আ.লীগ নেতার দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলায় রাবির সাবেক শিক্ষার্থীকে প্রাণনাশের হুমকি

আপলোড সময় : ১৪-১২-২০২৪ ০৯:২৩:১৭ অপরাহ্ন , আপডেট সময় : ১৪-১২-২০২৪ ০৯:২৩:১৭ অপরাহ্ন

রাবি প্রতিনিধি:
আওয়ামীলীগ নেতা ও নেত্রকোনার দূর্গাপুর মহিলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষের দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) এক সাবেক শিক্ষার্থীকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ওই অধ্যক্ষে বিরুদ্ধে। নিরাপত্তা চেয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর মা রোকেয়া বেগম।

এঘটনায় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী হলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং এন্ড ইন্সুইরেন্স বিভাগের শিক্ষার্থী তরুণ কলাম লেখক ও মানবাধিকার কর্মী কাজী আশফিক রাসেল। তিনি নেত্রকোনা জেলার দূর্গাপুর উপজেলাধীন খালিশাপাড়া গ্রামের আব্দুল লতিফের সন্তান।

অভিযুক্ত অধ্যক্ষ হলেন, দূর্গাপুর মহিলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ ও উপজেলা আ.লীগের উপদেষ্টা ফারুক আহম্মেদ তালুকদার। তিনি দূর্গাপুর উপজেলার কাকৈরগড়া গ্রামের বাসিন্দা। এছাড়াও উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতিও।

অবৈধভাবে চাকরিতে যোগদান, স্বজনপ্রীতি ও অর্থ লেনদেনের মাধ্যমে অধ্যক্ষ হওয়া, অর্থ আত্মসাৎ, নিয়োগ বাণিজ্য, স্ত্রীকে অবৈধ উপায়ে অন্য কলেজের অধ্যক্ষ বানানো, আদালত অবমাননা, জুলাই বিপ্লব বিরোধীতাসহ নানা অভিযোগ উঠেছে ওই অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে।

সূত্র বলছে, অধ্যক্ষ ফারুক আহম্মেদ তালুকদার যোগ্যতা ছাড়াই অবৈধভাবে সুসং মহাবিদ্যালয়ে ৬ মাসের কম্পিউটার কোর্স করে 'কম্পিউটারের শিক্ষা' পদে প্রভাষক হিসাবে যোগদান করেন। ফলে জাতীয় করণ প্রক্রিয়া থেকে বাদ দেওয়া হয় তাকে। বিষয়টি ২০১৬ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অডিট রিপোর্টে স্পষ্ট করা হয়।

২০১৭ সালে তৎকালীন স্থানীয় সাংসদ ও দুর্গাপুর মহিলা ডিগ্রি কলেজের গভর্ণিং বডির সভাপতি ছবি বিশ্বাস, গভর্ণিং বডির সদস্য আব্দুল্লাহ হক এবং তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আ. আজিজের যোগসাজশে স্বজনপ্রীতি ও ২৬ লক্ষ টাকার অনৈতিক লেনদেনের মাধ্যমে দুর্গাপুর মহিলা ডিগ্রি কলেজের ‘অধ্যক্ষ’ পদে যোগদানের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। যেখানে কাম্য যোগ্যতা ও নিয়মনীতি মানা হয়নি বলে দাবি করা হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নীতিমালা মোতাবেক ডিগ্রি কলেজের ‘অধ্যক্ষ’ নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রভাষক বা সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কমপক্ষে ১৫ বছরের অভিজ্ঞতা প্রয়োজন হয়।

দুর্গাপুর মহিলা ডিগ্রি কলেজ ২০০৫ সন থেকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত বিধায় অধ্যক্ষ নিয়োগের ক্ষেত্রে এ বিধিটি কার্যকর হবে। কিন্তু এ বিধিটি উপেক্ষা করে ১৫ বছরের কম অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ফারুক আহম্মদ তালুকদারকে নিয়োগ দেওয়া হয়। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত বেসরকারি কলেজ শিক্ষকদের চাকরি শর্তাবলি অনুযায়ী একজন অধ্যক্ষের ডিগ্রিস্তরে কমপক্ষে ১২ বছরের অভিজ্ঞতার বাধ্যবাধকতা থাকলেও উচ্চমাধ্যমিক স্তরের কম্পিউটারের প্রভাষক ফারুক আহমেদ তালুকদারের তা ছিলো না। অতএব, অধ্যক্ষ পদেও তার নিয়োগ সম্পূর্ণ অবৈধ বলে প্রমাণিত।

