চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি (০১-০৭-২০২২)
আসন্ন পবিত্র কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে জমজমাট হয়ে উঠেছে চুয়াডাঙ্গার পশুহাটগুলো। হাটে বেড়েছে গরু-ছাগলের সংখ্যা এবং বিক্রেতার জনসমাগম। পর্যাপ্ত পরিমাণে পশু ও বিক্রেতার সমাগম থাকলেও ক্রেতা ছিল কম।
হাটে ভিড় করছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত ও পার্শ্ববর্তী জেলা থেকে আসা ক্রেতা-বিক্রেতা ও গরু-ছাগলের দালালরা। তবে হাটে মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি। শুধুমাত্র হাটের সামনে মহাসড়কে পুলিশের টহল দল থাকলেও ভেতরে ছিল না কেউ।
গতকাল বৃহস্পতিবার সরেজমিনে শিয়ালমারি পশুর হাটে গিয়ে দেখা যায়, মানুষে লোকারণ্য পুরো হাট। কেউ এসেছেন গরু কিনতে, আবার কেউ এসেছেন কোরবানির গরু দেখতে। হাটের সামনে জীবননগর-চুয়াডাঙ্গা আঞ্চলিক মহাসড়কে যানজট।
কয়েকজন পুলিশ সদস্য যানজট নিরসনে কাজ করছেন। তবে হাটের ভেতরে প্রশাসনের কেউ ছিলেন না। হাট ব্যবস্থপনার দায়িত্বে থাকা চঞ্চল বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মানার জন্য মাইকিং করা হচ্ছে। নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। ভারতীয় গরু যেন বাজারে ঢুকতে না পারে, সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
এদিকে, পার্শ্ববর্তী ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর থানার কাঞ্চনতলা গ্রামের শফিকুল ইসলাম বলেন, আমি হাটে গরু বিক্রি করতে আইছি। আমার গরুর দাম দিয়েছি দেড় লাখ টাকা। মানুষ আমার গরু দেখছে কেনার জন্য দামও জিজ্ঞাসা করছে আমি ১ লাখ ২০ হলে গরুটি বিক্রি করে দেব।
জীবননগর উপজেলার উথলী গ্রামের আরেক বিক্রেতা বকতিয়ার আলী বলেন, আমি আমার গরু বিক্রি করতে এসেছি, দাম দিয়েছি ২ লাখ টাকা। গরুর ওজন অনুযায়ী ক্রেতা ও দালালেরা দাম বলছে কম। যে কারণে গরু দিতে পারছি না। তবে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা হলে গরুটি বিক্রি করে দেব।
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার উক্ত গ্রামের গরু ক্রেতা মো. কাশেম বলেন, আমি কোরবানির গরু কিনতে এসেছি। গরুর দাম এবার অনেক বেশি, তাই গরু কিনতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। আমার বাজেটের মধ্যে যদি হয়, আমি এই হাটেই গরু কিনে নিয়ে যাব।
বাজারে ছাগল বিক্রি করতে আসা মো. আক্কাচ আলী বলেন, গতবার কোরবানির ঈদের তুলনায় এ বছর ছাগলের দাম কম। ক্রেতাও অনেক কম। ছাগল ব্যাপারী মো. সমসের আলী বলেন, বাজারে বড় ছাগলের তুলনায় ছোট ছাগলের চাহিদা বেশি। এই জন্য এসব ছাগলের দাম এখন তুলনামূলক বেশি। বাজারের ব্যবসায়ী মোতালেব হোসেন বলেন, শিয়ালমারী পশুর হাটে কোরবানীর ঈদ উপলক্ষে প্রশাসন কঠোর অবস্থান নিয়েছে। রাস্তায় পুলিশের অনেক লোকজন রয়েছে।
ডুগডুগি পশুহাটের ইজারাদার জনি শাহকে পশুহাটের বেচা-বিক্রি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি জানান, গত বছরের করোনার প্রভাবের কারণে খুব খারাপ অবস্থা ছিল। এবার আবার সিলেটসহ বিভিন্ন জেলার বন্যার কারণে ব্যাপারীরা আসতে না পারায় খুব বেশি ভালো বেচা-বিক্রি নেই। তারপরও ৩ থেকে ৪ কোটি টাকার বেচা-বিক্রি হয়েছে। আশা করি ঈদের সামনের হাটগুলোতে বেচা কেনা আরও বাড়বে।
হাটের নিরাপত্তার বিষয়ে জানতে চাইলে জীবননগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আব্দুল খালেক বলেন, শিয়ালমারী পশুহাটে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য মাইকিং করা হচ্ছে। অজ্ঞান পার্টির বিরুদ্ধে পুলিশ এবার কঠোর অবস্থান নিয়েছে। হাটের নিরাপত্তায় জীবননগর থানা-পুলিশের পাঁচটি দল কাজ করছে।
এবিষয়ে জীবননগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, শিয়ালমারি পশুহাটে স্বাস্থ্যবিধি মেনে হাট পরিচালনার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে এবং পশুহাটে জাল টাকা শনাক্তের জন্য মেশিনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পাশাপাশি পশু ক্রয় করতে এসে যাতে কোনো ব্যবসায়ী বা সাধারণ মানুষ হয়রানি বা প্রতারণার শিকার না হয়, সেদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তৎপর রয়েছে।
উল্লেখ্য, চুয়াডাঙ্গা জেলায় ছোট বড় মোট পশুহাট রয়েছে। এর মধ্যে জীবননগর উপজেলার শিয়ালমারি পশুহাট, দামুড়হুদা উপজেলার ডুগডুগি এবং আলমডাঙ্গা পশুহাট জেলার সবচেয়ে বড় ৩টি পশু হাট। আসন্ন পবিত্র কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে স্বপ্নের পদ্ম সেতু দিয়ে ঢাকার হাটগুলোতে নিতে পারবে এবার ঈদের গরু ব্যবসায়ীরা। যার ফলে পশু বিক্রেতা ও ক্রেতাদের মাঝে উৎসব বিরাজ করছে।