স্টাফ রিপোর্টার
ভোলার বোরহানউদ্দিনে গভীর রাতে ঘরের দরজা ভেঙ্গে ঘরে ঢুকে গৃহ কর্তাকে মারধর, গৃহবধূর শ্লীলতাহানির চেষ্টা, শিশু নির্যাতন ও চাঁদা দাবীর অভিযোগ উঠেছে বোরহানউদ্দিন থানার দুই পুলিশের বিরুদ্ধে। এঘটনায় মারাত্মক আহত গৃহকর্তা সুজন (৩৩) কে ভোলা ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) গভীর রাতে বোরহানউদ্দিনের টবগী ইউনিয়নের মুলাইপত্তন গ্রামের চৌকিদার বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।
আহত সুজনের স্ত্রী রাবেয়া ও স্থানীয় জাহাঙ্গীর জানায়, বুধবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে সুজন তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে রাতের খাবার খাচ্ছিলো। এ সময় সম্পুর্ন সিভিল ড্রেসে হঠাৎ ঘরের পিছনের দরজায় লাথি মেরে দরজা ভেঙ্গে ঘরে ঢোকে এসআই ইলিয়াছ ও এএসআই মঞ্জুর আলম। খাবার রেখে রাবেয়া এগিয়ে আসলেই রাবেয়াকে টানাহেচড়া করে বিবস্র করার চেষ্টা করে। তার শরীরে এলোপাতারি কিল ঘুষি মারতে থাকে। তা দেখে ছোট তিন শিশু সন্তান মায়ের কাছে আসতে চাইলে তাদেরকে চর থাপ্পর মেরে নির্যাতন করে। স্বামী সুজন বাঁধা দিলে সুজনকে তারা বেধরক মারধর করে গলায় পা দিয়ে চেপে ধরে এতে সুজন জ্ঞান হাড়িয়ে ফেলে।
এসময় রাবেয়া তার স্বামীকে ছেড়ে দিতে অনুনয় বিনয় করলে পুলিশ তাদের কাছে ৫ লাখ টাকা দাবী করে। টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করায় তারা সুজনকে টানা হেঁচড়া করে রাস্তায় নিয়ে যাওয়া চেষ্টা করে। তাদের কান্নাকাটি এবং ডাক চিৎকারে স্থানীয় ব্যবসায়ী সুমন ঘটনাস্থলে এসে সিভিল ড্রেসে থাকা এসআই ইলিয়াছ ও এএসআই মঞ্জুর হাসানকে চিনতে পারে।
এরমধ্যেই স্থানীয় লোকজন এসে তাদেরকে ঘিরে ফেলে। পরে তারা পকেট থেকে কার্ড দেখিয়ে পুলিশের পরিচয় দেয়। খবর পেয়ে স্থানীয় চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন হাওলাদার ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন করে। এসময় এসআই ইলিয়াস ও এএসআই মঞ্জুর ক্ষমা চেয়ে তাদের ভুল স্বীকার করেন। তারা এই এলাকায় ওয়ারেন্ট ভুক্ত আসামী ধরতে এসে ভুলক্রমে সুজনের বাড়ি ঢুকে পরে বলে জানায়। এদিকে আহত সুজনের অবস্থা খারাপ দেখে চেয়ারম্যান স্থানীয় ডাক্তার দ্বারা তার চিকিৎসা শুরু করে। এতে অবস্থার উন্নতি না হলে বৃহস্পতিবার দুপুরে সুজনকে ভোলা ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে তিনি অর্থোপেডিকস ওয়ার্ড এর ৫১ নাম্বার বেডে চিকিৎসাধীন আছেন।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত এসআই ইলিয়াস ও এএসআই মঞ্জুর এর মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে ফোন কল রিসিভ না করায় তাদের বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে উক্ত ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন হাওলাদার বলেন, আমি ঘটনা শুনে দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করি এবং সুজন অসুস্থ দেখে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করি।
এ বিষয়ে বোরহানউদ্দিন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনির হোসেন মিয়া’র কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওই ঘরে ওয়ারেন্ট ভুক্ত দুজন আসামী ছিলেন বলে তাদের কাছে তথ্য ছিল। দরজা খুলতে বললে তারা দরজা না খুলে আসামিদের পালিয়ে যেতে সাহায্য করে। এ কারণে দরজা ভেঙ্গে ভিতরে ঢুকে এবং তাদের সাথে বাক বিতন্ডা হয়। এক পর্যায়ে এলাকার লোকজন চলে আসে এবং মেম্বার চেয়ারম্যান এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এ বিষয়ে টগবী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন হাওলাদারের মুঠোফোন একাধিকবার কল দিয়ে ও তাকে পাওয়া যায়নি।
ভোলা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান এর কাছে ঘটনাটি জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি আমরা শুনেছি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ ঘটনার তদন্তের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (লালমোহন সার্কেল) এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পুলিশ সুপার মহোদয় বিষয়টি আমাকে তদন্ত করার জন্য নির্দেশ দিয়েছে। আমি তদন্ত করে খুব শীঘ্রই এ বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিল করব।
ভোলা জেলা পুলিশ সুপার মাহিদুজ্জামানের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঘটনাটি আমরা শুনেছি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন আসলে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।