প্রেস বিজ্ঞপ্তি:
বহুল আলোচিত নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের এশিয়ান হাইওয়ের পাশ থেকে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির চোখ উপড়ানো লাশ উদ্ধারের ঘটনায় মৃতদেহের পরিচয় শনাক্তপূর্বক নৃশংস ও ক্লুলেস হত্যাকান্ডের রহস্য উদ্ঘাটন ও মূল পরিকল্পনাকারীসহ সরাসরি জড়িত ০৫ জনকে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত আলামতসহ রাজধানীর উত্তরা, গাজীপুরের টঙ্গী ও লক্ষীপুরের রায়পুর এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে র্যাব।
র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বিভিন্ন ধরণের অপরাধীদের গ্রেফতারের ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। র্যাবের সৃষ্টিকাল থেকে চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী, খুনী, বিপুল পরিমান অবৈধ অস্ত্র গোলাবারুদ উদ্ধার, ছিনতাইকারী, অপহরণ ও প্রতারকদের গ্রেফতার করে সাধারণ জনগণের মনে আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে সংগঠিত চাঞ্চল্যকর এবং আলোচিত অপরাধীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় এনে র্যাব জনগনের সুনাম অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
গত ০৯ জানুয়ারি ২০২৪ তারিখ সকাল আনুমানিক ১০০০ ঘটিকায় নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের এশিয়ান হাইওয়ে রাস্তার পাশে একটি চোখ উপড়ানোঅজ্ঞাতনামামৃতদেহদেখে স্থানীয় লোকজন নিকটস্থ র্যাব ক্যাম্পে অবহিত করে। পরবর্তীতে র্যাব-১ ঘটনাস্থলে পৌঁছে প্রাথমিক ভাবে মৃত দেহের সাথে থাকা মানিব্যাগে বিভিন্ন নথিপত্র এবং আইডি এসডি ভাইস এর মাধ্যমে অজ্ঞাত নামা মৃত দেহটির নাম ও পরিচয় সনাক্ত করতে সক্ষম হয় এবং নিশ্চিত হয় যে মৃতব্যক্তির নাম ফারুক হোসেন, পিতাঃআব্দুলবারেক শেখ, চাঁদপুর। পরবর্তীতে ভিকটিমের পরিবারে মৃতদেহটি সনাক্ত করে এবং ভিকটিমের মা বাদী হয়ে রূপগঞ্জ থানায় অজ্ঞাতনামা আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। যার মামলা নং-১০/১০, তারিখ ০৯ জানুয়ারি ২০২৪। নৃশংস এই হত্যাকান্ডটি এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে এবং বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম ও প্রিন্ট ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়ায় গুরুত্বের সাথে প্রচারিত হয়। উক্ত ক্লুলেস হত্যাকান্ডের রহস্য উদ্ঘাটন ও জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে র্যাব গোয়েন্দা নজদারী বৃদ্ধি করে।
এরই ধারাবাহিকতায় গত রাতে র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-১১ এর সহায়তায় র্যাব-১ এর যৌথ আভিযানিক দলরাজধানীর উত্তরা, গাজীপুরের টঙ্গী এবংলক্ষীপুরের রায়পুর এলাকায়অভিযান পরিচালনা করে উক্ত ক্লুলেস ও নৃশংস হত্যাকান্ডেরমূল পরিকল্পনাকারী ১। মোঃ নিজাম উদ্দিন (৩৬), পিতা-মৃত ছফিউল্যা হাওলাদার, লক্ষীপুর সদর, লক্ষীপুর, ২। মোঃ সোহাগ (৩৮), পিতা-মৃত তোফাজ্জেল হোসেন, রাজাপুর, ঝালকাঠী,৩। মোঃ জহিরুল ইসলাম (৪৮), পিতা-মৃত আলী আরজম, লক্ষীপুর সদর, লক্ষীপুর, ৪। মোঃ রনি হোসেন (২৩), পিতা-আব্দুর রাজ্জাক হাওলাদার, রায়পুর, লক্ষীপুর ও ৫। মোঃ বাদশা (২৩), পিতাঃ মোঃ শাহজাহান, দাউদপুর, কুমিল্লাদেরকেগ্রেফতার করা হয়। উদ্ধার করা হয়হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত আলামত। