নিজস্ব প্রতিনিধিঃ
“আচ্ছা, আমরা কি একা ? এই সৌরজগতের বাইরে আর কোথাও কি প্রাণের অস্তিত্ব রয়েছে ?অথবা এই গ্যালাক্সির আর কোথাও ? কিংবা পুরো মহাবিশ্বের কোনো ক্ষুদ্র এক কোণে ?
হঠাতই একদিন এরকম এক প্রশ্ন উঁকি দিলো নোবেলজয়ী ইতালিয়ান পদার্থবিজ্ঞানী এনরিকো ফার্মির মাথায়। কৌতুহলী বিজ্ঞানী সাথে সাথে লেগে পড়লেন অঙ্ক কষতে। পৃথিবীর বাইরে প্রাণের অস্তিত্ব থাকার সম্ভাবনা আছে কিনা , থাকলেই বা কতটুকু তা নির্ণয় করলেন গণিতের ভাষায়। অঙ্ক কষে বলে দিলেন সম্ভবানা মোটে কম নয়,সুদূর ভবিষ্যতে হয়তো কোন এক সময়ে এলিয়েন বন্ধুর দেখা মানুষ পেলেও পেতে পারে ।
আসলেই তো ! আমরা নিজেকে যতটা একা ভাবছি হয়তোবা আমরা ততটাও একা নই। কেও না কেও তো থাকতেই পারে , যারা আমাদেরই মতো খোঁজ করে চলেছে মহাবিশ্বের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে – “কোথাও কোনো স্পন্দন আছে কি ?”
একটা ছোটখাট হিসেব করা যাক । মহাকাশ বিজ্ঞানীদের মতে , শুধুমাত্র আমাদের এই মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিতেই ছোটবড় মিলিয়ে প্রায় 400 বিলিয়ন নক্ষত্র আছে , যার মধ্যে প্রায় 20 বিলিয়ন নক্ষত্রের বৈশিষ্ট্য ও গঠন একদম আমাদের সৌরজগতের সূর্যের মতো । এসব নক্ষত্রের প্রতি পাঁচটার মধ্যে একটিরও কক্ষপথে যদি Goldilock Zone (সহজ কথায় Habitable Zone) থাকে যেখানে ঠান্ডা বা গরম কোনটাই অত্যধিক নয়, তাহলে এই মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিতে আমরা প্রায় পৃথিবীর মতো বাসযোগ্য 4 বিলিয়ন গ্রহ পাবো, যেখানে প্রাণের অস্তিত্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে , যারা নির্দিষ্ট কক্ষপথ ধরে অনবরত প্রদক্ষিণ করে চলেছে তাদের সূর্যকে
বসবাসের মত পরিবেশ রয়েছে এমন ধরণের মাত্র 0.1% গ্রহতেও জীবনের অস্তিত্ব আছে বলে যদি স্বীকার করে নেয়া হয় তবে নিশ্চিতভাবে প্রাণের স্পন্দন রয়েছে এমন গ্রহের সংখ্যা দাঁড়ায় মোটামুটি 4 মিলিয়ন । এর মধ্যে যদি 1.00% গ্রহও মানুষের কাছাকাছি বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন জীবের ধারক হয় তবে সব মিলিয়ে মোটামুটি আমরা প্রায় 40 হাজারের মতো ভিন্ন ভিন্ন সভ্যতা খুঁজে পাবো ,যার সূচনা ঘটিয়েছে ভিনগ্রহের বুদ্ধিমান প্রাণীরা । তাদের মধ্যে 1% প্রাণীও যদি মহাকাশ ভ্রমণে সক্ষম হয় তবে 400 টি আলাদা আলাদা সভ্যতা থেকে আসা ভিনগ্রহের প্রাণীর সন্ধান পাবো আমরা , যারা কিনা আমাদেরই মতো মহাবিশ্বের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে মহাকাশযানে করে ভ্রমণ করে বেড়াচ্ছে, খোঁজ করছে নতুনত্বের। সম্ভাবনার এই অঙ্কের ক্ষেত্রে যদিও সর্বনিম্ন মান ধরে হিসাব করা হয়েছে, তারপরও এই সংখ্যাটি আমাদের পৃথিবীবাসীর জন্য ব্যাপক গুরুত্ব বহন করে ।
” কিন্তু কোথায় তারা ? ” – সীমাবদ্ধতা এখানেই
