
রাহাদ সুমন, বিশেষ প্রতিনিধি ॥ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ বরিশালের বানারীপাড়ার সদর ইউনিয়নের জম্বদ্বীপ গ্রামের রাকিব বেপারীর (২১) মরদেহ কবর থেকে উত্তোলন করা হয়েছে। সাড়ে চার মাস পরে বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) দুপুরে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ রাকিব বেপারীর মরদেহ উপজেলার সদর ইউনিয়নের জম্বদ্বীপ গ্রামের পারিবারিক কবর স্থান থেকে উত্তোলন করা হয়। বানারীপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট বায়েজিদ উর রহমানের নেতৃত্বে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নারায়ণগঞ্জ সিআইডির ইন্সপেক্টর মো. জয়নাল আবেদীন, বানারীপাড়া থানার উপ-পরিদর্শক মোঃ নুরুল ইসলাম ও শফিকুল ইসলামের উপস্থিতিতে কবর খুঁড়ে রাকিবের মরদেহ উত্তোলন করা হয়। পরে ময়না তদন্তের জন্য তার মরদেহ বরিশাল শেবাচিম হাসাপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
এ প্রসঙ্গে বানারীপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার বায়েজিদ উর রহমান বলেন, গার্মেন্টস কর্মী রাকিব বেপারী জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নিহত হয়েছেন কিনা তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য কবর থেকে তার মরদেহ উত্তোলন করা হয়েছে এবং ময়নাতদন্ত সম্পন্ন শেষে তার মরদেহ পুনরায় দাফন করা হবে।
এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নারায়ণগঞ্জ সিআইডির ইন্সপেক্টর মো. জয়নাল আবেদীন বলেন, রাকিবের মৃত্যুর কারন উদঘাটনে মরদেহ উত্তোলন করে ময়নাতদন্ত করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, নিহত হওয়ার মাত্র চার মাস আগে বরিশালের বানারীপাড়ার রাকিবের (২১) সঙ্গে বিয়ে হয় বরগুনার আমতলীর জান্নাতের (১৮)। নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় গার্মেন্টসকর্মী রাকিবকে নিয়ে ভাড়া বাসায় ‘সুখের ঘর’ বেধেছিলেন মা-বাবা হারা মেয়েটি। কিন্তু দু’হাতে আঁকা বিয়ের মেহেদির রঙ মুছে যাওয়ার আগেই সব স্বপ্ন-আশা চুরমার হয়ে যায় জান্নাতের। তিনি হয়ে গেছেন বিধবা। গত ২১ জুলাই সকালে জান্নাতের স্বামী রাকিব ফতুল্লার পোস্ট অফিস এলাকার বাজার করতে বেরিয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী ও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে গুলিবিদ্ধ হন। ওইদিন দুপুরে ফতুল্লার খানপুর হাসপাতালে গিয়ে ছেলে রাকিবের লাশ শনাক্ত করেন বাবা মোশারেফ হোসেন। ময়নাতদন্ত ছাড়া ওই দিন রাতেই বানারীপাড়ার সদর ইউনিয়নের জম্বদ্বীপ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসা হয় তার মরদেহ। ২২ জুলাই সকাল ১০টায় বাড়ির উঠানে জানাজা শেষে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান রাকিব। দিন মজুর বাবা, হার্টের রোগী মা রাশিদা বেগম, প্রতিবন্ধী বড় ভাই শাকিল ও নবপরিণীতা স্ত্রী জান্নাতকে নিয়ে ফতুল্লায় ভাড়া বাসায় থাকতেন তিনি। গ্রামের বাড়ি বানারীপাড়ার জম্বদ্বীপ গ্রামে রাকিবদের কোন ঘর নেই। জীর্ণশীর্ণ একটি ঘরে বসবাস করেন তার চাচা নুরুল হক। গ্রামের বাড়িতে ঘর বানিয়ে বাবা-মাকে রাখার স্বপ্ন ছিল ছেলে রাকিবের। গুলির আঘাতে তার সব স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যায়।