প্রিন্ট এর তারিখঃ নভেম্বর ১, ২০২৪, ১:১৯ পি.এম || প্রকাশের তারিখঃ সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২২, ১:২২ পি.এম
কৃষকের বন্ধু দাড়াশ সাপ বিলুপ্তি প্রায়।
সাইফুর নিশাদ
নরসিংদী প্রতিনিধিঃ
সাপ দেখলেই বেশিরভাগ মানুষের স্বভাব মেরে ফেলা। তাদের কাছে সাপ মানেই আতংক। সাপ মানেই বিষধর। কিন্তু বাস্তবতা হলো সব সাপই বিষধর নয়। বাংলাদেশে প্রায় ৯০ প্রজাতির সাপ রয়েছে এবং এই সাপের প্রায় তিন চতুর্থাংশ সাপ নির্বিষ যার একটি দাড়াশ সাপ কিন্তু তা মানুষ মানতেই চায়না। তাকে দেখা মাত্রই নিমোকহারাম বলে মারার জন্য ছুটে যায় মানুষ।
তাছাড়া গ্রামাঞ্চলের মানুষের মুখে মুখে দাড়াশ সাপ সম্পর্কে ভুল কিছু ধারনা প্রতিষ্ঠিত। কেননা বর্ষার মৌসুমে সাপের উপদ্রব বাড়লে কাউকে দংশন করিলে আন্দাজেই বলে দেয় দাড়াশ সাপে কেটেছে। গ্রামের মানুষেরা এই সাপকে আবার কালি দাড়াশ নামেও ডাকে যাকে অনেক বিষাক্ত সাপ বলে অভিহিত করে। দাড়াশ সাপ মূলত কৃষি জমিতেই থাকতে বেশি পছন্দ করে। যার ফলে কৃষি জমিতে কাজ করার সময় সাপের দেখা মেললেই তাকে মেরে ফেলে কৃষকরা। দাড়াশ সাপ সম্পর্কে মানুষের কুসংস্কারপূর্ন ধারণার ফলে প্রাণ দিতে হয় কৃষকের বন্ধু হিসেবে খ্যাত নির্বিষ এই সাপকে।
মানুষের ধারণা দাড়াশ একটি বিষাক্ত সাপ। যার কামড়ে মানুষের প্রানহানি ঘটে। দেখতেও ভয়ানক। কিন্তু প্রকৃত বাস্তব হলো দাড়াশ একটি নির্বিষ সাপ যা দেখতেও খুব সুন্দর। এই প্রজাতির সাপেরা ২০০ থেকে সর্বোচ্চ ৩৫০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। এদের গায়ের রঙ হালকা বাদামী, হলুদ বাদামী কিংবা জলপাই বাদামী ও হয়ে থাকে। মাথায় কোন ফনা থাকেনা এবং গোখরা সাপের থেকে বেশ সরু।
এদের সবচেয়ে প্রিয় খাবার ইদূর হওয়ায় বিজ্ঞানিরা এর ইংরেজি নাম দিয়েছে( Rat Snake) কোন কোন এলাকায় এই সাপকে দারাজ সাপ নামেও পরিচিত। এরা গাছ বেয়ে উঠতে বেশ দক্ষ, দ্রুত ছুটতেও পারে। এই সাপ ডজনখানেক আঠালো ডিম পাড়ে যা দুই মাসের মধ্যে বাচ্চা ফুটাতে সক্ষম।
এই সাপ যে জমিতে থাকে তার আশে পাশে প্রায় ৩ একর এলাকা জুড়ে তার বিচারন থাকে। এছাড়াও এই জায়গা গুলো খুজে খুজে ইদুর শিকার করে। যার ফলে ইদুরের কারনে যে ফসল নস্ট হয় তার থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
