স্টাফ রিপোর্টার:
সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের পাটলাই নদীতে চলছে রমরমা চাঁদাবাজি। উপজেলার বালিজুরী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজাদ হোসেনের সন্ত্রাসী বাহিনী খাসকালেকশন নামে এ চাঁদাবাজি করছে। বিআইডব্লিউটিএ ও মহামান্য হাইকোর্টের স্তিথাবস্থ অগ্রাহ্য করে দফায় দফায় টোল বলে এ চাঁদাবাজিতে আদায়ে অতিষ্ঠ উপজেলার বড়ছড়া, চারাগাঁও ও বাগলী শুল্কস্টেশনের কয়লা ও চুনাপাথর ব্যবসায়ীরা।
সক্রিয় চাদাবাজ সন্ত্রাসীদের হাত থেকে রেক্ষা পেতে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসকসহ দায়িত্বশীল বিভিন্নমহলে আবেদন করে কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা। সম্প্রতি তাহিরপুর কয়লা ও চুনাপাথর আমদানিকারক গ্রুপের পক্ষে সভাপতি হাজী মোঃ আলকাছ উদ্দিন খন্দকার এ আবেদন করেন। প্রতিকার না পাওয়ায় তাহিরপুর কয়লা আমদানিকারক গ্রুপের সিদ্ধান্তে কয়লা-চুনাপাথর বিক্রি ও পরিবহণ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রয়েছে।
জানা যায়, দেশের উত্তর পুর্বাঞ্চলের বৃহৎ তিনটি তাহিরপুরের বড়ছড়া, চারাগাঁও ও বাগলী। এ তিনটি শুল্ক স্টেশন দিয়ে আমদানিকারকগণ ভারত থেকে কয়লা ও চুনাপাথর আমদানি করে দেশের সিংহভাগ চাহিদা পুরণ করে থাকেন। পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় কোষাগারেও প্রতিবছর শতকোটি টাকারও উপরে প্রদান করে আসছেন তারা।
এ তিন শুল্ক স্টেশন দিয়ে আমদানী করা পন্যগুলো একমাত্র নৌ-পথেই দেশের বিভিন্ন স্থানে পরিবেশন করতে হয় তাদের।
অভিযোগে প্রকাশ,গত কয়েক মাস ধরে তাহিরপুর উপজেলার শ্রীপুর উত্তর ইউনিয়নের পাটলাই নদীর ডাম্পের বাজার ও শ্রীপুর বাজার (মন্দিয়াতা) এই দুটি স্থানে কোর্টগারী খাস-কালেকশন এবং বিআইডব্লিউটিএ’র নামে নৌকা শ্রমিক ও ব্যবসায়ীগনের কাছ থেকে বেপরোয়া চাঁদাবাজি করে আসছে চেয়ারম্যান আজাদ গ্রুপ।
অভিযোগে প্রকাশ,গত কয়েক মাস ধরে তাহিরপুর উপজেলার শ্রীপুর উত্তর ইউনিয়নের পাটলাই নদীর ডাম্পের বাজার ও শ্রীপুর বাজার (মন্দিয়াতা) এই দুটি স্থানে কোর্টগারী খাস-কালেকশন এবং বিআইডব্লিউটিএ’র নামে নৌকা শ্রমিক ও ব্যবসায়ীগনের কাছ থেকে বেপরোয়া চাঁদাবাজি করে আসছে চেয়ারম্যান আজাদ গ্রুপ।
তারা কয়লা ও চুনাপাথর বহনকারী প্রতিটি নৌকা থেকে কোর্টগারী (খাস-কালেকশন) নামে কোনো প্রকার রসিদ ছাড়াই প্রত্যক নৌকা থেকে ১০ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা করে এবং বিআইডব্লিউটিএ’ নামে ২০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা করে চাঁদা আদায় করছে। বে আইনী এ চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে কিংবা চাঁদার বিপরীতে রসিদ চাইলে তারা বলে কোন চাঁদা দিতে অপরগতা প্রকাশ করলে তারা শ্রমিকদের উপর চড়াও হয়ে শারীরিক নির্যাতন করে থাকে। চেয়ারম্যান আজাদের পক্ষে চাঁদা আদায়ে সমগ্র বিষয় পরিচালনা করেন এলাকার জৈনিক মিলন তালুকদার।
এ কারণে এই এলাকায় কয়লা ও চুনাপাথর বহণকারী নৌকাগুলো প্রবেশ করতে চায় না। এতে করে আমদানিকারক গণ তাদের আমদানি করা পণ্যগুলো দেশের বিভিন্ন স্থানে পরিবেশন করতে পারছেন না। ফলে কয়লা ও চুনাপাথর ক্রেতাগণ এ এলাকার উল্লেখিত তিনটি শুল্ক স্টেশন হথেকে কয়লা ও চুনাপাথর ক্রয় করতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। এ অবস্থায় এই তিন শুল্ক স্টেশন দিয়ে কয়লা ও চুনাপাথর আমদানি স্থবির হয়ে পড়েছে। বড় অঙ্কের রাজস্ব প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।
