ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি বগুড়া :
বগুড়া-৬ আসনের সাবেক এমপি ও বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রাগেবুল আহসান রিপুকে নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ থেকে গ্রেফতার করেছে র্যাব।বুধবার মধ্যরাতে র্যাব-১৪ এর একটি দল তাকে গ্রেফতার করেন। তাঁর বিরুদ্ধে বগুড়া জেলার বিভিন্ন থানায় হত্যাসহ মোট ১৩ টি মামলা রয়েছে।
এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল মুনীম ফেরদৌস। র্যাব জানিয়েছে, সাবেক সংসদ সদস্য রাগেবুল আহসান রিপুর বিরুদ্ধে বগুড়া জেলার বিভিন্ন থানায় হত্যা মামলাসহ মোট ১৩টি মামলা রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে তিনি আইনের চোখ ফাঁকি দিয়ে পলাতক ছিলেন। তবে র্যাবের গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে তাকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়েছে।
র্যাব-১৪ এর সদস্যরা তাকে মোহনগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তারের পর নেত্রকোনায় প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। এরপর তাকে আইনের আওতায় আনার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। র্যাবের কর্মকর্তা জানিয়েছেন, রিপুর বিরুদ্ধে থাকা প্রতিটি মামলার বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালে অনুষ্ঠিত বগুড়া-৬ (সদর) আসনের উপনির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। ২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন তিনি। পরে বগুড়া-৬ আসন মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টির নুরুল ইসলাম ওমরকে ছেড়ে দেওয়া হলে নৌকার প্রার্থী রিপু প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেন। এর পর ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী জয়লাভ করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়। পরবর্তীতে বিএনপির সংসদ সদস্য বৃন্দ জাতীয় সংসদ থেকে পদত্যাগের পর ৭মাসের জন্য প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয় রাগেবুল আহসান রিপু।
এর আগে ২০১৯ সালে বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়ে আলাদিনের প্রদীপ জ্বালিয়ে সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলেন। উপজেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলনে বগুড়া জেলার সকল উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সহ জেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচনে মোটা অংকের টাকার বানিজ্য করেছেন। উপজেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলনে কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেনের সহযোগিতায় ১১ টি উপজেলায় মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সহ সদস্যর ক্ষেত্রেও টাকার বানিজ্য করেছেন। প্রতিটি সম্মেলনে সহযোগিতা করেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা মোঃ মজিবর রহমান মজনু। উপজেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলনের উল্লেখ যোগ্য বিষয় শিবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগ সম্মেলনে ২০০৮,২০১৩ ও ২০১৮ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মনোনয়ন প্রাপ্ত নেতা বীরমুক্তিযোদ্ধা মোঃ আকরাম হোসেন কে জোর প্রয়োগ করে সভাপতির পদ প্রত্যহার করান। এছাড়াও গাবতলি উপজেলা আওয়ামী লীগ সম্মেলন আলোচিত একটি বিষয় হয়েছিল। গাবতলি উপজেলা আওয়ামী লীগ সম্মেলন নিয়ে কেন্দ্রীয় কমিটির নিকট অনেক অভিযোগ রয়েছে। সোনাতলা, সারিয়াকান্দি, ধনুট,কাহাল, শেরপুর ও শাজাহান পুর উপজেলা সম্মেলনের নাটকীয়তা। ২০২২ সালের ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে দলীয় চেয়ারম্যান প্রার্থী নির্বাচনের টাকার প্রভাব।
