পঞ্চগড় প্রতিনিধিঃ
পাথর উত্তোলন বন্ধ থাকায় ঋণে জর্জরিত হয়ে পড়েছে পঞ্চগড়ে'র তেঁতুলিয়া উপজেলার অনেক সাধারণ মানুষ। একদিকে বন্ধ হয়ে গেছে আয়ের উৎস। অপরদিকে পাওনাদারেরা চাপ দিচ্ছেন টাকার জন্য। এতে মানসিক ভাবে অনেকেই বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন। যারা চুক্তিতে অন্যের জমি থেকে পাথর উত্তোলন করবে এই মর্মে জমি মালিকদের টাকা বায়না দিয়েছে তারাও বায়না টাকা ফেরতের জন্য জমি মালিকদের উপর বিভিন্ন ধরনের চাপ সৃষ্টি করছে। পুলিশ প্রশাসনের সহায়তায় বায়নামার টাকা ফেরত পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছে অনেকেই।
পঞ্চগড় জেলা যে সকল কারনে বিখ্যাত তার মধ্যে একটি হল পাথর। মাটির নিচে প্রচুর পরিমাণে পাথর পাওয়া যায় জেলার সদর উপজেলা ও বিশেষ করে তেঁতুলিয়ায় । তেঁতুলিয়া উপজেলার বিভিন্ন স্থানে সামান্য মাটি কাটলেই এর নীচে প্রচুর পরিমাণে পাথর পাওয়া যায় । যা উপজেলার বহু মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন এনে দিয়েছিল। সনাতন পদ্ধতিতে মাটি কেটে পাথর উত্তোলন দীর্ঘদিন ধরেই চলে আসছিল । কিন্তু শেষ পর্যায়ে এসে কিছু অসাধু ব্যক্তি সুসংগঠিত হয়ে মাটি কেটে পাথর উত্তোলনের পরিবর্তে অবৈধ ড্রেজার মেশিন দিয়ে পাথর উত্তোলন শুরু করে ।
ড্রেজার মেশিন দিয়ে পাথর উত্তোলন অধিক লাভজনক হওয়ায় অনেক ব্যবসায়ী সনাতন পদ্ধতিতে পাথর উত্তোলনের পরিবর্তে অবৈধ ড্রেজার মেশিন দিয়ে পাথর উত্তোলন শুরু করে। এতে পরিবেশের ভারসাম্য ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশংকা দেখাদেয়। এমতাবস্থায় বিষয়টি নিয়ে পরিবেশবাদী সংগঠন গুলো উদ্বিগ্ন হয়ে প্রতিবাদ করে। গণমাধ্যমে বিভিন্ন খবর প্রকাশিত হতে থাকে।
কর্মহীন হয়ে পড়তে থাকে মাটি কাটা ও পাথর উত্তোলনকারী শ্রমিকরা। তেঁতুলিয়া উপজেলা পাথর বালি ও শ্রমিক কল্যাণ সমিতি ভজনপুর এর শেষের দিকের কমিটি গঠনের পর থেকে ড্রেজারের ভয়াবহতা শুরু হয় বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। স্থানীয়রা জানান, স্থানীয় কিছু অসাধু ব্যাবসায়ীদের নেতৃত্বে চলে এই ড্রেজার মেশিন দিয়ে পাথর উত্তোলন।
এরা লাইনম্যান হিসেবে পরিচিতি লাভ করতে সক্ষম হয়েছে সমগ্র উপজেলায় । তেঁতুলিয়া উপজেলা পাথর বালি ও শ্রমিক কল্যাণ সমিতির সভাপতি মোঃ মজিবর রহমান এর নাম লাইনম্যান হিসেবে পরিচিতি না পেলেও তিনি নিজে একাধিক ড্রেজার মেশিন চালাতো। এবং লাইনম্যানদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা করতো । এসব দুষ্কৃতীরা শ্রমিক থেকে বা কেউ সিনেমা হলের টিকিট বিক্রেতা থেকে কোটিপতি হয়েছেন ঠিকই কিন্তু তাদের জন্য পঞ্চগড় জেলা, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর,নীলফামারী সহ দেশের প্রায় পাঁচলক্ষ শ্রমিক বেকার হয়ে গেছে ।
তাদের অনেকেই গরু চোরাচালান, মাদক পাচার, অস্ত্র ও সীমান্ত নদী মহানন্দা,করতোয়া থেকে অবৈধ ভাবে বালি ও পাথর উত্তোলন করে জীবিকা নির্বাহ করছে । অথচ যাদের জন্য এই পাথর উত্তোলন বন্ধ তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি বললেও ভুল হবে না । এদিকে সব মিলিয়ে হটাৎ করেই উপজেলার মাটির নিচে থেকে পাথর উত্তোলন বন্ধ হয়ে যায় । উপজেলার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, আমরা জমি পাথর উত্তোলনের জন্য চুক্তিতে অন্যের কাছে দিয়েছি।
চুক্তির কিছু টাকা বায়না স্বরূপ অগ্রিম নিয়েছি। তারা পাথর উত্তোলন চলাকালীন সময় চুক্তির বাকী টাকা পরিশোধ করবে। সরকার পাথর উত্তোলন বন্ধ করায় আমরা এমনিতেই অনেক কষ্টে দিন পার করছি ।তার উপরে এখন ব্যবসায়ীরা বায়নামার টাকা ফেরত চাচ্ছে। বাড়িতে পুলিশ পাঠাচ্ছেন । আবার অনেকেই যারা বিভিন্ন এনজিও ও ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে ব্যবসায় বিনিয়োগ করেছেন তারাও পরেছে ঋণ খেলাপিতে।
এনজিও গুলো পাওনা টাকা ফেরত নিতে একের পর এক মামলা দায়ের করছেন ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে।সব মিলিয়ে চরম বিপাকে পড়েছে সাধারণ মানুষ । কথিত লাইনম্যানদের অবৈধ পথে উপার্জিত অর্থ বাজেয়াপ্ত করা সহ তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি সাধারণ মানুষের । পাশাপাশি যারা চুক্তির টাকা ফেরত পেতে মরিয়া হয়ে জমি মালিকদের উপর হুমকি ও চাপ সৃষ্টি করছে তাদেরকে এবং তাদের সহযোগীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।
প্রকাশক ও সম্পাদক মোঃ গোলাম মাওলা শাওন ০১৭১১-০০৬২১৪,ব্যবস্থাপনা সম্পাদক 01762119992, প্রধান কার্যালয় ৩৪ নুরজাহান শরীফ প্লাজা ৮ম তলা, পুরানা পল্টন ঢাকা ১০০০। ০১৯৯৯-৯৫৩৯৭০ নিউজ ই-মেইল [email protected] সিভি পাঠান: [email protected]
দৈনিক বাংলার আলো নিউজ জিএমএস বাংলার আলো গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান।