রাজশাহীর পুঠিয়ায় ইটের মাপ কমিয়ে ক্রেতাদের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগ

আপলোড সময় : ১৯-১২-২০২৪ ১১:৩৫:১৩ অপরাহ্ন , আপডেট সময় : ১৯-১২-২০২৪ ১১:৩৫:১৩ অপরাহ্ন



মাসুদ রানা রাব্বানী, রাজশাহী: রাজশাহীর পুঠিয়ায় ইটভাটা মালিকরা মানহীন ও পরিমাপে ছোট ইট তৈরি করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সাধারণ ক্রেতাদের অভিযোগ ভাটা মালিকদের কারসাজিতে বাড়ি বা প্রতিষ্ঠান নির্মাণে বেশি ব্যয় হচ্ছে। ইটের বাইরে প্রয়োজনীয় উপকরণ বেশি ব্যবহার করতে গিয়ে অতিরিক্ত খরচ হচ্ছে। এতে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন ইট ক্রেতারা।

জানা গেছে, এই উপজেলায় মোট ১৬টি ইটভাটার মধ্যে এবার এগার টি ইটভাটার কার্যক্রম চালু রয়েছে। এর মধ্যে চারটি ইট ভাটার বৈধ কাগজপত্র রয়েছে। বাকি সাতটি ভাটার কার্যক্রম আবেদন সাপেক্ষে চলছে বলে সংশ্লিষ্টসূত্রে জানা গেছে। সরকারি নিয়ম অনুসারে প্রতিটি ইটের পরিমাপ হবে দৈর্ঘ ১০ ইঞ্চি প্রস্তু ৫ ইঞ্চি ও উচ্চতা ৩ ইঞ্চি অথচ ভাটা মালিকরা ওই নিয়মকে বৃদ্ধাংগুলি দেখিয়ে তাদের ইচ্ছেমত ইট তৈরি করছেন।

কয়েকটি ইটভাটা ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার প্রতিটি ভাটার মালিক নিয়ম অনুসারে ইট তৈরি করছেন না। তারা প্রতিটি ইটের দৈঘ্য ১০ এর পরিবর্তে সাড়ে ৯ ইঞ্চি, প্রস্থ পাঁচের পরিবর্তে সাড়ে চার ইঞ্চি ও উচ্চতা তিনের পরিবর্তে পৌনে তিন ইঞ্চি করে তৈরি করছেন। 

উপজেলা ইমারত নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জালাল উদ্দীন বলেন, বিগত দিনে দু’একটি ভাটার ইট সাইজে ছোট তৈরি হতো। গত দু’বছর থেকে সকল ভাটা মালিকরা পরিমাপে কম করে ইট তৈরি করছেন। এতে অবকাঠামো নির্মাণকারীদের খরচ বেড়ে গেছে।

ইট তৈরির সংশ্লিষ্ঠ কারিগররা বলেন, প্রতিটি ইটের ফর্মার দু’দিকে আকারে হাফ ইঞ্চি ছোট করা আছে। তবে মালিকরা আমাদের যে ফর্মা দিচ্ছেন আমরা সে ভাবেই ইট তৈরি করছি। এর ফলে এক হাজার ইট তৈরির মাটিতে ৬০ পিস ইট অতিরিক্ত তৈরি হয়।

জিউপাড়া এলাকার ইট ক্রেতা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ভাটা মালিকরা বর্তমানে ১নং ইটের দাম নিচ্ছে ১০ হাজার ৬০০ টাকা। অথচ তারা ইট আকারে অনেক ছোট করে আমাদের সাথে প্রতারণা করছেন।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে একজন ভাটা মালিক বলেন, আমাদের একটি মালিক সমিতি রয়েছে। ভাটার কোনো সমস্যা ও পুলিশ-প্রশাসনসহ বিভিন্ন দপ্তর দেখার দ্বায়িত্ব সমিতির সভাপতি-সেক্রেটারীর। সে মোতাবেক প্রতিটি ইটভাটা থেকে মাসে মোটা অংকের একটি অর্থ সমিতিতে দিতে হয়। সমিতি সেই টাকা কোথায় কিভাবে দেয় তা আমরা জানি না।

তবে উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক বেলাল হোসেন বলেন, আমরা ইট কাঁচা অবস্থায় সঠিক মাপে তৈরি করি। পোড়ানোর পর সাইজ কি হলো সেটা দেখার বিষয় নয়। ক্রেতারা পছন্দ হলে নিবেন না হলে নয়। আমরা ক্রেতাদের জোর করে দিচ্ছি না। মাপ দেখেই গ্রাহকরা ইট কেনে বলে জানান তিনি। তবে বিভিন্ন এলাকার ভাটার চেয়ে আমাদের সমিতির ইটের সাইজ ভালো আছে। আর যে ভাটা গুলো অবৈধ সে গুলোর বিষয়ে কিছুই জানা নেই।

কনজুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর রাজশাহী জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা মামুন বলেন, রাজশাহীতে কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা নিম্নমাণের ও পরিমাপে ছোট ইট তৈরি করছে। এসব ইট কিনে ভোক্তারা প্রতারিত হচ্ছেন। বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসন, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, বিএসটিআই এবং পরিবেশ অধিদপ্তরকে জানানো হয়েছে। তবে অজ্ঞাত কারণে বিষয়টি নিয়ে কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়না।

রাজশাহী ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মাসুম আলী বলেন, মাণসম্পন্ন মাটি দিয়ে সঠিক পরিমাপে ইট তৈরির জন্য সকল ভাটা মালিকদের কাছে ইতিপূর্বেই চিঠি দেয়া আছে। নিম্নমান ও পরিমাপে ছোট ইট তৈরি দ-নীয় অপরাধ। এ নিয়ে এখনও কোন অভিযোগ আসেনি। তবে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে বলে জানান তিনি।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ, কে, এম, নূর হোসেন নির্ঝর বলেন, ভাটাগুলো ইটের সাইজ ছোট করার বিষয়টি আমার জানা ছিল না। আর এ বিষয়ে এখনো পর্যন্ত কোনো অভিযোগ পাইনি। তবে ইট তৈরিতে পরিমাপ কম দেয়ার কোনো নিয়ম নেই। যারা এই কাজ করছেন তাদের সাথে কথা বলে আইনগত পদ্ধতিতে বিষয়টি নিষ্পত্তি করা হবে বলেও জানান তিনি।


 

সম্পাদকীয় :

প্রকাশক ও সম্পাদক : মোঃ গোলাম মাওলা শাওন
মোবাইল : ০১৭১১-০০৬২১৪

অফিস :

প্রধান কার্যালয় : ৩১/১ শরীফ কমপ্লেক্স ৫ম তলা পুরানা পল্টন ঢাকা ১০০০

মোবাইল : ০১৯৯৯-৯৫৩৯৭০

ই-মেইল : [email protected],  [email protected]