অন্যদিকে শিক্ষার্থীকে হুমকির বিষয়ে সাধারণ ডায়েরি সূত্রে জানা যায়, গত ১০ নভেম্বর তাঁর বড় ছেলে কাজী আশফিক রাসেল, সুসং দুর্গাপুর দুর্নীতি ও নিপীড়ন বিরোধী ভার্সিটিয়ান মঞ্চের আহ্বায়ক হিসেবে দুর্গাপুর মহিলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ ফারুক আহম্মদ তালুকদার ও তার স্ত্রী আলহাজ্ব মফিজ উদ্দিন তালুকদার কলেজের অধ্যক্ষ কামরুন্নাহার সহ একটি সিন্ডিকেটের দুর্নীতি, অনিয়ম ও ক্ষমতার অপব্যবহারের সুস্পষ্ট প্রমাণসহ একটি লিখিত অভিযোগ দুর্গাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর দাখিল করেন। পরে একই অভিযোগ নেত্রকোনা জেলা প্রশাসক; চেয়ারম্যান, দুর্নীতি দমন কমিশন, মহাপরিচালক, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে দাখিল করে করেছে। ইতিমধ্যে অভিযোগের ভিত্তিতে দুর্গাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কর্তৃক একটি তদন্ত কমিটিও গঠিত হয়েছে। যার স্মারক নাম্বার; ০৫.৩০.৭২১৮.০০০২.১৮.০৮৪.২৪-১১৩৮।

কিন্তু এ ঘটনায় অধ্যক্ষ ফারুক ও তার দীর্ঘদিনের দুর্নীতির সহযোগী ও সুবিধাবাভোগীরা চরম ক্ষিপ্ত হয়ে কাজী আশফিক রাসেলকে অভিযোগটি তুলে নেওয়ার জন্য বিভিন্ন মাধ্যমে বিশাল অংকের অর্থ প্রলোভনসহ জীবননাশের হুমকি দিচ্ছেন বলে জানা যায়। এমনকি তাঁর সন্তানদের বিরুদ্ধে পুলিশ ও প্রশাসনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা চক্রটির নিজস্ব লোক ব্যবহার করে ক্ষতি করারও হুমকি দিচ্ছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রোকিয়া খাতুন বলেন, এই দুর্নীতিবাজদের সহযোগী হিসেবে যদি সত্যিই কেউ পুলিশ-প্রশাসনে থেকে থাকে তবে তা অবশ্যই তদন্তের মাধ্যমে চিহ্নিত করার দাবি রাখে। পড়াশোনার কারণে আমার সন্তানরা বিদেশ-বিভুঁইয়ে (দূর শহরে) থাকে। ভাড়াটে সন্ত্রাসী লেলিয়ে দিয়ে আমাদের সন্তানকে অন্য শহরে হামলাসহ বিভিন্নধরনের ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। তাছাড়া অবৈধ টাকার দাপটে দুর্নীতির বিভিন্ন চক্রকে ব্যবহার করে উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটিকে প্রভাবিত করার যথেষ্ট আশংকা করছি।

এবিষয় খতিয়ে দেখতে উপজেলা কৃষি নির্বাহী অফিসার নিপা বিশ্বাসকে আহ্বায়ক করে ৫ সদস্য বিশিষ্ট এক তদন্ত কমিটি গঠন করেছে উপজেলা প্রশাসন। তদন্ত প্রতিবেদন সম্পর্কে জানতে চাইলে নিপা বিশ্বাস তিনি বলেন, তদন্তের কাজ চলমান রয়েছে। আমরা বিস্তারিত খতিয়ে দেখছি। আশা করছি এই মাসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে পারব।

এবিষয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী কাজী আশফিক রাসেল বলেন, অভিযোগটি দেয়ার পর থেকে তা তুলে আনার জন্য আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে ব্যাপক হুমকিধামকির শিকার হচ্ছি। দুর্নীতি ও নিপীড়ন বিরোধী এই আন্দোলনকে সফল করতে প্রয়োজনে শহীদ হতেও আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।

এবিষয়ে অভিযুক্ত অধ্যক্ষ ফারুক আহম্মেদ বলেন, আমার বিষয়ে আনিত অভিযোগ মিথ্যা এবং উদ্দেশ্যে প্রণোদিত। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। তদন্ত প্রতিবেদন আসলেই বিষয়টি পরিস্কার হয়ে যাবে।



 

সম্পাদকীয় :

প্রকাশক ও সম্পাদক : মোঃ গোলাম মাওলা শাওন
মোবাইল : ০১৭১১-০০৬২১৪

অফিস :

প্রধান কার্যালয় : ৩১/১ শরীফ কমপ্লেক্স ৫ম তলা পুরানা পল্টন ঢাকা ১০০০

মোবাইল : ০১৯৯৯-৯৫৩৯৭০

ই-মেইল : [email protected],  [email protected]