মোঃ নুরনবী ইসলাম, খানসামা (দিনাজপুর) প্রতিনিধিঃ দিনাজপুরের খানসামা উপজেলায় লিচু গাছের পাতার ফাঁকে উঁকি দিতে শুরু করেছে সোনালি রঙের মুকুল। বোম্বাই, বেদানা, মাদ্রাজি, চায়না থ্রিসহ বিভিন্ন জাতের মুকুলে ছেয়ে গেছে লিচুবাগান। এতে ভালো ফলনের আশা করছেন লিচু চাষিরা। গত বছর প্রচুর বৃষ্টিপাত ও রাতের তাপমাত্রা বেশি থাকায় আশানুরূপ ফলন হয়নি। এবার শীতের শেষে বৃষ্টি হওয়ায় লিচুর জন্য ভালো হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ফলন ভালো হবে, গত বছরের ক্ষতি পুষিয়ে লাভের আশা করছেন চাষিরা।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, খানসামা উপজেলার ভাবকি, গুলিয়ারা, আগ্রা, কাচিনীয়া, রামনগর, মারগাঁও, কুমড়িয়া, হাসিমপুর, পাকেরহাট, বালাপাড়া, ডাঙ্গাপাড়া, আঙ্গারপাড়া, সুবর্ণখুলী গ্রামে সবচেয়ে বেশি লিচু চাষ হয়েছে। লিচু চাষের জন্য উপযোগী বেলে-দোআঁশ মাটি হওয়ায় এসব এলাকায় লিচু চাষে কৃষকের আগ্রহ বাড়ছে দিন দিন। এ অঞ্চলে ফাল্গুনের শেষ পর্যন্ত লিচুর মুকুল আসার সময়। তবে এবার দুই সপ্তাহ আগেই লিচুগাছে মুকুল এসেছে। মুকুল আসার শেষ মুহূর্তে গাছের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। গাছভর্তি মুকুলের সমারোহ। মুকুল যেন ঝরে না যায়, সে জন্য সেচ ও কীটনাশক দেওয়া হচ্ছে। মুকুল থেকে মধু সংগ্রহে ব্যস্ত মৌমাছিও।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এবছর উপজেলাজুড়ে ১৮০ হেক্টর জমিতে লিচুর চাষ হয়েছে। এর মধ্যে বসতবাড়িতেই ২০ হেক্টর জমি জুড়ে রয়েছে বিচ্ছিন্নভাবে লিচুর বাগান। গত বছর হেক্টর প্রতি লিচুর ফলন ছিল ৫.৫ মেট্রিক টন। তবে এবছর ভাল মুকুল ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ফলনও বেশি আশা করা যাচ্ছে।
খামারপাড়া ইউনিয়নের ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের লিচুচাষী তাজ ফারাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ১৫ বিঘা জমির উপর তাঁর ৪০০ টি লিচু গাছ রয়েছে। এক বছরের জন্য তিনি ৮ লাখ ৭০ হাজার টাকায় লিজ দিয়েছেন। মুকুল ভাল আসায় এ বছর অন্যান্য বছরের তুলনায় দাম ভাল পেয়েছেন বলে জানান তিনি।
চকসাকোয়া গ্রামের লিচু ব্যবসায়ী জহির উদ্দীন বলেন, গত বছর দুটি বাগান লিজ নিয়ে লোকসান হয়েছিল। তবে এবছর বাগানে ভাল মুকুল দেখে তিনটি বাগান দেড় লাখ টাকায় লিজ নিয়েছি। ফলন আশানুরূপ হলে বাগান প্রতি ৩/৪ লাখ টাকার লিচু বিক্রি করা যাবে।
হকেরহাটের লিচুচাষি সাজু ইসলাম বলেন, ১৭৫০ টি গাছের বেশ কয়রকটি লিচুবাগান লিজ নিয়েছেন তিনি। গত বছর ৩০ শতাংশ গাছে মুকুলই ছিল না। ফলে বড় অঙ্কের লোকসান গুনেছেন। এবার প্রায় সব গাছে আশানুরূপ মুকুল এসেছে। যদিও গুটি আসা শুরু হয়নি। তবে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ৫০ লাখ পিস লিচু পাওয়া যেতে পারে, যার আনুমানিক বাজারমূল্য প্রায় ৭৫ লাখ টাকা। তিনি আরো বলেন, যে পরিমাণ মুকুল দেখা যাচ্ছে তাতে ফলন ভালো হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এবার বৃষ্টি হওয়ায় প্রথম দিকে সেচ দিতে হয়নি। দ্বিতীয় দফায় কীটনাশক ও সেচ দেওয়ার কাজ চলছে। ইতিমধ্যে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও সিলেটের ব্যাপারীরা মুঠোফোনে যোগাযোগ শুরু করেছেন। রমজান শেষে লিচু আসবে, তাই বাজার ভালো যাওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বাসুদেব রায় বলেন, এবার প্রায় সব গাছে মুকুল এসেছে। ইতিমধ্যে ৩০ শতাংশ গাছের মুকুলে গুটি বের হতে শুরু করেছে। গত বছর প্রতি হেক্টর জমিতে ৫ দশমিক ৫ মেট্রিক টন লিচু উৎপাদন হয়েছিল। তবে এবার ফলন ভালো হওয়ার সম্ভাবনা থাকায় লাভের অঙ্কটা বাড়বে। কৃষি বিভাগ বাগান পরিচর্যার পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না থাকলে এবার লিচুর বাম্পার ফলন হবে।
প্রকাশক ও সম্পাদক মোঃ গোলাম মাওলা শাওন ০১৭১১-০০৬২১৪,ব্যবস্থাপনা সম্পাদক 01762119992, প্রধান কার্যালয় ৩৪ নুরজাহান শরীফ প্লাজা ৮ম তলা, পুরানা পল্টন ঢাকা ১০০০। ০১৯৯৯-৯৫৩৯৭০ নিউজ ই-মেইল [email protected] সিভি পাঠান: [email protected]
দৈনিক বাংলার আলো নিউজ জিএমএস বাংলার আলো গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান।