মামুন হোসেন নিজস্ব প্রতিবেদক :
ডিজিটাল সভ্যতার দেশে আজ যেনো মানবতা হারিয়ে যাচ্ছে। মনুষ্যত্ববোধ এতটাই নিচে নেমে গেছে যে সন্তান হয়েও বাবাকে রাস্তায় ফেলে যেতে মায়া দেখাচ্ছে না। গত ১০ মার্চ নিজ জন্মদাতা এক অসহায় অসুস্থ্য পিতাকে রাস্তায় ফেলে রেখে গেছে তার একমাত্র সন্তান। ওই বৃদ্ধ আব্দুল মন্নান হাওলাদার (৭০) এর অসহায়ের চিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসজুকে উঠে আসলে উপজেলা জুড়ে মানুষের মধ্যে মায়া ও মমতাবোধ নিয়ে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে ভুক্তভোগী আব্দুল মন্নান হাওলাদার কেঁদে কেঁদে বলেন, তার বাড়ি ভা-ারিয়া উপজেলার পাশবর্তি ঝালকাঠী জেলার রাজাপুর উপজেলার গালুয়া ইউনিয়নের দুর্গাপুর গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের মৃত হাফেজ উদ্দিন হাওলাদারের ছেলে। গত তিন বছর যাবত তিনি স্ট্রোক জনিত রোগে আক্রান্ত এবং গত দুই সপ্তাহ ধরে অসুস্থ্যতা একটু বেড়ে যাওয়ায় বিছানাতেই থাকতে হয় তাকে।
কিন্তু গত ১০ মার্চ সন্ধ্যায় ছেলে ইলিয়াস হাওলাদার (৩০) বাবাকে চিকিৎসা দেয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের করে আনে। এরপর পাষন্ড ছেলে বাবা আব্দুল মন্নানকে পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া উপজেলার পৌর শহরের রির্জাভ পুকুর পাড় এলাকায় রাস্তার পাশে পরিত্যক্ত জায়গায় ফেলে রেখে চলে যায়। চলে যাবার সময় ছেলে বাবাকে বলে, বাবা তুমি এখানে এক রাত থাকো, কাল এসে তোমাকে নিয়ে যাবো এবং চিকিৎসা করাবো। বাবা ছেলের কথায় বিশ্বাস করে সেখানেই শুয়ে থাকে। রাতে পর রাত যায় কিন্তু ছেলের কোন দেখা নেই। আব্দুল মন্নান আরো জানান, দুই ছেলে মেয়ে স্ত্রী নিয়ে তার সংসার ভালই চলতো। মেয়েকে বিয়ে দেয়ার পর তার শরীরে বাসা বাঁধে স্ট্রোক জনিত রোগ সহ নানান ব্যধি ।
এতে সংসারে নেমে আসে চরম অভাব অনাটন। এ কারণে গত ৩ বছর আগে ছেলে রেখে স্ত্রী বকুল বেগম তার বাবার বাড়ি চলে যায়। অসহায় মন্নান বলেন, আমার বাড়ি ঘর জমি আছে। কিন্তু আজ আমি বড় অসহায়, হাটতে পাড়িনা। এখানে পড়ে থাকলে আমি ধুকে ধুকে মরে যাবো। আমি বাড়ি থাকলে ছেলের কষ্ট হয় এবং সম্মান নষ্ট হয় তাই তাকে রাস্তায় ফেলে গেছে।
তিনি এই মহুর্তে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়ে চিকিৎসার জন্য আকুতি জানান। স্থানীয়রা জানায়, বিষয়টা খুবই দুঃখ জনক, একটা ছেলে বাবাকে রাতের আধারে পরিত্যক্ত জায়গায় ফেলে যেতে পারে এটা কল্পনাও করা যায় না। ওই বৃদ্ধকে গভীর রাতে একা পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয়রা ও পথচারীরা খাবার দিয়ে যাচ্ছে। স্থানীয়রা এ ঘটনায় অসহায় বদ্ধকে সহযোগীতার জন্য প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্শন কামনা করেন।