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরাউক্ত হত্যাকান্ডের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায় যে, ভিকটিম ফারুক হোসেন (২৬) স্ত্রী সন্তানসহ পরিবারের সাথে রাজধানীর তুরাগের বাউনিয়ায়একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করতো।সে গাজীপুরের টঙ্গী চেরাগআলী এলাকায় ঢাকা এক্সপ্রেস নামীয় পরিবহনের ‘টিকিট কাউন্টার ম্যান’ হিসেবে বেশ কিছুদিন কাজ করতো। সে টঙ্গী চেরাগআলী এলাকায় বাসের টিকিট বিক্রির লভ্যাংশ দিয়ে নিজের ও পরিবারের খরচচালাতো বলে জানা যায়।
ঘটনার দিন গত ০৮ জানুয়ারী ২০২৪ তারিখ আনুমানিক সকাল ১০০০ ঘটিকায় ভিকটিম ফারুক কাজের জন্য বাসা থেকে বের হয়েটঙ্গী চেরাগআলী বাসস্ট্যান্ডে গমন করে। প্রতিদিনের ন্যায় নির্দিষ্ট সময়ে বাসায় না ফিরলে তার মা সহ পরিবারের লোকজন তাকে মোবাইল ফোনে কল দিয়ে ফোন বন্ধ পায়। এসময় তার পরিবারের লোকজন তাকে সম্ভব্য সকল জায়গায় খোঁজাখুঁজি করে সন্ধান পায়নি। পরবর্তীতে গত ০৯ জানুয়ারি ২০২৪ তারিখ ঘটনাস্থলে পৌঁছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় ভিকটিম ফারুকের মৃতদেহ সনাক্ত করে।
গ্রেফতারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, গ্রেফতারকৃত নিজাম উদ্দিন গাজীপুরের টঙ্গীর চেরাগআলী বাসস্ট্যান্ডে ঢাকা এক্সপ্রেস নামক একটি পরিবহনের কাউন্টার ম্যানেজার হিসেবে কাজ করায় ভিকটিম ফারুকের সাথে তার পরিচয় ও সম্পর্ক তৈরি হয়। পরবর্তীতে গ্রেফতারকৃত নিজাম উদ্দিনের সাথে ভিকটিম ফারুকের বিভিন্ন লেনদেনের কারণে সম্পর্কের অবনতি হয় এবং বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাদের মধ্যে দ্বাদ্ব ছিল।
গত ০৮ জানুয়ারি ২০২৪ তারিখ গ্রেফতারকৃত নিজাম উদ্দিন এর নিকট ভিকটিম ফারুক পাওনা টাকা চাইলে তার সাথে কথা কাটাকাটি হয়। পরবর্তীতে গ্রেফতারকৃত নিজাম ভিকটিম ফারুকের প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে উচিত শিক্ষা দেয়ার জন্য গ্রেফতারকৃত সোহাগ, জহিরুল, রনি ও বাদশাসহ আরও কয়েক জনের সাথে পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ০৮ জানুয়ারি ২০২৪ তারিখ রাত আনুমানিক ০৭.৩০ ঘটিকার সময় গ্রেফতারকৃত নিজাম মোবাইলে ফোন করে ভিকটিম ফারুককে টাকা নেওয়ার জন্য কাউন্টারে আসতে বলে।
পরবর্তীতে ভিকটিম ফারুক টাকা নিতে কাউন্টারে আসলে গ্রেফতারকৃত নিজামের পরিকল্পনা ও নেতৃত্বে গ্রেফতারকৃত সোহাগ, জহিরুল, রনি ও বাদশা ভিকটিমকে মারধর করে। একপর্যায়ে গ্রেফতারকৃত নিজামের নির্দেশে গ্রেফতারকৃত সোহাগ, জহিরুল, রনি ও বাদশা ভিকটিম ফারুককে জোরপূর্বক ঢাকা এক্সপ্রেস পরিবহনের একটি খালি বাসে উঠিয়ে নিয়ে যায় এবং বাসের মধ্যে পুনরায় ভিকটিম ফারুকের শরীরের বিভিন্ন স্থানে দেশিয় অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করে গুরুতর জখম করে।
