মোঃ ছায়েদ হোসেন, রামগঞ্জ (লক্ষীপুর) সংবাদদাতাঃ নীরব পরিবেশে হঠাৎ করেই কানে ভেসে আসতো ঠকঠক আওয়াজ। নিঃশব্দ পরিবেশটা কে ছাপিয়ে চলতো কামারের হাতুড়ি আর হাঁপড়। আজ সেই ঠকঠক আওয়াজ নেই। আছে শুধু হতাশায় ভরা কর্মহীন কিছু মুখ, যে মুখে একসময় হাসি ছিল, মনে ছিল আনন্দ, পেটে ছিল ভাত।
সময় আর প্রযুক্তির ছুঁয়া কেড়ে নিয়েছে কামারদের সব খুশি। তবে কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে টুংটাং শব্দে আবারও মুখরিত হয়ে উঠেছে রামগঞ্জের কামার পল্লী। নতুন তৈরি এবং পুরাতন দা-কুড়াল ধারালো করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন রামগঞ্জের কামররা।
এই ব্যস্ততা চলবে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত। আসন্ন ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে জমজমাট হয়ে উঠেছে কামারপাড়া। তৈরি করা হচ্ছে ধারালো ছুরি, চাপাতি, দা, বঁটিসহ নানাবিধ সরঞ্জাম। এ ব্যস্ততা চলবে ঈদের দিন পর্যন্ত।
রামগঞ্জ সোনাপুরসহ বিভিন্ন বাজারে গিয়ে দেখা যায়, ব্যস্ত সময় পার করছেন কামাররা। ঈদে হাজার হাজার গরু, খাসি, ভেড়া, মহিষ, ইত্যাদি পশু কোরবানি করা হয়ে থাকে। এসব পশু জবাই থেকে শুরু করে রান্নার চূড়ান্ত প্রস্তুতি পর্যন্ত দা-বঁটি, ছুরি-ছোরা, চাপাতি ইত্যাদি ধাতব হাতিয়ার আবশ্যকীয় হয়ে যায়। বাজারে সারাবছর শুধু দা, বঁটি বিক্রি হলেও ঈদ সামনে রেখে দোকানগুলোতে সাজিয়ে রাখা হয়েছে গরু জবাইয়ের ছোরা, দেশি- বিদেশি চাপাতি, বিভিন্ন সাইজের চাকু।
অন্যদিকে কয়লার আগুনে লোহা পুড়িয়ে বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্রে রূপ দিচ্ছেন কামাররা। তবে ঈদ সামনে রেখে ব্যস্ততা বাড়লেও এখনো বেচা-বিক্রি শুরু হয়নি বলে জানিয়েছেন একাধিক দোকানি। রোজার ঈদের পর থেকেই মূলত তারা কোরবানির জন্য ছোরা-চাপাতি তৈরি শুরু করেন। প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত কাজ করেন।
রামগঞ্জ স্বপন কুমার নামে এক দোকানের কর্মচারী বলেন, এখনো মানুষের ছোরা-চাপাতি কেনা শুরু করেনি। মূলত গরু বিক্রির ওপরই আমাদের বেচা- বিক্রি নির্ভর করে। গরু কেনা যখন খুব জমে, তখন ছোরা-চাপাতিতেও মানুষ ভিড় করে। অনেকেই আবার পুরাতন ছোরা ধার দিতে আসেন। আর জবাই ছোরা সাধারণত মাদরাসার হুজুররাই কেনেন।
আগের বছর জবাই দেওয়ার পর গত এক বছরে আর কাজে লাগেনি। এবার সবকিছুরই দাম বাড়তি। গরু জবাইয়ের ছোরা বিক্রি হয় পিস হিসেবে। গাড়ির স্প্রিংয়ের লোহার তৈরি চাপাতি বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায়। এছাড়া বঁটি ৫০০ থেকে সাড়ে ৫০০ টাকা প্রতি কেজি লোহা। গরু জবাইয়ের ছুরি ৫০০ থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত আছে।
এছাড়াও চায়নিজ চাপাতি বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকায়। রামগঞ্জসহ উপজেলার বিভিন্ন বাজারের বেশ কয়েকটি কামারে দোকানে কথা বলে তারা জানা যায়, ঈদ যতই ঘুনিয়ে আসবে বিক্রি ততই বেশি হবে। কামার শিল্পের অতি প্রয়োজনীয় জ্বালানি কয়লার অপ্রতুলতায় দাম বেড়ে গেছে। বেড়েছে লোহার দামও। লোহা ও কয়লার দাম বাড়লেও সে তুলনায় কামার শিল্পের উৎপাদিত পণ্যের দাম বাড়েনি। কয়লার সংকটের কারণে ঠিকমতো কাজ করতে পারছি না।
বিভিন্ন হোটেল থেকে প্রতি বস্তা কয়লা ৫শ’ টাকায় ক্রয় করে আনতে হয়। আগে এক বস্তা কয়লায় দুই দিন চলতো, কিন্ত এখন যায় এক মাস। কাজের অবস্থা খুবই খারাপ। আগে প্রতিদিন ১শ’টির মতে কাস্তে তৈরি করতাম এখন ১০টিতে এসে দাঁড়িয়েছে। কামারের কাজ করে এখন সংসার চালানো বড় কঠিন, বাচ্চাদের পড়াশোনা খরচ চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। ফলে কামার স¤প্রদায় আর্থিকভাবে পিছিয়ে যাচ্ছে।
অনেকে বাধ্য হয়ে পেশা পরিবর্তন করছে। রামগঞ্জে বাজারে আসা কয়েকজন ক্রেতা জানান, কোরবানির গরুর মাংস কাটার যন্ত্রপাতির দামটা এবার একটু বেশি। আকার ভেদে একশ থেকে পাঁচশ টাকার মধ্যে বিভিন্ন হাতিয়ার বিক্রি হচ্ছে।
এর মধ্যে চাপাতি তিন থেকে সাড়ে তিনশ টাকা কেজি দরে, ছুরি আড়াইশ থেকে চারশ টাকা এবং বটি তিন থেকে সাড়ে তিনশ টাকা কেজি দরে পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া বড় ছুরি ৪০ টাকা, চাপাতি ৫০ টাকা, দা ৫০ টাকা ও ছোট ছুরি ২০ টাকায় শাণ দেওয়া হচ্ছে।
প্রকাশক ও সম্পাদক মোঃ গোলাম মাওলা শাওন ০১৭১১-০০৬২১৪,ব্যবস্থাপনা সম্পাদক 01762119992, প্রধান কার্যালয় ৩৪ নুরজাহান শরীফ প্লাজা ৮ম তলা, পুরানা পল্টন ঢাকা ১০০০। ০১৯৯৯-৯৫৩৯৭০ নিউজ ই-মেইল [email protected] সিভি পাঠান: [email protected]
দৈনিক বাংলার আলো নিউজ জিএমএস বাংলার আলো গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান।