আসাদুর রহমান, শাহজাদপুর ( সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি : দেশে বজ্রপাতে দিন দিন মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলছে। ইতোমধ্যেই সরকার ২০১৬ সালে বজ্রপাতকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে ঘোষণা করেছে। প্রতিনিয়ত বজ্রপাতের সংখ্যা বাড়ায় মানুষ ভীত ও সন্ত্রস্ত এখন। সারাদেশে কোন না কোন স্থানে বজ্রপাতে মানুষ, গবাদিপশু ও বন্যপ্রাণী মারা যাচ্ছে। সবচেয়ে আশঙ্কার কারণ হচ্ছে এখন বজ্রপাত কোন মৌসুম মানছে না। তবে বর্ষা মৌসুম এলে বজ্রপাতের সংখ্যা বেড়ে যায়। তবে এপ্রিল থেকে জুলাই পর্যন্ত বজ্রপাতের আশঙ্কা বেশি থাকে।
মৃত্যুর সংখ্যা বিচারে এখন প্রতি বছর বর্ষাকালে বজ্রপাত মহামারির আকার ধারণ করে। গত কয়েক বছরে সহস্রাধিক মানুষের মৃত্যুর হিসাব রেকর্ড করা হয়েছে। এটি নিঃসন্দেহে আতঙ্কের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।পরিসংখ্যান বলছে, বজ্রপাতে প্রতিবছর গড়ে দুই শতাধিক মানুষ মারা যায়। এরমধ্যে ২০১৮ সালে সবচেয়ে বেশি ৩৫৯ জন মারা গেছে। আগের বছর ২০১৭ সালে মারা গেছে ৩০১ জন। জলবায়ু পরিবর্তন আর বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে বজ্রপাত বাড়ছে। তাপমাত্রা যত বেশি হবে বজ্রপাত তত বাড়বে। মহামারী আকারে হাজির হওয়া এই বজ্রপাত থেকে রক্ষা পেতে বিশ্লেষকরা বেশি বেশি তালগাছ রোপণ করার তাগিদ দিচ্ছেন।
অথচ এই তাগিদকে উপেক্ষা করে মানুষ চারদিকে তাল শাঁস খাওয়ার মহোৎসবে মেতে উঠেছে যেন। সারাদেশের মত শাহজাদপুরের বিভিন্ন হাট বাজারে আসতে শুরু করেছে কঁচি তাল। এই গরমে ব্যাপক চাহিদা থাকায় দেদারছে তালের শাঁস বিক্রি হচ্ছে। স্বল্পমূল্যের অত্যান্ত সুস্বাদু ও হাতের নাগালে পাওয়ায় সব বয়সী লোক এই তালের শাঁস খায়। গাছের মালিকরা ভাল দাম পাওয়ায় পাকার আগেই গাছ থেকে তাল বিক্রি করে দিচ্ছেন। ফলে পাকা তালের অভাবে বীজ সংকটে পড়ে তাল গাছের বংশ বৃদ্ধি ব্যাহত হওয়ার আশংকা করছেন বৃক্ষপ্রেমীরা।
শাহজাদপুর শহরের মনিরামপুর বাজার বিসিক ও দিলরুবা বাসস্ট্যান্ড এলাকাসহ পৌর শহরের বিভিন্ন স্থানে ভ্রাম্যমান তালের দোকান নিয়ে বসছেন ব্যবসায়ীরা। পৌর শহর ছারাও বিভিন্ন শাহজাদপুরের বিভিন্ন এলাকায় এই মৌসুমের তাল শাঁস বিক্রির হিড়িক পড়েছে। উপজেলার পৌর সদরসহ নগড়ডালা, ডায়া, জামিরতা, পোরজনা, তালগাছি, পোতাজিয়া, রতনকান্দি, খুকনীর বিভিন্ন বাজার ও জনসমাগম হয় এমন মোড় গুলোতে চলছে তালের শ্বাস