কৃষি বিভাগের তথ্য মতে প্রতি বছর ইদূর যে পরিমাণ খাদ্যশস্য নষ্ট করে তার আনুমানিক বাজারমূল্য প্রায় ১ হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে ধান ও গমের। কিন্তু ইদুর নিধনের জন্যে দাড়াশ সাপটি যেহেতু পটু সেহেতু এই সাপ রক্ষা করতে পারলে বছরে প্রায় হাজার কোটি টাকার ফসল রক্ষার পাশাপাশি কৃষি বিভাগের যে টাকা ইদুর নিধনে খরচ করে তা রক্ষা সম্ভব। কিন্তু বিভিন্ন ভ্রান্ত ধারনার ফলে মেরে ফেলা হচ্ছে কৃষকের বন্ধু এই দাড়াশ সাপকে। মানুষের ধারণা এই সাপ বিষাক্ত অনেকটা কোবরার মত যার কামড়ে মানুষের প্রানহানি ঘটে।
কিন্তু এই সাপযদি কামড়ও দেয় তবুও আক্রান্ত ব্যাক্তির কোন ক্ষতির সম্ভবনা নেই। অনেকে কোবরার সাথে মিলিয়ে মেরে ফেলে এই সাপকে। সাপ দেখলেই মারতে হবে এমন ধারনা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে আমাদের। দিন দিন এই সাপ কমে যাওয়ার কারন তাদের আবাসস্থল ধ্বংস ও প্রজনন সমস্যা এছাড়াও বর্ষাকালে ক্ষেতে খামারে যখন পানিতে টুইটম্বুর মানুষ যখন মাছ মারার ঝাল, ঠেলা ঝাল কিংবা বরশি পাতে সেসবেও ধরা পরে এ সাপ এভাবেও মারা যায় এই প্রজাতির সাপ।
২য় কারন হলো বিষাক্ত ভেবে প্রচুর পরিমানে মানুষের হাতে মারা পরে এই সাপটি। অনেকের ধারনা যে তার মুখেই শুধু বিষ নয় লেজেও বিষ রয়েছে। মুখের পরিবর্তে লেজ দিয়ে আঘাত করলে স্থানটি ধীরে ধীরে পচে যায়। প্রকৃত পক্ষে এই সাপের বিষ তো নেই-ই বরং নিরীহ। কিন্তু রেগে বা ভয়ে কামড় দিলে ক্ষতির সম্ভাবনা নেই কারন এরা নির্বিষ ও নিরীহ।
এছাড়াও গরুর বান চুষা নিয়ে আজগুবি গল্প শুনা যায় লোক মুখে যে রাতে গাভীর বান চুষে দুধ খেয়ে ফেলে যা ভিত্তিহীন কথা। প্রকৃতপক্ষে সাপের জিহবা বিভক্ত হওয়ায় দুনিয়ার কোন সাপই চুষে কিছুই ক্ষেতে পারেনা। আর এভাবেই প্রান হারাচ্ছে কৃষকের বন্ধু দাড়াশ সাপ। বাস্তবতা হলো এটি নির্বিষ এবং প্রকৃতির জন্যে বিশেষ করে কৃষির জন্যে উপকার। তবু সাপ সম্পর্কে আমাদের দেশের মানুষের অযাচিত ভয় অজ্ঞতার কারণে আমরা এই প্রাণীটিকে দেখলে প্রাণঘাতী মনে করে মেরে ফেলি। কিন্তু উন্নত বিশ্ব সাপকে কাজে লাগাচ্ছে নতুন এক অর্থনৈতিক পণ্য হিসেবে।
প্রকাশক ও সম্পাদক মোঃ গোলাম মাওলা শাওন ০১৭১১-০০৬২১৪, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক 01762119992, প্রধান কার্যালয় ৩৪ নুরজাহান শরীফ প্লাজা ৮ম তলা, পুরানা পল্টন ঢাকা ১০০০। ০১৯৯৯-৯৫৩৯৭০ নিউজ ই-মেইল [email protected] সিভি পাঠান: [email protected]
দৈনিক বাংলার আলো নিউজ জিএমএস বাংলার আলো গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান।