রিয়াদ মাহমুদ সিকদার, কাউখালী, পিরোজপুর প্রতিনিধি।
নির্বাচন কমিশন (ইসি) সম্প্রতি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দশটি সংসদীয় আসনের সীমানা পরিবর্তনে এনেছে। এর ভিতরে রয়েছে পিরোজপুর -২ ও পিরোজপুর -১। এই পরিবর্তনের ফলে পাল্টে গেছে ভোটের হিসাব-নিকাশ। ইসির গেজেট অনুযায়ী, একাদশ সংসদ নির্বাচনে পিরোজপুর-১ আসনটি পিরোজপুর সদর, নাজিরপুর ও নেছারাবাদ (স্বরূপকাঠি) উপজেলা নিয়ে গঠিত ছিল। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নির্ধারিত নতুন সীমানায় এ আসনটি পিরোজপুর সদর উপজেলা, নাজিরপুর ও ইন্দুরকানী উপজেলা নিয়ে গঠন করা হয়েছে। একই সঙ্গে আগে কাউখালী, ভাণ্ডারিয়া ও ইন্দুরকানী উপজেলা নিয়ে গঠিত পিরোজপুর-২ সংসদীয় আসনটি নতুন সীমানা অনুযায়ী কাউখালী, ভাণ্ডারিয়া ও নেছারাবাদ উপজেলা নিয়ে গঠন করা হয়েছে। অর্থাৎ ইন্দুরকানী উপজেলাকে পিরোজপুর-২ আসন থেকে সরিয়ে পিরোজপুর-১ আসনে এবং নেছারাবাদ উপজেলাকে পিরোজপুর-১ আসন থেকে পিরোজপুর-২ আসনে যুক্ত করা হয়েছে।
আসন দুটির সীমানা পরিবর্তনে এলাকায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কেউ কেউ এই পরিবর্তনের পক্ষে, আবার কেউ কেউ উন্নয়নের অগ্রগতি থেমে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন। বিশেষ করে পিরোজপুর -২ এই আসনটিতে আগে আওয়ামী লীগ বা বিএনপি দুটি দলের হাইকমান্ড কেউই গুরুত্ব দিত না। অধিকাংশ সময়ই এ আসনে দুই দলের জোটের প্রার্থীদের মনোনয়ন দেয়া হত। কিন্তু আসন বিন্যাসের পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বড় দুই দলের নেতা কর্মীরা তাদের পছন্দের প্রার্থীদের নাম দিয়ে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছে। কারণ এই দুই দলের কাছে আগামী সংসদ নির্বাচনে এই আসনটির গুরুত্ব বেড়ে গেছে।দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে পিরোজপুর-২ আসনের সীমানা পরিবর্তন আনায় নানা আলোচনা শুরু হয়েছে। এই আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের শরিক জাতীয় পার্টির (জেপি) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জুও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারেন এই বলে ধারণা করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।
পিরোজপুর-২ আসনে কাউখালী, ভান্ডারিয়া ও নেছারাবাদ উপজেলা নিয়ে গঠিত হওয়ায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাকর্মীদের ভিতরে আগ্রহ দেখা দিলেও। ইন্দুরকানি উপজেলা বাদ দিয়ে এখানে নেছারাবাদকে যুক্ত করায় নাখোশ এ আসনের সংসদ সদস্য ও জাতীয় পার্টির (জেপি) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। কারণ, ইন্দুরকানিতে জাতীয় পার্টির জেপির শক্ত অবস্থান ছিল আর নেছারাবাদ উপজেলায় জেপির সাংগঠনিক দুর্বলতা রয়েছে বলে জানিয়েছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।
ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় সংসদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগে নেতা পিরোজপুর-২ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী ইসহাক আলী খান পান্নার সাথে কথা বললে তিনি জানান, নেছারাবাদ উপজেলা পিরোজপুর-২ আসনে যুক্ত হওয়ায় আওয়ামী লীগের জন্য ভালো হয়েছে। কারণ এ উপজেলায় রয়েছে আওয়ামী লীগের ভোট ব্যাংক। যা অন্য দুই উপজেলার কাছাকাছি। তাই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিজয় সুনিশ্চিত।কাউখালী প্রেসক্লাবের সভাপতি রিয়াদ মাহমুদ সিকদার বলেন, বর্তমানে এই আসন বিন্যাসের কারণে কাউখালী উপজেলার ৫৯ হাজার ভোটারদের গুরুত্ব বাড়বে কারণ নেছারাবাদ ও ভান্ডারিয়া দুই বড় উপজেলার ভোটের পরিসংখ্যান কিছুটা কাছাকাছি এ কারণে কাউখালী উপজেলার ভোটাররা যেদিকে যাবে সেদিকে বিজয়ের পাল্লা ভারী হবে। বিএনপি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পিরোজপুর-২ আসনে দলটির শক্তিশালী প্রার্থী ছিলো না। জোটের শরিক লেবার পার্টিকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল।কাউখালী উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক এস, এম আহসান কবির বলেন, কাউখালী উপজেলা বিএনপির অধ্যুষিত ঘাটি আমি এই উপজেলা থেকে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে দুই দুইবার উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছি।বর্তমানে বিএনপির এ আসনের সীমানা পরিবর্তন নিয়ে কোন আগ্রহ নেই। এখন আমাদের একটাই লক্ষ্য নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন।কাউখালী উপজেলা জাতীয় পার্টির জেপির সাধারণ সম্পাদক মনজুরুল মাহফুজ পায়েল বলেন, আনোয়ার হোসেন মঞ্জু দক্ষিণ অঞ্চলের ব্যাপক উন্নয়ন করেছে তাই সে যেখানেই থেকে নির্বাচন করুক না কেন তার বিজয় সুনিশ্চিত। তবে ভোটের কয়েক মাস আগে ইসির এ ধরনের সিদ্ধান্ত আমাদের হতাশ করেছে।পিরোজপুর-২ আসনের কিছু সাধারণ ভোটারদের সাথে কথা বললে অধিকাংশ ভোটার মনে করেন, নতুন সীমানায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে পিরোজপুর-২ আসনের আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর জন্য নেছারাবাদ উপজেলার ভোট তাঁর পক্ষে টানা কষ্টসাধ্য হবে। তবে জোটবদ্ধ নির্বাচন হলে তিনি সুবিধাজনক অবস্থানে থাকবেন।
প্রকাশক ও সম্পাদক মোঃ গোলাম মাওলা শাওন ০১৭১১-০০৬২১৪, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক 01762119992, প্রধান কার্যালয় ৩৪ নুরজাহান শরীফ প্লাজা ৮ম তলা, পুরানা পল্টন ঢাকা ১০০০। ০১৯৯৯-৯৫৩৯৭০ নিউজ ই-মেইল [email protected] সিভি পাঠান: [email protected]