মো. আজিজার রহমান,খানসামা (দিনাজপুর) প্রতিনিধি: দিনাজপুরের খানসামার আত্রাই নদীর পানি কমতে তীব্র ভাঙন শুরু। ইতোমধ্যে নদীগর্ভে বিলিন হয়েছে বাড়ি ভিটা, ফসলি জমি। তীব্র এ ভাঙন রোধে ব্যবস্থা না নিলে বিলীন হয়ে যেতে পারে আলোকঝাড়ী ইউনিয়নের সরকারি গুচ্ছগ্রামের আবাসন প্রকল্প, খানসামা টিটিসি ও কেন্দ্রীয় মহাশ্মশান। ভাবকী ইউনিয়নের চাকিনীয়া গ্রামের অধিকাংশ ঘরবাড়ি। খামারপাড়া ইউনিয়নের মালিজালের ঘাট ও জোয়ার গ্রামের আত্রাই নদী তীরবর্তী প্রায় ৩ শতাধিক পরিবার। এ বছরে নদী ভাঙনে এই তিন অঞ্চলের প্রায় ৩০০ একর আবাদি কৃষি জমি বিলীন হয়ে গেছে।
সোমবার (২৮ জুলাই) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আলোকঝাড়ী ইউনিয়নের বুদুর বাঁশেরতলে নদী ভাঙনে একের পর এক বিলীন ফসলি জমি। রাতের আঁধারে নদীগর্ভে চলে যাচ্ছে বাসিন্দাদের পৈতৃক নিবাসের শেষ স্থানটুকু। ভাবকী ইউনিয়নের পশ্চিম-দক্ষিণে অবস্থিত চাকিনীয়া গ্রাম, খামারপাড়া ইউনিয়নের জোয়ার ও মালিজালের ঘাট দাসপাড়ায় আত্রাই নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে গেছে। এ ঘটনায় স্থানীয় মানুষের জীবিকা নির্বাহের একমাত্র সম্বল কৃষি জমি হারিয়ে অনেকে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন অনেকে। এছাড়াও প্রতিদিন ভাঙ্গনের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ায় নদীর পাশ দিয়ে চলাচলের একমাত্র সড়ক ভাঙনের মুখে।
স্থানীয়রা জানান, নদী ভাঙনে কয়েকদিন ধরে একের পর এক বসতভিটা বিলীন হচ্ছে উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রামের বাড়িঘর। শুধু থাকার জায়গা নয়, ফসলি জমি, গাছপালা বিলীন হলেও কিছু যেন করার নেই নদী তীরের বাসিন্দাদের। গত তিন বছর আগে বর্ষাকালে হঠাৎ করে নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে আবাদি জমির ওপর দিয়ে স্রোত যায়। এতে প্রায় আমাদের প্রায় ৩০০ একর আবাদী জমি নদীতে পরিণত হয়ে যায়। আর এ বছর ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে একেবারে বাড়ির কাছে এসে পৌছেঁছে।
বাড়িঘর গুলো নিয়ে হুমকির মধ্যে রয়েছে অত্র একালাকার বাসিন্দারা। নদী ভাঙ্গন রোধে ও বাড়িঘর রক্ষার জন্য নদীতে বাঁধ নির্মাণের জন্য ভুক্তভোগীরা প্রধানমন্ত্রী ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
চাকিনীয়া গ্রামের নদীর পাড়ের বাসিন্দা রাশেদুল বলেন, আমার ৪ বিঘা জমি চাষ করে সংসার চলত। এ বছর নদীতে সেই শেষ সম্বল জমি ও গাছ বিলীন হয়ে গেছে। বর্তমানে বসতবাড়ি নিয়ে হুমকির মধ্যে রয়েছি।
নদীর পাড়ের গুচ্ছগ্রামের আবাসন প্রকল্পের বাসিন্দা সজল জানান, নদী ভাঙতে ভাঙতে প্রায় বাড়ির কাছে চলে এসেছে। যদি সরকারীভাবে এই এলাকায় বাঁধের ব্যবস্থা না করে দেন, তাহলে আমাদের সব বাড়ি বিলিন হয়ে যাবে।
ভাবকী ইউনিয়নের স্থানীয় ইউপি সদস্য মকবুল হোসেন বলেন, আমারও ৫ বিঘা জমি নদীতে চলে গেছে। নদী ভাঙ্গন রোধে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের পরামর্শে উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে জানিয়েছি।
আলোকঝাড়ী ইউনিয়নের স্থানীয় ইউপি সদস্য এনামুল হক বলেন, যেভাবে নদী ভাঙছে এভাবে ভাঙলে গুচ্ছগ্রামের আবাসন প্রকল্প ও কেন্দ্রীয় মহাশ্মশান নদীতে বিলীন হয়ে যাবে।
উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক রাকেশ গুহ বলেন, আমি এলাকাবাসী পক্ষে মাননীয় সংসদ সদস্যর কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি আত্রাই নদীর দক্ষিন পার্শ্বে অতি দ্রুত যেন বাঁধ নির্মান করে দেয়।
ভাবকী ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল আলম তুহিন বলেন, বিষয়টি আমি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করেছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে নদী ভাঙ্গন রোধে যেকোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
খামারপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান আবু বকর সিদ্দিক চৌধুরী বলেন, আত্রাই নদী ভাঙনের ফলে আমরাও চিন্তিত। দ্রুত ভাঙন রোধে সংশ্লিষ্টদের সুদৃষ্টি প্রয়োজন।
এ বিষয়ে খানসামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট তাজউদ্দীন জানান, নদী ভাঙনের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে ভাঙন প্রতিরোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে দিনাজপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী সঞ্জয় কুমার মন্ডল বলেন, খবর পেয়ে আমি ইতিমধ্যে এলাকাটি ভালো ভাবে পরিদর্শন করেছি। আমার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে অবহিত করে ভাঙন রুখতে যত দ্রুত সম্ভব প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ছবির ক্যাপশন: ১.দিনাজপুরের আত্রাই নদীর ভাঙনে বিলীন হচ্ছে উপজেলার আলোকঝাড়ী ইউনিয়নের বুদুর বাঁশেরতল এলাকার অনেক ফসলি জমি।
২. ড্রোন ক্যামেরায় তোলা খানসামা উপজেলায় আত্রাই নদীর ভাঙনে ভাবকি ইউনিয়নের চাকিনীয়া গ্রাম।
প্রকাশক ও সম্পাদক মোঃ গোলাম মাওলা শাওন ০১৭১১-০০৬২১৪, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক 01762119992, প্রধান কার্যালয় ৩৪ নুরজাহান শরীফ প্লাজা ৮ম তলা, পুরানা পল্টন ঢাকা ১০০০। ০১৯৯৯-৯৫৩৯৭০ নিউজ ই-মেইল [email protected] সিভি পাঠান: [email protected]