা সাইফুল কাদের ও পল্লবী দক্ষিণ থানা আমীর অধ্যাপক আশরাফুল আলম প্রমূখ।
সেলিম উদ্দিন বলেন, আমরা গর্বের সাথে এবং সচেতনভাবে দাবি করতে পারি যে, আমরা জ্ঞাতসারে কোন মানুষের ক্ষতি করিনি বা কখনো করবো না। বিগত ৫৩ বছরের ইতিহাস পর্যালোচনায় দেখা যায় জামায়াতের লোকেরা কোন প্রকার চাঁদাবাজী, টেন্ডারবাজী, চুরি, ডাকাতি, মদ, জুয়া, পাশবিকতা, পশু সংস্কৃতি এবং মানবতাবিরোধী অপরাধ সহ কোন অপরাধের সাথে জড়িত ছিলেন না বা এখনো নেই। কিন্তু পতিত স্বৈরাচার আমাদেরকেই বিশেষভাবে টার্গেট করে জুলুম- নির্যাতন চালিয়েছে। আমাদের ওপর অন্যায়ভাবে আক্রমণ চালানো হয়েছে। আওয়ামী অপশাসনে হত্যা, সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, গুম, গুপ্তহত্যা সহ আমাদের শীর্ষ নেতাদেরকে অন্যায়ভাবে ফাঁসি দিয়েছে। পুলিশ ও দলীয় সন্ত্রাসীদের লেলিয়ে দেওয়ার কারণে আমরা রাজপথে দাঁড়াতে পারিনি। আমাদেরকে ঈদ ও জু’মার নামাজ; এমনকি রোজা পর্যন্ত রাখতে দেওয়া হয়নি। ভেবেছিল তারাই কেয়ামত পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকবে। কিন্তু ছাত্র-জনতার বিপ্লবে তাদেরকে লজ্জা জনকভাবে ক্ষমতা থেকে বিদায় নিতে হয়েছে।
তিনি বলেন, তারা আল্লাহর নূরকে নিভিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র করেছিল। কিন্তু আল্লাহই তাদেরকে পরাভূত করেছেন। প্রমাণিত হয়েছে জামায়াত একটি ন্যায়নিষ্ঠ, আদর্শবাদী এবং মানবতার বন্ধু রাজনৈতিক দল। আমরা ঘুষ, দুর্নীতি, চুরি, ডাকাতি, সুদের মহাজনী কারবার এবং অপশাসন- দুঃশাসনের বিপরীতে দেশে একটি আদর্শভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে সব সময় আপোষহীন। আমরা মানবরচিত মতবাদের বিপরীতে দেশকে কুরআন-সুন্নাহর আলোকে ইসলামীর কল্যাণ রাষ্ট্রে পরিণত করতে চাই। যে সমাজে ধর্ম, বর্ণ, গোত্র এবং শ্রেণি-পেশা নির্বিশেষে সকলের অধিকারের নিশ্চয়তা থাকবে। মানুষে মানুষে কোন ভেদাভেদ থাকবে না। সকল নাগরিক আইনের আশ্রয় গ্রহণের সমাজ অধিকার ভোগ করবেন। তিনি সেই কাক্সিক্ষত বিপ্লব ও সমাজ পরিবর্তনের আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধ থাকতে সকলের প্রতি আহবান জানান।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আব্দুর রহমান মূসা বলেন, ফ্যাসীবাদী সরকার আমাদেরকে বিনাদোষে গায়েবী মামলা দিয়ে জেলখানায় ভরিয়েছিল। তারা আমাদের বাসায় গিয়ে বস্তা বস্তা বই নিয়ে এসে বিষ্ফোরক মামলার আসামী বানিয়েছে। তারা আমাদের শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে বিচারের নামে হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি বরং ১ আগস্ট আমাদেরকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। কিন্তু জনতার রুদ্ররোষে তাদেরকে নির্মমভাবে ক্ষমতা থেকে বিদায় নিতে হয়েছে।
ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, জুলুমবাজ সরকার আমাদেরকে নির্বিঘ্নে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করতে দেয়নি। তারা আমাদেরকে নামাজ-রোজা, ইবাদত-বন্দেগীতে বাধা প্রধান করেছে। ঘরোয়া কর্মসূচিগুলোকে জঙ্গীবাদী তৎরতা আখ্যা দিয়ে আমাদের ওপর নির্মম নির্যাতন চালানো হয়েছে। কিন্তু তাদের শেষ রক্ষা হয়নি বরং ছাত্র-জনতারই বিজয় হয়েছে।