পিরোজপুর প্রতিনিধি : কালের বিবর্তমানে কঁচা, পোনা ও বলেশ্বর নদ-নদীতে ঝাঁকি জাল দিয়ে মাছ শিকারের দৃশ্য এখন প্রায় বিলুপ্তি। পিরোজপুর জেলায় বেশ কিছু অঞ্চলে বর্ষাকালে ঝাঁকি জালের মাধ্যমে মাছ শিকার করতে দেখা যেত। কিন্তু বর্তমানে এ জেলার কঁচা, পোনা ও বলেশ্বর নদী সহ বাংলাদেশের অনেক স্থানে জালের ব্যবহার প্রচুর কমে যাচ্ছে। এর মূল কারণ বর্তমানে এই জাল ব্যবহার করে অতীতের মত যথেষ্ট মাছ ধরা সম্ভব হচ্ছেনা। তাই জালের ব্যবহার বিলুপ্তির পথে।
শনিবার জানা যায়, জাল বাংলাদেশের প্রাচীন মাছ ধরার কৌশল। তার মধ্যে ঝাঁকি জাল অন্যতম। ঝাঁকি জালের উপরের প্রান্তে সরু রশি বাঁধা (৪/৫ হাত) থাকে। জালের নিচের দিকে লোহার ছোট ছোট কাঠি যুক্ত করা হয়। যাতে পানিতে জাল ফেললে তাড়া তাড়ি ডুবে যেতে পারে এবং কোন ভাবে মাছ পালাতে না পাড়ে। মাছ ধরার সময় খাল, পুকুর বা নদীর তীর থেকে রশিটি হাতে রেখে জাল পানিতে ছুড়ে মারা হয়। পরে রশি ধরে টেনে জাল তোলা হয়। জালের নিচে অনেক ধরনের মাছ আটকা পড়ে। তার মধ্যে পুঁটি, চিংড়ি, রামসোস, পোমা, ফাইলশা, কার্প ও নল মাছ বেশি ধরা পড়ে।
স্থানীয় কৃষক হাবিব হাওলাদার জানান, এই জালে আগের মত মাছ উঠছে না বিধায় ব্যবহার কমে যাচ্ছে। স্থানীয় জেলে মোতালেফ জানান, সারাদিন জাল দিয়ে মাছ ধরলে দুই থেকে তিনশত টাকার মাছ অর্জন হয়। এই কারণে এই জালের ব্যবহার বিলুপ্তির পথে।
একাধীক মৎস্যজীবী সহ অপর জেলে আব্দুল হাকিম জানান, প্রাকৃতিক বিপর্যয়, কারেন্ট জালের অবৈধ ব্যবহার, ফসলি জমিতে অপরিকল্পিত কীটনাশক ব্যবহার, জলাশয় দূষণ, নদ-নদীর নব্যতা হ্রাস, উজানে বাঁধ নির্মাণ, নদী সংশ্লিষ্ট খাল-বিলের গভীরতা কমে যাওয়া, ডোবা ও জলাশয় ভরাট করা, মা মাছের আবাসস্থলের অভাব, ডিম ছাড়ার আগেই মা মাছ ধরে ফেলা, ডোবা-নালা-পুকুর- বিল ছেঁকে মাছ ধরা, বিদেশি রাক্ষুসে মাছের চাষ ও মাছের প্রজননে ব্যাঘাত ঘটানো। এসব কারনে ৫০ টির বেশি দেশি প্রজাতির মাছ হারিয়ে যেতে বসেছে। এসব কারন-ই ঝাঁকি জাল দিয়ে মাছ শিকার বিলুপ্তির পথে।