হতাশার বিষয় এই যে ,উপরে বর্ণিত এসব ঘটনা গুলো মহাবিশ্বের কোথাও আদৌ ঘটছে কিনা , বাস্তবেই পৃথিবী সভ্যতার বাইরেও প্রাণের অস্তিত্ব আছে কিনা – সেই সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান একেবারে শূন্য। অর্থাৎ আমাদের কাছে শুধুমাত্র খাতা-কলমে করা কিছু সম্ভাবনার অংক ছাড়া আর কিছুই নেই। তাদের অস্তিত্বের কোন নির্দিষ্ট প্রমাণ এখন পর্যন্ত আমরা পাইনি। আর এটাই ফার্মি প্যারাডক্সের এর মূল ভিত্তি। অর্থাৎ “যদি কেও থেকেই থাকে , তবে কোথায় সে ?” – উত্তর অজানা।
তাদের অস্তিত্বের কোনো নির্দিষ্ট ব্যাখ্যা দিতে না পারলেও কেন আমরা সেই ব্যাখ্যা দিতে পারছি না এই বিষয়ের একটা খসড়া ব্যাখ্যা আমাদের কাছে রয়েছে। কেন আমরা এখন পর্যন্ত ভিনগ্রহের কোনো প্রাণী সম্পর্কে নিশ্চিত প্রমাণ পাই নি, কেন আমরা এখনও কোনো এলিয়েন প্রতিবেশীর সাথে যোগাযোগ করতে পারি নি – এসব প্রশ্নের উত্তর হিসেবে বিজ্ঞানীরা অনেক কারণ দেখিয়েছেন।
•হতে পারে এ মহাবিশ্বে আমরাই প্রথম সভ্যতা যারা কিনা প্রযুক্তিতে এত উন্নতি করেছি এবং পৃথিবী ছাড়িয়ে মহাকাশ থেকেও একে অপরের সাথে যোগাযোগ করছি, আর কোন জাতি হয়তোবা এতটা উন্নত এখন পর্যন্ত হতে পারেনি কিংবা এ পথে তাদের উন্নয়ন প্রক্রিয়া এখনো চলমান রয়েছে
•কোন গ্রহাণুর আঘাতে কিংবা কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে হয়তো তারা ইতিমধ্যেই বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে। যেমনটা ঘটেছিল ডাইনোসরের ক্ষেত্রে।
•তাদের গ্রহের আবহাওয়া ও জলবায়ুতে এমন কোন পরিবর্তন ঘটেছে যার কারণে তাদের টিকে থাকার মত উপযুক্ত পরিবেশ পরবর্তীতে আর বিদ্যমান ছিল না
•হয়তোবা তাদের গ্রহটি পর্যাপ্ত রিসোর্সে সমৃদ্ধ নয় যার অভাবে তারা প্রযুক্তিতে উন্নতি করার জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী পাচ্ছে না
•সম্ভাবনা রয়েছে যে সেই প্রাণীরা নিজ গ্রহের বাইরে মহাবিশ্বের অন্য কোনো কিছু সম্পর্কে জানতে বা কারও সাথে যোগাযোগ করতে আগ্রহী নয়।
•কিংবা কোনো এক ঘটনাকে কেন্দ্র করে তারা একে অপরের সাথে যুদ্ধ করে ইতিমধ্যেই ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। কোন এক ভবিষ্যতে আমরা তাদের অস্তিত্বের ধ্বংসাবশেষ হয়তো খুঁজে পেতে পারি, কিংবা নয়।
•আমাদের কাছে তাদের অস্তিত্বের কোন না কোন সংকেত পাঠানো হয়েছে, কিন্তু আমরা আমাদের প্রযুক্তিগত দূর্বলতার কারণে তা সনাক্ত করতে পারিনি – এমনটা ঘটার সম্ভাবনাও কম নয়
•কিংবা এমনও হতে পারে যে তারা আমাদের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছে এবং কোনো একদিন আমরা উভয়েই সফল হব। হয়তোবা একদিন ঘুম থেকে উঠে ফেইসবুক স্ক্রল করতে করতে নাসার এক পোস্টের ক্যাপশনে চোখ পড়বে আমাদের –
” পৃথিবীবাসী কে ‘হ্যালো’ বলেছে ভিনগ্রহের প্রাণী ,