বিশেষ করে শিবগঞ্জ উপজেলার ঐতিহাসিক মহাস্থানের রায়নগর ইউনিয়ন পরিষদের দলীয় চেয়ারম্যান প্রার্থী নিয়ে ব্যাপক সমালোচিত হয় উপজেলা ও জেলা আওয়ামী লীগ। জানা যায় উপজেলা আওয়ামী লীগ এর সাধারণ সম্পাদক সুবিধা বাদী মাহমুদুর রহমান মান্না এর আস্থা ভাজন শিবগঞ্জ পৌর মেয়র তৌহিদুর রহমান মানিক তার পৌরসভার ঠিকাদার ও জাতীয় পার্টির নেতা সফিকুল ইসলাম সুফির নিকট ( শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ এমপি ও উপজেলা চেয়ারম্যান (সালা, দুলা ভাই) ফিরোজ আহমেদ রিজুর আস্থা ভাজন সফিকুল ইসলাম সফি) মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে শিবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ ও জেলা আওয়ামী লীগ ম্যানেজ করে ঐতিহাসিক মহাস্থানের রায় নগর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের ডেমি প্রার্থী মনোনীত করেন।
এছাড়াও শিবগঞ্জ উপজেলার মাজিহট্র ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সম্মেলনে আবদুল গফুরের নিকট টাকা নিয়ে একতরফা কমিটি ঘোষণা দিয়েছিল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রিপু ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি। খোজ নিয়ে জানা গেছে ঐতিহাসিক মহাস্থান হাটের ইজারা নিজের করতে রাগেবুল আহসান রিপু ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুর রহমান মানিক এ কান্ড ঘটিয়ে ছিল।বাস্তবে তাই হয়েছিল। মহাস্থান হাটের ইজারা জাতীয় পার্টির এমপি ও তার শ্যালক নিয়ন্ত্রণ করতো।
পরবর্তীতে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচনের পর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তার শ্যালকের নামে ইজারা নিয়ে বর্তমানেও চালাচ্ছেন। শুধু রায়নগর ইউনিয়ন নয় সাড়া জেলা ব্যাপি অধিকাংশ ইউনিয়ন পরিষদের দলীয় প্রার্থী মনোনীত করতে মোটা অংকের টাকার বানিজ্য করেছেন। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শিবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কে ম্যানেজ করে শিবগঞ্জ উপজেলার ঐতিহাসিক বুড়িগঞ্জ হাট ভেঙ্গে রিপুর নিজ ইউনিয়ন নামুজায় হাট লাগান। বর্তমানে রিপুর নিয়ন্ত্রণে মহাস্থান, দাড়িদহ, নামুজা সহ বগুড়া জেলার ঐতিহাসিক হাটের ইজারা নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছিল। রাগেবুল আহসান রিপু সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর নেতা কর্মীদের সঙ্গে ভালো মিছতেন না। এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর একে বারেই পাল্টে যান। কোন নেতা কর্মী তার নিকট গেলে অসভ্য ভাষায় গালি গালাজ করতেন। দলীয় নেতা কর্মীদের সংগে তেমন ভালো সম্পর্ক ছিল না। সে কিছু হাইব্রিড পোলাপান নিয়ে চলাচল করতো। রিপু সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পরে গ্রামের বাড়িতে গড়ে তোলেন মাটি কাটা ব্যবসা ও শিবগঞ্জ উপজেলায় বালু উত্তোলনের মহা উৎসব। বিশেষ করে সদর ও শিবগঞ্জ উপজেলার ঐতিহাসিক মহাস্থান এলাকার কালিদহ সাগরের আশেপাশের সকল প্রত্নতাত্ত্বিক মাটির স্থাপনা নিচু করে ফেলেছে।
শিবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এর সাথে সমন্বয় করে ১২ টি ইউনিয়ন পরিষদের দলীয় চেয়ারম্যান দের ম্যানেজ করে গড়ে তোলেন রিপু মানিক বালু বানিজ্য। সে সময় শিবগঞ্জ উপজেলার দেউলি, শিবগঞ্জ সদর, বিহার, মাজিহট্র সহ কয়েক টিকে ইউনিয়নের বালু সিন্ডিকেট নিয়ে ব্যাপক সমালোচিত হয়েছিল। রিপুর আলোচিত কালি তলার বাড়িতে বসবাস করতো। বর্তমানে খোঁজ খবর নিয়ে জানাযায় জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এর সাথে জেলার নেতা কর্মীদের কোন যোগাযোগ নেই।
৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগের পরপরই অগ্নিসংযোগ করা হয় রিপুর বাড়ি ও গাড়িতে। সেদিনের পর থেকেই তার বাড়িতে ঝুলছে তালা, পরিবারসহ আত্মগোপনে ছিলেন তিনি।