সাংবাদিকরা অন্যায় করলে ১০ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রেখে আইন পাস হচ্ছে, আইনটি কার স্বার্থে?
সাম্প্রতি লক্ষ্য করলাম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি শিরোনাম”সাংবাদিকরা অন্যায় করলে ১০ লাখ টাকার জরিমানার বিধান রেখে নাকি আইন পাস করার পরিকল্পনা চলছে। একজন বেতন বিহীন ক্ষুদ্র সংবাদকর্মী হয়ে কিছু না লিখে পারলাম না। যে আইনের কথা বলা হচ্ছে আমার প্রশ্ন আইনটি কার স্বার্থে?
আমরা আমজনতার কাতারে এসে নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে তাকালে দেখতে পাই বর্তমানে বাংলাদেশে অন্যায় না করেও অন্যায়কারী সাজানো যায়।যার অজস্র উদাহরণ আছে আমি সে বিষয় কথা বাড়াবো না। তবে সমগ্র সাংবাদিকদের স্বার্থে আমার তো সন্দেহ হচ্ছে, ভূয়া আর হুলুদ সাংবাদিকতার দোহাই দিয়ে আসলে আইন পাশ করে সাংবাদিকদের কন্ঠ রোধ করার চেষ্টা হচ্ছে না তো?
এই আইন না করে সরকার ইচ্ছে করলেই তো ভূয়া নাম সর্বস্ব সংবাদ পত্র ও অনিবন্ধিত সকল অনলাইন পত্রিকা, আইপি/অনলাইন টিভির নাম করে টিভি চ্যানেল বন্ধ করে দিলেই তো সমস্যা মিটে যায়। কেন এ আইন? সরকারি চাকুরী জীবিদের বেতন বৃদ্ধি করে কি ঘুষ কমাতে পেরেছেন? বরং তিন গুন ঘুষ বেড়েছে। আমি মনে করি আইন নয় শাসন ব্যাবস্থা জরুরি।সাংবাদিক কারো গোলাম নয়, কারো তাঁবেদারি করার জন্য নয়।
আমার দৃষ্টিতে বেতন বিহীন সাংবাদিকদের সংখ্যা ৯০% (দেশের যে কোন একটি উপজেলায় বেতন পাচ্ছে এমন সাংবাদিক দেখতে গেলে রাস্ট্রকে আধুনিক যন্ত্র দিয়ে খুঁজতে হবে।তারপর ও সেই যন্ত্র হয়তো বলবে আমি পাচ্ছি না এখন ক্লান্ত) এই যখন অবস্থা প্রয়োজনে ১০০ ভাগ বেতন নিশ্চিত করতে রাস্ট্র মালিক পক্ষকে চাপ দিয়ে সাংবাদিকদের রুটিরুজির পথ তৈরি করে দিক।রাস্ট্র কেন সাংবাদিকদের কাছ থেকে শুধু প্রশংসা শুনতে চায়?
সাংবাদিকরা বেশি পরিবেশন করবে অন্যায়, দুর্নীতি সহ রাষ্ট্রের অব্যাবস্থাপনার খবর। আর তার ভিত্তিতে রাস্ট্র প্রধান প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের মাধ্যমে সোনার বাংলাদেশ গড়তে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে কিন্তু তরিঘরি আইন, সাজা, জরিমানা কেন? রাস্ট্রের ক্রিমিনাল কি এতটাই ভদ্র ও সভ্য হয়ে গেছে?যে সাংবাদিকদের এ আইনের অপব্যবহার করে হয়রানি করবে না? আর যদি এমন আইন করা রাষ্ট্রের জন্য ফরজ হয়ে দাঁড়ায় তবে এ আইনের আগে এটাও নিশ্চিত করতে হবে সাংবাদিকদের নামে করা কোন অভিযোগ যদি হয়রানি প্রমাণিত হয় তবে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সেই সাংবাদিককে ১ কোটি টাকা বা তার বেশি ক্ষতি পুরন দিতে বাধ্য থাকবে।
যে সকল আইন প্রনেতা ও নামি-দামি ব্যক্তিরা সভা সেমিনারে বড়-বড় কথা বলেন তারা কি এটা দেখেছেন মুলধারার মফস্বল সাংবাদিকদের বৃহত্তর একটি অংশের তিনবেলা ঠিকমতো খেয়ে-পড়ে থাকতেই কষ্ট হচ্ছে। পুঁজি নেই, গাড়ি নেই, বাড়ি নেই তারা দিবে ১০ লক্ষ টাকা জরিমানা হাস্যকর। প্রশ্ন উঠতে পারে তারা কেন দিবে?হ্যা এ আইন হলে অপরাধীদের অর্থের প্রভাব আর প্রতাপে এইসব মুলধারার দেশপ্রেমিক সাংবাদিকরাই প্রথম এবং বেশি শিকার হবে। বেড়ে যাবে অর্থশালী অপরাধীদের সাংবাদিক হওয়ার প্রবনতা। অন্ধকার যুগে পা রাখবে সাংবাদিক ও সংবাদ পত্র।
দেশে রাষ্ট্র কর্তৃক অনেক প্রশংসনীয় উদ্যোগ আছে কিন্তু গ্রামে একটি প্রবাদ আছে ১ মন দুধকে নষ্ট করে দিতে ১ ফোঁটা চ্যানা(মূত্র)ই যথেষ্ট।তাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করবো এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়ে কতৃপক্ষ পুনঃবিবেচনা করবেন।আপনি হয়তো অবগত আছেন প্রেস কাউন্সিল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বঙ্গবন্ধু।
তিনি সাংবাদিকদের সম্মান দিয়েছিলেন। তিনি মনে করেছিলেন, সাংবাদিকেরা এমন শ্রেণির লোক যাঁদের জন্য তিরস্কারই বড় শাস্তি। প্রেস কাউন্সিল আইনে কোনো অন্যায় করলে বেশির ভাগ সাংবাদিককেই তিরস্কার করা হয়ে থাকে। মানি লোকের জন্য তিরস্কারই বড় শাস্তি। এটা তাঁদের আত্মসম্মানে বাধবে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে নতুন আইন প্রয়োজন হচ্ছে এমন প্রতিক্রিয়া কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা বিবেচনা প্রয়োজন বলে মনে করছি।
আমি ক্ষুদ্র একজন মানুষ হিসাবে মনে করি, সরকারকে বুঝিয়ে ভিতরে-ভিতরে একটি রাক্ষসী মহল নিজেদের অপরাধকে হালাল করতে সাংবাদিকদের নামে ডিজিটাল নিরাপত্তা সহ বিভিন্ন ধরনের কালো আইন বাস্তবায়নের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। আমার প্রশ্ন অপরাধীর অপরাধ হালাল করতে রাস্ট্র কেন তার গায়ে কলঙ্ক মাখাবে?তা হলে আবারও প্রশ্ন আইনটি কার স্বার্থে?
লেখকঃ
উজ্জ্বল কুমার দাস (সংবাদকর্মী)
সদস্য, বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম কচুয়া উপজেলা শাখা, বাগেরহাট।