অভিযোগে জানা যায়, তাহিরপুরের পাটলাই নদীতে বিআইডব্লিউটিএ’র অনুমোদিত গণ্য উঠানো-নামানোর কোন ঘাটই নেই। সন্ত্রাসীরা চলন্ত নৌকা থেকে জোর-র্বক চাঁদা আদায় করে চলেছে। যা বিআইডব্লিউটিএ’র নিয়ম বহির্ভূত।
আমদানিকৃত কয়লা ও চুনাপাথর পরিবহনের সুবিধার্থে এবং নিরাপদ চলাচলের সুবিধার্থে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রশাসনের দৃষ্টি কামনা করেন আমদানীকারকসহ নৌ শ্রমিকরা।
আমদানিকৃত কয়লা ও চুনাপাথর পরিবহনের সুবিধার্থে এবং নিরাপদ চলাচলের সুবিধার্থে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রশাসনের দৃষ্টি কামনা করেন আমদানীকারকসহ নৌ শ্রমিকরা।
এ বিষয়ে কয়লা আমদানিকারক সমিতির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আবুল খায়ের বলেন, ব্যবসায়ীদের পিঠ এখন দেয়ালে ঠেকে গেছে। টোল আদায়ের নামে দফায় দফায় চাঁদাবাজির কারনে অতিরিক্ত টাকা গুনতে হয় বিধায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত হতে ব্যবসায়ীরা আমাদের এলাকায় আসতে চাচ্ছেন না। মাল পরিবহণকারী নৌকাও আসছে না। এ জন্য আমাদের ব্যবসার ধস নেমেছে। উপায় না পেয়ে ব্যবসায়ীরা ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
ব্যবসায়ীরা জেলা প্রশাসকসহ প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করলেও কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না। তাই ব্যবসাীয়রা অনির্দিষ্টকালের জন্য এ ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন।
এ ব্যাপারে স্থানীয় ডিহিবাটি ভূীম অফিসের তহশিলদার রুহুল আমিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নির্ধারিত হারে রসিদ দিয়ে টোল আদায় হওয়ার কথাা। কিন্তু আমার জনবল কম থাকায় আমি অফিসের কাজ রেখে যেতে পারি না,যারা টোল আদায়ের দায়িত্বে আছে তারা অতিরিক্ত টোল আদায় করলে এসিল্যান্ড স্যারের কাছে অভিযোগ করতে হবে।
এ ব্যাপারে বক্তব্য নিতে বিআইডব্লিউটিএ’র ইজারদার মেসার্স সোহাগ এন্টারপ্রাইজের মালিক রতন মিয়ার মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি সাংবাদিক কের মোবাইল ফোন রিসিভ করেননি।
তবে তার অফিসের সহকারী রুবেল মিয়ার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা অতিরিক্ত টোল আদায় করছি না। আমরা নিয়ম অনুযায়ী টোল আদায় করছি। গত ২৯ আগস্ট কয়লা পরিবহনকারী দিদারে আলম এর নৌ-পরিবহন থেকে অতিরিক্ত হারে ২৪হাজার টাকা টোল আদায়ের রশিদে মালের পরিমান কলামে ভারতীয় কয়লা লেখা রয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোনো বক্তব্য না দিয়েই মোবাইল ফোন কেটে দেন।
এ বিষয়ে তাহিরপুর থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ইফতেখার হোসেন জানান, বেকআইনী চাঁদা বন্ধে এলাকায় পুলিশ পাঠানো হয়েছে। চাঁদাবাজি বন্ধে পুলিশ চেষ্টা করছে। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া গেলে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুপ্রভাত চাকমা বলেন, পাটলাই নদীতে খাসকালেকশন বিষয়ে তিনি অবগত নন। তবে খোঁজ নিয়ে দেখছেন বলে জানান তিনি।
এদিকে চেয়ারম্যান আজাদের লোক মিলন তালুকদার খাসকালেকশন আদায়ের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন নদীটি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছ ইজারা নেওয়া হয়েছে।
উপজেলার বালিজুরী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজাদ হোসেনের সাথে মুঠোফনে একাধিকবার যোগাযোগে চেষ্টা করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।