আব্দুস সালাম (জয়), ঝিনাইদহ প্রতিনিধিঃ
ঝিনাইদহ কালীগঞ্জ সোনালী ব্যাংক স্বামীর সিসি লোনের দায়ে স্ত্রীর নামে থাকা জমি নিলামে তুলেছে। এই তুঘলকি কান্ডে সমালোচনার ঝড় উঠেছে কালীগঞ্জ শহরে। নিলামের সুযোগ নিয়ে কালীগঞ্জের প্রভাবশালী মহলের রোষানলে পড়েছে একটি হিন্দু পরিবার। ওই মহলটি বাড়িসহ ৫০ লাখ টাকার জমি মাত্র ১৪ লাখ এক টাকায় কিনে নিয়েছে।
এ অবস্থায় হিন্দু পরিবারটি ভিটাছাড়া হওয়ার উপক্রম হয়েছে। বিজ্ঞ আদালত নিলাম আপাতত স্থগিত করেছেন। পরিবারটি এখন গৃহহীন হওয়ার আশংকায় দিন গুনছেন। বাড়ি ছাড়তে হবে এমন খবরে ওই পরিবারের শিশু সদস্যরা ডুকরে ডুকরে কাঁদছেন, যেখানে তাদের ভুমিষ্ঠ থেকে বেড়ে ওঠার স্তৃতি জড়িত ছিল।
তথ্য নিয়ে জানা গেছে, কালীগঞ্জ নলডাঙ্গা ভুষন পাইলট হাইস্কুলের শিক্ষক নন্দ কুমার শিকদার ২০১০ সালের ৩০ আগষ্ট কালীগঞ্জ সোনালী ব্যাংক থেকে ৫ লাখ টাকার সিসি ঋন গ্রহন করেন, যার মঞ্জুরী পত্র নং ১১৮৫। ব্যাংকের ভাষ্যমতে ২০১৪ সাল পর্যন্ত নন্দ কুমার শিকদার ব্যাংকের সাথে লেনদেন করেন।
এরপর থেকে তিনি ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ করা বন্ধ করে দেন। টাকা না দেওয়ার কারণে ২০১৮ সালে ব্যাংক মামলা করে। মামলায় বিবাদী করা হয় নন্দ কুমারের ছেলে অসিম কুমার, সুমিত কুমার ও স্ত্রী ইতি শিকদার। নন্দ কুমারের একটি কন্যা সন্তান থাকলেও তাকে আসামী করা হয়নি।
এদিকে ব্যাংকের দায়ের করা মামলার ৩ নং বিবাদী ইতি শিকদার অভিযোগ করেন, ৩৬ নং নিশ্চিন্তপুর মৌজার আরএস ২৩২৯ ও এসএ ১৯১ দাগের ৫ শতক জমি তার স্বামী নন্দ কুমার ঋন গ্রহনের আগেই ২০১০ সালের ২৫ এপ্রিল স্ত্রীর নামে জমি রেজিষ্ট্রে করে দেন।
অথচ স্ত্রীর নামে থাকা জমি তল্লাসী ছাড়াই ব্যাংক জমি রেজিষ্ট্রির ৪ মাস পর কি ভাবে নন্দ কুমারকে সিসি লোন দিলেন তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। তিনি বলেন তার ভিটে বাড়ি নিয়ে যা হচ্ছে সবই ষড়যন্ত্র ও বিশেষ মহলের ইন্ধনে। স্বামীর মৃত্যুর ৪ বছর পর ব্যাংক মামলা করেছে, অথচ আমাদের কিছুই জানায়নি।
তিনি বস্পরুদ্ধ কন্ঠে বলেন, আমি হিন্দু মানুষ বলে আমাকে গৃহহীন করার চক্রান্ত চলছে। বাড়িসহ জমি নিলামে তোলায় সন্তান ও নাতি পুতি নিয়ে আমাকে পথে বসতে হবে। বিষয়টি নিয়ে নন্দ কুমারের ছেলে অসিম কুমার জানান, ২০১৪ সালের ১২ নভেম্বর বাবা নন্দ কুমার শিকদার মৃত্যু মারা যান। বাবার মৃত্যুর ৪ বছর পর মামলা করছে। তার আগে ব্যাংক তার ওয়ারেশদের কিছুই জানায়নি।
তিনি আরো জানান, নন্দ কুমার শিকদার ২০০৭ সালে কালীগঞ্জ নলডাঙ্গা ভুষন পাইলট হাই স্কুলের শিক্ষক হিসেবে অবসর নেন এবং কেশবপুর শহরের মেয়ে তনুপা দে’র বাড়িতে বসবাস করতেন এবং সেখানেই মারা যান। হিন্দু আইনে মেয়েরা সম্পদ না থাকলেও মামলায় বিবাদী করা হয়েছে আমার মা স্ত্রী ইতি শিকদারকে।
অথচ আমার বোনকে আসামী করা হয়নি। এখানেই তঞ্চকতা আছে বলে অসিম কুমার অভিযোগ করেন। বিষয়টি নিয়ে কালীগঞ্জ সোনালী ব্যাংকের ম্যানেজার মোঃ কামাল হোসেন জানান, ঋন প্রদানের সময় আমি ছিলাম না। আমি ২০২০ সালে যোগদান করেছি। তিনি বলেন, ব্যাংক টাকা আদায়ের জন্য যা করেছে তা দেশের প্রচলিত আইনেই করেছে।
তিনি বলেন, বিবাদীগন ব্যাংকের আসল টাকা দিয়ে সুদ মওকুফের দরখাস্ত করলে নিলাম থেকে রেহাই পেতে পারেন। কারণ কারো ভিটে থেকে উচ্ছেদ করা ব্যাংকের উদ্দেশ্য নয়। বিবাদী পক্ষের আইনজীবী এড আবুল হোসেন বলেন, স্ত্রীর নামে থাকা জমি নিজের নামে দেখিয়ে স্বামী কখনো সিসি লোন নিতে পারেন না। এটা অন্যায়। ঋন প্রদানের আগে যাচাই বাছায় করা দরকার ছিল। তিনি বলেন, আমরা বিজ্ঞ আদালতে যুক্তি ও তথ্য প্রমান দিয়ে আইনী লড়াই করছি। ইনশাল্লাহ জয়ী হবো।