পরবর্তীতে ক্ষোভের বশবর্তী হয়ে গ্রেফতারকৃত সোহাগ ও রনি ভিকটিম ফারুকের হাত-পা চেপে ধরে এবং গ্রেফতারকৃত বাদশা বাসে থাকা টুলবক্স থেকে স্ক্রু ড্রাইভার নিয়ে ভিকটিম ফারুকের বাম চোখ উপড়ে ফেলে। একপর্যায়ে ভিকটিম ফারুকের মৃত্যু নিশ্চিত হলে গ্রেফতারকৃতরা হত্যার ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে ভিকটিম ফারুকের মৃত দেহটি বাসে নিয়ে কুড়িল ফ্লাইওভার হয়ে পূর্বাচল ৩০০ ফিট রোড এলাকা দিয়ে ঘুরে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের এশিয়ান হাইওয়ে পাশে রঘুরামপুর এলাকার নির্জন রাস্তার পাশে ফেলে বাসটি নিয়ে লক্ষীপুরের উদ্দেশ্যে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে গ্রেফতারকৃতরা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর গ্রেফতার এড়াতে আত্মগোপনে চলে যায়।
গ্রেফতারকৃত নিজাম উদ্দিন ঢাকা এক্সপ্রেস পরিবহনে ০৭ বছর যাবৎ কাউন্টার ম্যানেজার হিসেবে গাজীপুরের টঙ্গী চেরাগআলী বাসস্ট্যান্ডে চাকুরী করতো। সে উক্ত ঘটনায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর গ্রেফতার এড়াতে টঙ্গী এলাকায় আত্মগোপনে ছিল। আত্মগোপনে থাকাকালীন সময় র্যাব কর্তৃক গ্রেফতার হয়। তার বিরুদ্ধে লক্ষীপুরের সদর থানায় ০১টি হত্যাচেষ্টার মামলা রয়েছে।
গ্রেফতারকৃত বাদশা গাজীপুরের টঙ্গীতে একটি গ্রীল ওয়ার্কশপে কাজ করতো। তার সাথে গ্রেফতারকৃত নিজাম উদ্দিন ও রনির পূর্ব পরিচয়ের সূত্রে সখ্যতা ছিল বলে জানা যায়। সে উক্ত ঘটনায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর গ্রেফতার এড়াতে টঙ্গী এলাকায় আত্মগোপনে ছিল। আত্মগোপনে থাকাকালীন সময় র্যাব কর্তৃক গ্রেফতার হয়।
গ্রেফতারকৃত রনি ঢাকা এক্সপ্রেস ও লাবিবা ক্লাসিক পরিবহনের টঙ্গী স্টেশনের কাউন্টার মালিক। সে উক্ত ঘটনায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর গ্রেফতার এড়াতে রাজধানীর উত্তরা এলাকায় আত্মগোপনে ছিল আত্মগোপনে থাকাকালীন সময় র্যাব কর্তৃক গ্রেফতার হয়।
গ্রেফতারকৃত সোহাগ ঢাকা এক্সপ্রেস পরিবহনে ১৭ বছর যাবৎ সুপারভাইজার হিসেবে চাকুরী করতো। সে উক্ত ঘটনায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর গ্রেফতার এড়াতে লক্ষীপুরের রায়পুর এলাকায় আত্মগোপনে ছিল। আত্মগোপনে থাকাকালীন সময় র্যাব কর্তৃক গ্রেফতার হয়। তার বিরুদ্ধে ঝালকাঠি, রাজাপুর থানায় মারামারি সংক্রান্ত ০১টি মামলা রয়েছে।
গ্রেফতারকৃত জহিরুল ইসলাম ঢাকা এক্সপ্রেস পরিবহনে ০৪ বছর যাবৎ ড্রাইভারের চাকুরী করতো। সে উক্ত ঘটনায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর গ্রেফতার এড়াতে লক্ষীপুরের রায়পুর এলাকায় আত্মগোপনে ছিল। আত্মগোপনে থাকাকালীন সময় র্যাব কর্তৃক গ্রেফতার হয়। তার বিরুদ্ধে লক্ষীপুরের সদর থানায় ০১টি মামলা রয়েছে।
গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
সহকারী পরিচালক
লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া উইং
পক্ষে পরিচালক