স্বীকৃতি বিশ্বাস, বিশেষ প্রতিনিধিঃ
দীর্ঘ ৬ মাস যাবত যশোর জেলার অভয়নগর উপজেলার আমডাঙ্গা খালের উপর স্থাপিত স্লুইসগেটের কপাট উঠানামা না করায় ও অশনির প্রভাবে সৃষ্ট নিম্নচাপের কারণে অতিবর্ষণে ভবদহ এলাকার প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং ২০ হাজার বাড়ির উঠানে পানি জমেছে।
গতমাসে অশনির প্রভাবে বৃষ্টিপাত হয়ে কৃষকের ফসল পানিতে ডুবে যায় এবং ক্ষেতের পানি আদৌ অপসারিত না হওয়ায় ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির নেতা শিক্ষক শিবপদ বিশ্বাস ভুক্তভোগী এলাকার জনগণকে সাথে নিয়ে (শুক্রবার) আমডাঙ্গা খাল পরিদর্শনে যান।
পরিদর্শন শেষে তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে খালের উপর নির্মিত স্লুইসগেটের কপাট উঠানামা না করায় গেট জীর্ণ হয়ে গেছে কপাট ও তালায় মরিচা পড়ে গেছে।তখন আমরা আমডাঙ্গা খালের উপর নির্মিত গেট তত্ত্বাবধানের জন্য নিয়োগপ্রাপ্ত রাজুকে ডেকে কথা বলি। গেট উঠানামা না করার কারণ জানতে চাইলে রাজু বলে- গত ৬ মাস যাবত বেতন বন্ধ থাকায় কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে।
গেট অপারেটরের গত ৬ মাস যাবত বেতন বন্ধের বিষয়ে জানতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সেকশন অফিসার জনাব তরুনের ফোনে যোগাযোগ করা হলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির নেতা শিবপদ বিশ্বাস আরও বলেন, আজ (৫ জুন) রবিবার বিকালে আবারও তারা একটি টীম নিয়ে আমডাঙ্গা খাল পরিদর্শনে যাবেন।
গেট অপারেটর রাজু বলেন, গত ৬ মাস যাবত বেতন বন্ধ হয়ে আছে। বিনা বেতনে কি কাজ করতে ভাল লাগে? সুন্দলী ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামের অতীত মন্ডল ও ধোপাপাড়া গ্রামের সঞ্জিত বিশ্বাস অনেক আগে এসে গেট বন্ধ করে গেটের চাবি নিয়ে গেছেন।
সুন্দলী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বলেন, কপিল রায় বিকাশ বলেন, পানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে নিরব এবং তারা ফোনও ধরেন না।
উল্লেখ্য অভয়নগর, মনিরামপুর,কেশবপুর উপজেলাসহ যশোর সদর, ফুলতলা,ডুমুরিয়া উপজেলার অংশ বিশেষ ভবদহ জনপদ। এই জনপদের দশ লক্ষাধিক লোকের জীবন ও জীবিকা নির্ভর করে ভবদহ এলাকার ২৭ বিল-কেদারিয়ার বিল, কপালিয়ার বিল, দামোখালির বিল, আড়পাতার বিল, বলার আবাদের বিল, আন্ধার বিল,কাছোর আবাদ বিল, গান্ধি মারার বিল, ভুলার আবাদ বিল, সন্ধ্যার বিল,বিল বোকড়, কালিধার বিল, হরিণ ঘাটার বিল/হরিণ কাটার বিল, সাত গাতীর বিল, শাহালের বিল বাহাদুর পুরের দক্ষিণে, সুন্দলীর খোল বিল, শুড়ীর ডাঙ্গীর বিল, ঝিহিরের বিল ঝিকরের বিল, রাজাপুরের বিল, ডুমোর বিল, ধলের গাতী বিল, ফেহেলির বিল রাজাপুরের উত্তরে, মাগুরার বিল, শা- মান্দার তলার বিল, ভাতার মারীর বিল, জয়পুরের পশ্চিমে হরিণার বিল,খোরচে ডাঙ্গা ও বলা ডাঙ্গার বিলসহ ভাতুড়িয়ার বিলে উৎপাদিত ফসলের উপর।
কিন্তু ভবদহ সংলগ্ন নদ-নদী ও খালগুলো নাব্যতা হারিয়ে ফেলায় ভবদহ সংলগ্ন ২৭ টি বিলের মধ্যে বিল কেদারিয়া, বিল বোকড়সহ কমপক্ষে ৮ টি বিলে কোন বোরো আবাদ হয়নি।
ভবদহ স্লুইসগেটের কার্যকারীতা হারিয়ে ফেলায় বিকল্প হিসাবে কয়েক বছর যাবত যশোর জেলার অভয়নগর উপজেলার আমডাঙ্গা খাল দিয়ে পানি অপসরণের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে।ফলে উত্তরের ২৭ বিলের মধ্যে সুন্দলীর খোল বিল, শুড়ীর ডাঙ্গীর বিল, ঝিহিরের বিল ঝিকরের বিল, রাজাপুরের বিল, ডুমোর বিল, ধলের গাতী বিল, ফেহেলির বিল রাজাপুরের উত্তরে, মাগুরার বিল, শা- মান্দার তলার বিল, ভাতার মারীর বিলের পানি নিষ্কাশনের অন্যতম মাধ্যম হয়ে উঠেছে এই আমডাঙ্গা খাল।
ফলে আমডাঙ্গা খালের উপর স্থাপিত হয়েছে ৬ ভেন্টের স্লুইসগেট এবং জোয়ার ভাটার সময় কপাট বন্ধ ও খোলার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক নিয়োগ করা হয় একজন অপারেটর। কিন্তু দীর্ঘ ৬ মাস যাবত পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক নিয়োগ প্রাপ্ত ব্যক্তির বেতন বন্ধ থাকায় ভুক্তভোগী এলাকার জনগণ যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তেমন স্লুইসগেটটিও নষ্ট হচ্ছে এবং আমডাঙ্গা খালটি নাব্যতা নষ্ট হচ্ছে।আর তাই এখনই যদি স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধিসহ পানি উন্নয়ন বোর্ড যদি সঠিক পদক্ষেপ না নেন তাহলে আসছে বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই ভবদহ এলাকার বিস্তৃর্ণ জনপদে স্থায়ী জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হবে।