বিক্রির মহোৎসব। মৌসুম ভিত্তিক ব্যবসয়ীরা সাধারন তাল শাঁস বিক্রি করে জীবন ও জীবিকা নির্বাহ করছে। শাহজাদপুর দিলরুবা বাসস্ট্যান্ডে তালের শাঁস ব্যবসায়ী আঃ আলিমের সাথে কথা হলে তিনি জানান, এর আগে তরমুজ বিক্রি করতাম এখন তালের শাঁস বিক্রি করি। শাহজাদপুর ছাড়াও পাবনা ও নাটোরের বিভিন্ন এলাকা থেকে তাল এনে শাঁস বিক্রি করি।
প্রতিদিন প্রায় পাঁচ হাজার টাকার তাল শ্বাস বিক্রি হয় বলে জানান এই ব্যবসায়ী। আরেক ব্যবসায়ী সজল জানান, প্রতিটি তাল পনেরো টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি তালে তিনটি করে শাঁস থাকে, সে হিসেবে প্রতি তাল শাঁসের মুল্য ৫ টাকা। প্রতিদিন তিন হাজার টাকার তাল শ্বাস বিক্রি করে থাকি। এছাড়াও শাহজাদপুরের বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে প্রতিদিন প্রায় লাখ টাকার তাল শাঁস বিক্রি হয় শাহজাদপুরে।
পাকা তাল অত্যন্ত পুষ্টিগুন সমৃদ্ধ এছাড়া এ গাছ প্রাকৃতিক দূর্যোগ সহনীয়। কিন্তু অধিকহারে তালের শাঁস বিক্রির জোয়ারে পাকা তালের অভাব দেখা দিচ্ছে তালের বিজ সংকট। এতে ব্যাহত হচ্ছে তালের বংশ বিস্তার। একসময় শাহজাদপুরের সর্বত্রই বড় বড় তাল গাছ ছিল।
এসব গাছে বাস করতো, চিল, বাজ, বাবুইসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি। এ গাছ না থাকায় পাখিগুলি হারিয়ে গেছে। বিভিন্ন প্রয়োজনে তালগাছ কাটা হলেও বীজের অভাবে রোপন করা হচ্ছে না। গ্রামঞ্চলের মানুষ তালগাছের গুরুত্ব না বুঝে তালগাছ কেটে ফেলছে। এ গাছে বছরে একবার ফলন হয়, লাভ কম হয়। ফলে এ গাছ কেটে অন্য ফল বা অন্যকিছুর আবাদ করছেন অনেকে। তালগাছে লাভ কম হলেও প্রাকৃতিক দূর্যোগ বিশেষ করে বজ্রপাত থেকে মানুষকে রক্ষা করে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুস সালাম বলেন, তালগাছ সংরক্ষনে সরকারি কোন উদ্যোগ না থাকলেও প্রতি বছর আমরা বিভিন্ন এলাকা থেকে তাল বিজ এনে উপজেলার বিভিন্ন রাস্তার ধারে রোপন করে থাকি। কৃষকেরা তালের শাঁস অথবা তাল পাকিয়ে যে কোন উপায়ে বিক্রি করতে পারে। এখন একাকালিন নগদ টাকা পাওয়ার জন্য হয়তো কৃষক তালের শাঁস বিক্রি করছে। আমরা সবসময় অধিক লাভের জন্য কৃষককে পাকা তাল বিক্রির পরামর্শ দিয়ে থাকি। এতে তালের বিজ থেকে তাল গাছের বংশ বিস্তার হবে।
সচেতন মহলের ধারনা যে হারে তালের শাঁস সারাদেশে বিক্রি হচ্ছে তাতে একটা সময় তালের বীজের অভাবে তালগাছের অস্তিত্ব সংকটে পড়বে। তালগাছের বংশবৃদ্ধিতে সরকারি বেসরকারি উদ্যোগ গ্রহন জরুরী।