সজীব হাসান, আদমদীঘি (বগুড়া) প্রতিনিধি:
বগুড়ার সান্তাহারে রেল জংশন ষ্টেশনের কৃঞ্চচড়া গাছে আশ্রয় নেয়া বাবুই পাখির কলোকাকলিতে তিন নম্বর প্লাট ফরম এলাকা বিকেল থেকে সন্ধাার পর পর্যন্ত মুখরিত হয়ে উঠে। আশ্রয় নেয়া বাবুই পাখির কলোকাকলি দেখতে উক্ত গাছের নীচে প্রতিদিন ষ্টেশনে অপেক্ষামান ট্রেনযাত্রীসহ এলাকার
শত শত মানুষের ভির জমে।
কালের বিবর্তনে আদমদীঘি উপজেলা সদর ও সান্তাহার পৌর এলাকাসহ আশেপাশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে অতি পরিচিত বাবুই পাখি ও তার বাসা আগেরমত আর চোখে পরেনা। হারিয়ে যেতে বসেছে এই পাখি। মানুষের মুখে মুখে উচ্চারিত হয় কবি রজনীকান্ত সেনের কালজয়ী কবিতা-”বাবুই পাখিরে ডাকি বলিছে চড়াই, কুঁড়ে ঘরে থেকে করো শিল্পের লড়াই’ এই কবিতার কারনেই আজও সকলের মনে নিসর্গে পরিচিত হয়ে আছে সুনন্দ বাবুই পাখি।
সময়ের বিবর্তনে ও পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে আজ হারিয়ে যাচ্ছে শিল্পী, সম্প্রীতি এবং সামাজিক বন্ধনের কারিগর বাবুই পাখি ও তার বাসা। বাড়ির খড়ের চালে তালগাছের পাতায়সহ বিভিন্ন গাছে দলবেধে বাসাবেধে খাকতো। গ্রামবাংলায় এখন আর আগের মতো বাবুই পাখির বাসা চোখে পড়ে না। কালের বিবর্তনে বিলুপ্তির দিকে ধাপিত হচ্ছে বাবুই পাখি। বাবুই পাখি আবহমান বাংলার শোভন পাখি।
এমন সুন্দর চমৎকার নিপুণ কারিগরী বাসা আর কোন পাখি বুনতে পারেনা। তাই বাবুই পাখির শিল্পিত বাসা নিসর্গকে মনোরম করে তোলে। যেমন দৃষ্টিনন্দন তাদের বাসা ঠিক তেমনি মজবুত। প্রবল ঝড় বৃষ্টি-বাতাসেও টিকে থাকে তাদের বাসা। খড়ের ফালি, ধানের পাতা, তালের কচিপাতা, ঝাউ ও কাশবনের লতাপাতা দিয়ে উঁচু তালগাছে চমৎকার আকৃতির বাসা তৈরি করত বাবুই পাখিরা।
একান্নবর্তী পরিবারের মত এক গাছে দলবদ্ধ বাসা বুনে এদের বাস। বাবুই পাখি একাধারে শিল্পী, স্থপতি এবং সামাজিক বন্ধনেরও প্রতিচ্ছবি। শক্ত বুননের এ বাসা টেনেও ছেঁড়া কঠিন। দিনে দিনে উজার হচ্ছে সুপারি,নারিকেল, তালগাছ, আগেরমত গ্রম-গ্রাম-গঞ্জে খড়ের বা মাটির বাড়িঘরেও নেই। ফলে বাসা স্থানের অভাব আর প্রততিকুল আবহাওয়ার কারনে হারিয়ে হচ্ছে এই বাবুই পাখি ও এর বাসা। এদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো “তারা রাতের বেলায় ঘর আলোকিত করার জন্য জোনাকি পোকা ধরে নিয়ে বাসায় রাখে এবং এরা বন-জঙ্গলের চেয়ে লোকালয়ে থাকতে বেশি পছন্দ করে।
এরা সন্ধানামার আগে বাসায় চলে আসে এবং সকাল হলেই বাসা ছেড়ে খাবারে উদ্যেশে বাসা থেকে বের হয়ে বিভিন্ন স্থানে চলে যায়। সাধারণত তাল, খেজুর, নারিকেল, সুপারি ও আখক্ষেতে বাসা বাঁধে। ধান, চাল, গম ও পোকা-মাকড় প্রভৃতি এদের প্রধান খাবার। সম্প্রতি শীতের আগমমনিতে বগুড়ার সান্তাহার রেলওয়ে জংশন স্টেশনের দুই নম্বর প্লাট ফর্মে একটি কৃঞ্চচড়া গাছে প্রতিদিন দেখা মিলছে এক ঝাক বাবুই পাখির। সন্ধা্যা নামার আগে ঝাকে ঝাকে বাবুই পাখি এসে এখানে আশ্রয় নেয়। তাদের কেচর মেচররে এখানে এক অন্যরকম পরিবেশের সৃষ্টি হয়। তাদের কলোকাকলিতে স্বচোখে এক নজর দেখতে ষ্টেশনে অপেক্ষামান ট্রেন যাত্রীসহ এলাকার সর্বশ্রেনী-প্রেসার মানূষ ওইগাছের আশে পাশে দারিয়ে থাকতে দেখা যায়।
এরমধ্যে আবার অনেকে সেলফি ও ছবি তোলার কাজে ব্যাস্ত হয়ে পরেন। পাখি প্রেমি শহরের উপ পৌওতা গ্রামের মেহেদী হাসান বলেন, বর্তমানে যেমন তাল জাতীয় গাছ হারিয়ে যাচ্ছে ঠিক তেমন হারিয়ে যাচ্ছে বাবুই পাখি। আগের মতো তাল গাছ নেই আর বাবুই পাখিও নেই।
সান্তাহার এলকায় সবচেয়ে বড় তালগাছের সাড়ি সাইলো সড়কে বর্তমানে বাবুই পাখি বিলুপ্তির কারনে এসব তালগাছেও আর পাখিগুলোর দেখা মিলেনা। তবে হটাৎ করে সান্তাহার রেল ষ্টেশনের কৃঞ্চচড়ার গাছে বাবুই পাখিআশ্রয় নিয়েছে সেখানে দেখলাম অনেকে এই বাবুই পাখি দেখতে এসেছে।উত্তরাঞ্চলের সর্ববৃহত্তম সান্তাহার রের জংশন ষ্টেশনের আধুনিকায়নের কাজ শেষ হয়েছে সবেমাত্র। ষ্টেশনের ঝক ঝকে আলোর নিচে কৃঞ্চচড়া গাছে আশ্রয় নেয়া বাবুই পাখি দেখে সবাই মুগ্ধ হয়ে ঘরে ফিরছেন।