সজীব হাসান, (বিশেষ) প্রতিনিধিঃ নব্বইয়ের দশকে ছিলেন ডাকসাইটে ছাত্রনেতা। রাজনীতিতে ইস্তফা দিয়ে কর্মজীবনের শুরুতে চাকরি করেন বড় কোম্পানিতে। বর্তমানে ছোটো উদ্যোক্তা। তবে এসবের আড়ালে তার আরেক পরিচয় তিনি হেরোইনের মতো মাদকের বাহক। মাসে দুবার রাজশাহী থেকে ঢাকায় নিয়ে আসেন হেরোইনের চালান। তিন মাসের চেষ্টায় বগুড়ার শাহানুর ইসলাম এখন পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের জালে। ৫৫ বছর বয়সী বগুড়ার শাহানুর ইসলাম একজন ছোট উদ্যোক্তা। বগুড়ায় তার রয়েছে টেইলার্সের দোকান। চুক্তিভিত্তিক মজুরিতে তার দোকোনে কাজ করেন কয়েকজন কারিগর।
তবে তার ব্যস্ততা অন্য কাজে। মাসে দুবার তিনি ঢাকায় আসেন। সঙ্গে থাকে শুধু এক প্যাকেট বিস্কুট। থাকে না ব্যাগ এমনকি মোবাইল ফোনও। আর ওই বিস্কুটের প্যাকেটে থাকে হেরোইনের চালান। একটি চালান ঢাকার পার্টিকে পৌঁছে দিতে পারলে শাহানুর পায় ২০ হাজার টাকা। বেশভুষাই তার প্রধান সম্বল। এখন পর্যন্ত কখনই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাকে সন্দেহ করে তল্লাশি করেনি।
জানা যায়, একসময় বগুড়ার সান্তাহার কলেজের জাসদ ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন শাহানুর। ডিগ্রি পাস করার পর ভালো চাকরিও জুটেছিল। আমের ব্যবসা করতে গিয়ে জড়িয়ে পড়েন মাদক সিন্ডিকেটে। ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের উপ-পুলিশ কমিশনার মাহফুজুল ইসলাম সময় সংবাদকে বলেন, তার যে অরিজিন যেটা সেখান থেকে এমনভাবে কৌশল শেখানো হয়েছে যে, সবার চোখের সামনে মাদকটা পরিবহন করতে হবে, তবে কেউ যেন বুঝতে না পারে। পকেটে বা ব্যাগে কোথাও থাকবে না মাদক, এমনভাবে সে পরিবহন করত।
মাওলানা বা ইমাম সাহেব কিংবা একজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তির লেবাস ধারণ করে সে এটা পলিথিনের ব্যাগে করে একটি বিস্কুটের প্যাকেট ও একটি পানির বোতল হাতে নিয়ে যাচ্ছে। সে এমন ভাবটা দেখায় ক্ষুধা লাগলে সে এটি খেতে পারে। এভাবে সে সবার সামনে পরিবহন করে আসছিল মাদক।
একটা বিষয় যে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ফাঁকি দেয়ার জন্য বা সে যেটা শিখেছে তার উৎস শুরু থেকে শুরু করে গন্তব্য পর্যন্ত সে কোনো মোবাইল ফোন ব্যবহার করত না। কারও সঙ্গে সে যোগাযোগ করত না। হস্তান্তর করে আবার ফিরে যেত সে। রাজশাহী কিংবা বগুড়া থেকে অপরিচিত নারীর কাছ থেকে হেরোইনের চালান এনে ঢাকায় পৌঁছে দিতেন আরেক নারী মাদক কারবারির কাছে।
পুলিশের এ কর্মকর্তা আরও বলেন, এক বা একাধিক বোরখা পরা নারী তাকে মাদক পৌঁছে দিত। ট্রেনে বা বাসে এসে আবার বোরকাপরা নারীর কাছে পৌঁছে দিত। পুলিশ বলছে, মাদক কারবারিরা এখন বাহক হিসেবে বেছে নিচ্ছেন এমন ব্যক্তিদের যাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সন্দেহ না করে।