গাজী মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম জাবির ।।
ইসলাম মানবতার ধর্ম। ইসলামের দৃষ্টিতে দয়া-মায়া, ভালবাসা সওয়াবের কাজ। ইসলাম ধর্মে সবার প্রতি দয়া প্রদর্শন করতে বলা হয়েছে। যার অন্তরে দয়া-মায়া আছে, যে পরোপকারী, আল্লাহ তাকে ভালোবাসেন। এ জন্য হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা ক্ষুধার্তকে খাদ্য দাও, রুগ্ন ব্যক্তির সেবা করো এবং বন্দিকে মুক্ত করো অথবা ঋণের দায়ে আবদ্ধ ব্যক্তিকে ঋণমুক্ত কর।’(সহিহ বোখারি শরিফ)।
সামর্থ্যবান ব্যক্তিদের কর্তব্য হলো, মানবসেবার ব্রতে এগিয়ে আসা এবং শীতার্তদের পাশে দাঁড়ানো। কারণ মানুষের অসহায়ত্বের এমন দৃশ্য আমরা আর দেখতে চাই না। তাই ‘চলতি শীতে একটি অসহায় মানুষও যাতে শীতে কষ্ট না পায়, সেই চেষ্টা করতে হবে সচেতন, বিবেকবান সামর্থ্যবান ব্যক্তিদের। আমাদের সকলকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে উদ্যোগ নিতে হবে। মনে রাখতে হবে, শীতার্ত মানুষের প্রতি সমাজের সামর্থ্যবান ও বিত্তশালীদের সাহায্য ও সহানুভূতির হাত সম্প্রসারিত করা প্রয়োজন। পর্যাপ্ত পরিমাণে শীতবস্ত্র সরবরাহ করে সাধ্যমতো শীতার্তদের পাশে দাঁড়ানো দরকার। শীতার্ত মানুষের দিকে সহানুভূতি ও দয়ার হাত বাড়িয়ে দেওয়া সামর্থ্যবানদের নৈতিক ও মানবিক দায়িত্ব। শীত আক্রান্ত মানুষের পাশে দাঁড়নোর এ সুযোগকে লুফে নেওয়া উচিত। কেননা অন্যের কষ্ট লাঘব করলে নিজের লাভই বেশি। নিঃস্বার্থভাবে বিপদগ্রস্ত মানুষের সাহায্য ও সেবা করা মানবধর্ম। এ মহৎ ও পুণ্যময় কাজ সর্বোত্তম ইবাদত। অসহায় মানুষের দুর্দিনে সাহায্য, সহানুভূতি ও সহমর্মিতার মানসিকতা যাদের নেই, তাদের ইবাদত-বন্দেগি আল্লাহর দরবারে কবুল হয় না।
সুতরাং নামাজ, রোজার সঙ্গে কল্যাণের তথা মানবিকতা ও নৈতিকতার গুণাবলি অর্জন জরুরি। এ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘পূর্ব ও পশ্চিম দিকে তোমাদের মুখ ফেরানোতে কোনো পুণ্য নেই, কিন্তু পুণ্য আছে কেউ আল্লাহ, পরকাল, ফেরেশতাগণ, সব কিতাব এবং নবীদের প্রতি ঈমান আনয়ন করলে এবং আল্লাহপ্রেমে আত্মীয়-স্বজন, এতিম, মিসকিন, পর্যটক, সাহায্য প্রার্থীদের এবং দাসমুক্তির জন্য অর্থ দান করলে, নামাজ প্রতিষ্ঠা করলে ও জাকাত প্রদান করলে এবং প্রতিশ্রুতি দিয়ে তা পূর্ণ করলে, অর্থ সঙ্কটে, দুঃখ-ক্লেশে ও সংগ্রাম-সঙ্কটে ধৈর্যধারণ করলে। এরাই তারা, যারা সত্যপরায়ণ এবং তারাই মুত্তাকি।(’সূরা: আল বাকারা : ১৭৭)।
জাতি-ধর্ম-বর্ণ দলমত-নির্বিশেষে বিত্তবানদের শীতার্ত বস্ত্রহীন মানুষের পাশে অবশ্যই দাঁড়ানো উচিত। এমন কাজের জন্য হযরত নবী করিম (সা.) পরকালীন পুরস্কার প্রাপ্তির কথা ঘোষণা করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘এক মুসলমান অন্য মুসলমানকে কাপড় দান করলে আল্লাহ তাকে জান্নাতের পোশাক দান করবেন। ক্ষুধার্ত অবস্থায় খাদ্য দান করলে আল্লাহ তাকে জান্নাতের সুস্বাদু ফল দান করবেন। কোনো মুসলমানকে তৃষ্ণার্ত অবস্থায় পানি পান করালে আল্লাহ তাকে জান্নাতের সিলমোহরকৃত পাত্র থেকে পবিত্র পানি পান করাবেন।’ (সুনানে আবু দাউদ)।
দুস্থ মানবতার সেবায় অগ্রসর হওয়া এবং তাদের পাশে দাঁড়ানো ধর্মপ্রাণ মানুষের নৈতিক দায়িত্ব। হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো মুমিনের পার্থিব একটি মুসিবত দূর করবে, আল্লাহ তায়ালা কিয়ামতের দিন তার মুসিবত সমূহ দূর করে দেবেন। আর যে ব্যক্তি কোনো অভাবী মানুষকে সচ্ছল করে দেবে, আল্লাহ তাকে ইহকাল ও পরকালে সচ্ছল করে দেবেন এবং আল্লাহ বান্দার সাহায্য করবেন যদি বান্দা তার ভাইয়ের সাহায্য করে।’ (সহিহ মুসলিম)।
প্রতিবার শীতে অসহায় মানুষের সাহায্যার্থে এগিয়ে আসতে দেখা যায় অনেককে, যা অবশ্যই প্রশংসার যোগ্য। শুধু মিডিয়া কাভারেজ কিংবা লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে যদি এ সাহায্য হয় তাহলে তা কখনও সুফল বয়ে আনবে না। সাহায্য, সহযোগিতা হতে হবে নিঃস্বার্থ ও সৎ উদ্দেশ্যপূর্ণ। রাষ্ট্র থেকে শুরু করে বিভিন্ন সংস্থা, সংগঠনকেও শীতার্ত অসহায় মানুষের পাশে এগিয়ে আসতে হবে। গণমাধ্যম কর্মীরা শীতার্তদের নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদন করে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারেন সরকার, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও বিত্তশালীদের।
এভাবে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সমাজের বিত্তবান ও মানবিক বোধসম্পন্ন ব্যক্তিরা যদি দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ায়, তা হলে মানুষকে অযাচিত দুর্ভোগ পোহাতে হবে না। এ ক্ষেত্রে সবাইকে শুধু দায়িত্ববোধ থেকে এগিয়ে আসতে হবে।মানুষের অন্যতম একটি মৌলিক প্রয়োজন হলো বস্ত্র। শীতকাতর মানুষের জন্য প্রয়োজন গরম জামা-কাপড়।এসব প্রয়োজন পূরণকারীর জন্য রয়েছে জান্নাতি সবুজ পোশাকের প্রতিশ্রুতি। নবীজী সাল্লাল্লাহু তা'য়ালা আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যে মুসলমান বস্ত্রহীন তাকে বস্ত্র দান করবে, আল্লাহ তায়ালা তাকে জান্নাতের সবুজ বর্ণের পোশাক পরাবেন। খাদ্য দান করলে তাকে জান্নাতের ফল খাওয়াবেন, পানি পান করালে জান্নাতের শরবত পান করাবেন। (সুনানে আবু দাউদ: ১৬৮২) ।
সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, কোম্পানি, সংগঠন এবং বিত্তবানরা ভালোবাসা ও সহানুভূতির হাত বাড়ালে শীতার্ত মানুষের কষ্ট লাগব হতে পারে। তাছাড়া প্রত্যেকেই নিজ নিজ অবস্থান থেকে দান ও সহানুভূতির পরশ বুলালে শীতার্ত মানুষ পাবে উষ্ণ শান্তি, লাঘব হবে শীতের কষ্ট।
লেখক: গাজী মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম জাবির, ধর্ম ও সমাজ বিশ্লেষক, ধর্মীয় অনুষ্ঠান উপস্থাপক ও চেয়ারম্যান -গাউছিয়া ইসলামিক মিশন, কুমিল্লা।।