রাবি প্রতিনিধি: দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের আজকের এই দিনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের মাধ্যমে চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করে বাংলাদেশ। তবে সে বিজয়ের স্বাদ গ্রহণ করতে পারেনি সাধারণ জনতা। পূণরায় স্বৈরশাসন, দমন-পীড়ন, অন্যায়-অত্যাচার আর দূর্ভিক্ষের ব্যাড়াজালে আবদ্ধ জনতা পরাধীনতার শিকলে বাঁধা পড়ে। দীর্ঘদিনের লড়াই সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে ফের ৫ আগস্ট বিজয় লাভ করেছে ছাত্র-জনতা। ১৯৭১-এর বিজয় ও পরবর্তী ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে ২০২৪-এর বিজয়ও পরবর্তী প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
এ যেন এক নতুন বিজয়:
আজ ১৬ই ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস। এবারের বিজয় দিবস যেন অন্যান্য বছরের বিজয় দিবসগুলো থেকে একটু আলাদা। আমরা নতুন প্রজন্মের যারা ৭১-এর বিজয় দেখিনি তারা ২৪-এর জুলাই বিপ্লবের প্রত্যক্ষদর্শী। এর মাধ্যমে বিজয়ের মাহাত্ম্য অর্জন যেন দ্বিগুণ হয়েছে নতুন প্রজন্মের কাছে। দেশকে যেনো আবারো নতুনভাবে ভালোবাসতে পেরেছি আমরা আর এই বিজয় দিবসে ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ যেনো দ্বিগুণ হয়ে ওঠেছে।যোগ্য নাগরিক হয়ে দেশকে মায়ের মতো আগলে রেখে আমাদের এ বিজয় যেন চির অম্লান থাকে সেজন্য আমাদের সবাইকে কাজ করতে হবে।
"সাদিয়া আক্তার, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ"
বিজয় যেন বিফল না হয়:
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ গণহত্যার মধ্য দিয়ে পাকিস্তানি স্বৈরশাসক গোষ্ঠী মেতে উঠে এক রক্তাক্ত খেলায়। অপারেশন সার্চলাইটের নামে চালায় গণহত্যার স্টিম রোলার। বাঙালিদের উপর এ অত্যাচারের শুরুটা হয়েছিল ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পরপরই। প্রথমেই আঘাত হেনেছিল বাঙালির মায়ের ভাষা বাংলার উপর। ধীরে ধীরে তা রূপ নেই রাজনৈতিক বৈষম্যে। ৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৫৪’র নির্বাচনে, ৫৮’র সামরিক শাসন, ৬২’র শিক্ষা আন্দোলন, ৬৬’র ছয় দফা, ৬৯’র গণঅভ্যুত্থান আর ৭০’র নির্বাচন তারই স্বাক্ষী।
কিন্তু স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরও বাঙালি কেনো আবার খুঁজে বেড়ায় তাদের স্বাধীনতা? ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর আমরা বিজয় অর্জন করলেও প্রকৃত বিজয় অর্জন আজও সম্ভব হয়নি। তাই তো বাংলার ছাত্র-জনতার সঙ্গে এক হয়ে আপামর জনতা আবারও প্রমাণ করেছে বাঙালির ইতিহাস সংগ্রামের ইতিহাস। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ ও ২০২৪ এর অভ্যুত্থানের দমনমূলক শাসনের বিরুদ্ধে জনগণ একত্রিত হয়েছিল। অন্যদিকে, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের শাসনের বিরুদ্ধে বাঙালিরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল, আর ২০২৪ সালে স্বৈরাচারী শাসনের পতন ঘটাতে ছাত্র-জনতা আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়।
তবে কথায় আছে, স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে স্বাধীনতা রক্ষা করা কঠিন। সুতরাং আমাদের এ বিজয় যাতে বিফল না হয়, সে ব্যাপারে সদা জাগ্রত থাকতে হবে। তবেই স্বৈরাশাসন বাঁধতে দ্বিধান্বিত হবে এ বাংলায়।
"এস. এম. জাহিদ হাসান সিহাব রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ"
মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় নতুন প্রজন্মকে প্রত্যয়ী হতে হবে:
বিজয় দিবস বাংলাদেশের একটি গর্বিত ও ঐতিহাসিক দিন। যা আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের প্রতীক। ২০২৪ সালের বিজয় দিবস উদযাপন বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একটি বিশেষ তাৎপর্য বহন করে, কারণ আমরা জাতি হিসেবে একাধিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে এগিয়ে যাচ্ছি।
এই দিনটিতে ক্যাম্পাসে বিভিন্ন কার্যক্রম উদযাপনের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধা চেতনা আমাদের নতুন প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দিতে পারি যা তাদের মধ্যে দেশপ্রেম ও ঐতিহ্যের প্রতি শ্রদ্ধা বাড়াতে সহায়ক হবে।
২০২৪ সালের বিজয় দিবসের মাধ্যমে আমরা শুধুমাত্র অতীতের বিজয় উদযাপন করব না বরং বর্তমান চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ঐক্যবদ্ধ থাকার প্রতিজ্ঞা করতে পারি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জ্ঞানচর্চার স্থান থেকে আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য নতুন ধারণা ও উদ্যোগ তৈরি করতে পারি।
"হুমায়রা আক্তার, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ"
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি: এক অমর অধ্যায়:
বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে গৌরবময় ও অনন্য অধ্যায় হলো মুক্তিযুদ্ধ। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ আমাদের জাতির আত্মপরিচয় ও অস্তিত্বের ভিত্তি গড়ে দিয়েছে। এই সংগ্রামের মধ্য দিয়েই আমরা অর্জন করেছি স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব এবং নিজের একটি পতাকা। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি আমাদের প্রতিদিন অনুপ্রাণিত করে, আত্মমর্যাদা জাগ্রত করে এবং ভবিষ্যৎ গঠনের পথপ্রদর্শক হিসেবে কাজ করে।
নয় মাসব্যাপী এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে আমরা নিজেদের মুক্তির পথ খুঁজে পেয়েছি। লক্ষ প্রাণের আত্মত্যাগ, লাখো মা-বোনের অসম্ভব সাহস এবং অগণিত মানুষের নিঃস্বার্থ অংশগ্রহণে লেখা হয়েছে আমাদের স্বাধীনতার ইতিহাস। এই আন্দোলন একদিকে যেমন আমাদের সাহস দিয়েছে তেমনি এ দেশের প্রতিটি মানুষকে শোষণ-বঞ্চনার শৃঙ্খল ছিঁড়ে মুক্তির জন্য লড়াই করতে শিখিয়েছে।
৭১-এর প্রেরণায় আমরা ২৪-কে জয় করেছি। এ বিজয় যেন বিফলে না যায় এজন্য আমাদেরকে অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে সচেতন ও সজাগ থাকতে হবে।
মহি উদ্দীন, ফলিত গণিত বিভাগ