স্বীকৃতি বিশ্বাস, বিশেষ প্রতিনিধিঃ
শুক্রবার (১জুলাই/১০ আষাঢ় ) শুভ রথযাত্রা। দীর্ঘ বিচ্ছেদের পর কৃষ্ণের বৃন্দাবন প্রত্যাবর্তনের স্মরণে এই উৎসব আয়োজিত হয়ে থাকে। রথযাত্রা হিন্দু বাঙালিদের একটি পবিত্র ধর্মীয় উৎসব। বাংলা ক্যালেন্ডার অনুসারে প্রতিবছর আষাঢ় মাসের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে রথযাত্রার উৎসব পালিত হয়।
রথযাত্রার দিন পুরীর জগন্নাথ মন্দির সহ বিশ্বের সকল জগন্নাথ মন্দিরে জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রা ও সুদর্শন চক্র মূর্তি মন্দির বাহিরে সর্বসমক্ষে বাহির করা হয়। তারপর তিনটি/একটি সুসজ্জিত রথে বসিয়ে দেবতাদের পূজা সম্পন্ন পূর্বক রথ টানা হয়। এখানে তিন দেবতাকে গুণ্ডিচা মন্দিরে জগন্নাথ দেবের মাসির বাড়ি নিয়ে যাওয়া হয়।
রথযাত্রা বলতেই সবার আগে নাম আসে পুরীর। কারণ, পুরীকে অনুসরণ করেই বাকি সব জায়গায় রথযাত্রা হয়। আর, সব কিছুরই একটা ইতিহাস আছে। কিন্তু, কবে থেকে পুরীতে রথযাত্রা শুরু হয়েছিল, তা নিয়ে বিস্তর মতভেদ দেখতে পাওয়া যায়।
এক্ষেত্রে অনেকেই ভরসা রাখেন ওড়িশার প্রাচীন পুঁথি ‘ব্রহ্মাণ্ডপুরাণ’-এর ওপর। এই পুঁথি অনুযায়ী, মহারাজ ইন্দ্রদ্যুম্নর আমলে জগন্নাথদেব, বলরাম এবং সুভদ্রার মূর্তি তৈরি হয়। একইসঙ্গে রথযাত্রাও চালু হয়। বিভিন্ন ইতিহাসবিদদের দাবি, ১০৭৮ সালে তৈরি হয়েছিল পুরীর জগন্নাথ মন্দির। ১১৭৪ সালে মেরামতির পর তা বর্তমান জগন্নাথ মন্দিরের চেহারা নেয়।
কিন্তু, আবার ‘রথ চকদ’ নামে আর একটি গ্রন্থে আছে যে আট শতকে রাজা যযাতি কেশরী রথযাত্রা উৎসব উদযাপন করেছিলেন। সেই সময় তিনি শ্রী শ্রী জগন্নাথদেব, বলরাম এবং সুভদ্রার বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
মাদলা পঞ্জী’ নামে একটি কালানুক্রমিক বিবরণমূলক গ্রন্থ থেকে জানা যায়, আগে শ্রী শ্রী জগন্নাথ মন্দির থেকে গুন্ডিচা মন্দিরে যাওয়ার পথে ‘মালিনী নদী’ নামে একটি নদী পড়ত। ওই নদী ‘বডা নাই’ বা বড় নদী নামেও পরিচিত ছিল।
ওই সময়ে রাজার ছয়টি রথ এই রথযাত্রায় অংশ নিত। শ্রীজগন্নাথদেব, বলরাম এবং সুভদ্রা এবং সুদর্শন চক্রকে ওই নদীর দিকে বহন করে নিয়ে যাওয়ার জন্য তিনটি রথ ব্যবহৃত হত। তারপর বিগ্রহগুলি নদীর অন্য পাড়ে নিয়ে যাওয়া হত নৌকোয় চাপিয়ে। সেখান থেকে গুণ্ডিচা মন্দির পর্যন্ত শ্রীজগন্নাথদেব, বলরাম এবং সুভদ্রাকে বহন করার জন্য আরও তিনটি রথ থাকত।