মঠবাড়িয়া (পিরোজপুর) সংবাদদাতা:
পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় থানার টহল পুলিশের উদ্ধার হওয়া প্রায় তিন মন হরিণের মাংসের নাম মাত্র এতিমখানায় বিলি করলেও বাকী মাংশ কোথায় তা নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে? শুধু তাই নয় মাংস পাচারকারী সদস্য ও বহনকারী ইজিবাইক ও গাড়ি চালককে আটক না করায় এলাকায় বিরুপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
স্থানীয়দের ধারণা পুলিশ জব্দ করা মাংস ওই গভীর রাতে শহরের একটি এতিম খানায় দিয়ে বাকী মাংসগুলো নিজেরা ভাগ-ভাটোয়া করে নিয়েছে এবং মোটা অর্থের বিনিময় জড়িতদের ছেড়ে দিয়েছে। যদিও থানা পুলিশ এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
জানা গেছে, আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রন ও নিয়মিত মাদক উদ্ধারের অভিযানের অংশ হিসেবে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালায় পুলিশ।
এর ধারাবাহিকতায় গত ২২ জুলাই শনিবার রাতে তিন উপজেলা মঠবাড়িয়া-ভান্ডারিয়া ও কাঠালিয়ার সীমান্তবর্তী মঠবাড়িয়া উপজেলার ভগিররপুর বাজারে সিংখালী ব্রীজ সংলগ্ন টহল পুলিশের দায়িত্বে থাকা মঠবাড়িয়া থানার এসআই আমীর হোসেন চেকপোষ্ট বসান। ওই রাত ১১ টার সময় টহল পুলিশ একটি মটর সাইকেলসহ জেরিন নামে এক যুবককে ইয়াবাসহ আটক করে। খবর শুনে বাজারের চা দোকানী এমাদুল হক, মটর মেকানিক রাব্বি, গ্রাম্য ডাক্তার আনোয়ার, সোহেল জমাদ্দার, স্কুল ছাত্র রায়হানসহ স্থানীয় অনেক লোক ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। এর মধ্যে উপস্থিত কয়েকজনকে মাদক উদ্ধারের স্বাক্ষীও করে পুলিশ।
প্রতক্ষদর্শীরা জানান, পুলিশের এ অভিযান শেষ হতে না হতেই একটি ইজিবাইক এসে হঠাৎ ঘটনাস্থলে আকস্মিক উপস্থিত হয়। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে বেশ কয়েকজন ইজিবাইকের যাত্রী পালিয়ে যায়। চালকসহ ইজিবাইকটি তল্লাসী করে পুলিশ। দুটি বস্তা দেখতে পেয়ে স্থানীয়দের সহযোগিতায় ইজিবাইক থেকে নামিয়ে বস্তা খুলে হারিণের মাংস দেখতে পান।ওই রাতেই স্থানীয়রা পরে ওই বস্তা ভর্তি মাংস পুলিশের গাড়ীতে তুলে দেন।
উপস্থিত লোকজন জানান, গাড়ি চালকের বাড়ি পাশর্^বর্তী ভান্ডারিয়া থানার সিংহখালী গ্রামে। ওই রাতেই তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। তবে তার নাম স্থানীয়রা বলতে পারেনি। প্রতিটি মাংস ভর্তি বস্তা গাড়ীতে ওঠাতে ২/৩ জন লেগেছে। পরবর্তিতে মাংসগুলো এবং ইজি বাইকটির কি করেছেন, তাদের সেটা জানে না বলে স্থানীয়রা জানান।
ভগিররপুর পুলিশ ফাড়ির ইনচার্জ এসআই আব্দুল মান্নান জানান, ওই রাতে তিনি ৬ কিলোমিটার দুরে মিরুখালী বাজারে টহলে ছিলেন। পরের দিন রোববার সকালে ফাড়িতে এলে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মুখে জানতে পেরেছেন রাতে থানা পুলিশের হরিনের মাংস জব্দের কথা। এর বেশি কিছু জানেন না বলে তিনি জানান।
মঠবাড়িয়া থানার এসআই আমীর হোসেন হরিণের মাংস জব্দ করার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, পুলিশের বিরুদ্ধে মাংস ভাগ ভাটোয়ারা অভিযোগ সত্য নয়। তিনি বলেন ওই মাংস গভীর রাতেই পৌর শহরের বহেরাতলা জয়নুল আবেদীন হেফজখানায় (এতিম খানা) দেয়া হয়েছে। তিনি মাংসের পরিমানের কথা উল্লেখ না করলেও ২ টি বস্তার কথা স্বীকার করেন।
শহরের বহেরাতলা আলহাজ¦ জয়নুল আবেদীন হাফেজী মাদ্রাসা ও এতিম খানা এবং লিল্লাহ বোডিংয়ের শিক্ষক হাফেজ মোঃ আদম আলী (৫৩) বলেন, ওই দিন গভীর রাতে থানা পুলিশ আনুমানিক ২০/২২ কেজি মাংস দিয়ে ছবি তুলে নিয়ে গেছেন।
থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ কামরুজ্জামান বলেন, পুলিশের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ ভিত্তিহীন। হরিনের মাংস উদ্ধারের পর সাথে সাথে ওই রাতে বহেরাতলা এতিমখানায় দেয়া হয়। মাংস পাচারকারীরা পুলিশি উপস্থিতিতি টের পেয়ে পালিয়ে যাওয়ায় তাদের গেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। তিনি আরও বলেন, ইজিবাইক চালক গবীর হওয়ায় তাকে গাড়ীসহ ছেড়ে দেয়া হয়েছে বলে স্বীকার করেন।