মোঃ আব্দুল্লাহ আল মুকিম রাজু, পঞ্চগড় প্রতিনিধি
পঞ্চগড়ে এ বছর ভুট্টার বাম্পার ফলন হয়েছে। বাজারে ভুট্টার ব্যাপক চাহিদা থাকায় ভালো দামও পাচ্ছেন কৃষকরা। গত বছর প্রতি বস্তা (৮০ কেজি) ভুট্টা বিক্রি হয় ৯০০ টাকা থেকে ১ হাজার ১০০ টাকায়। এ বছর কৃষকরা পাচ্ছেন ২ হাজার থেকে ২ হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত। ফলে দ্বিগুণ দাম পেয়ে খুশি কৃষক।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের চেয়ে চলতি বছর জেলায় ভুট্টার আবাদ কমেছে। এ বছর ভুট্টা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৩০ হাজার ১৫০ হেক্টর। আবাদ হয়েছে ২৯ হাজার ৭৯০ হেক্টর জমিতে। আর গত বছর আবাদের পরিমাণ ছিলো ৩০ হাজার ১২০ হেক্টর।
সরেজমিনে পঞ্চগড় সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ইতোমধ্যেই অনেক ক্ষেত থেকে ভুট্টার মোচা তোলা হয়ে গেছে। কোথাও কৃষকেরা মোচা সংগ্রহ করছেন, আবার অনেকেই ব্যস্ত রয়েছেন মাড়াইয়ের কাজে।
কৃষকেরা জানান, গত বছরের চেয়ে দ্বিগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে ভূট্টা। ফলনও হয়েছে একর প্রতি ৩ মেট্রিক টনেরও বেশি। এ বছর ভালো ফলনের সঙ্গে কাঙ্ক্ষিত দাম পাওয়ায় আগামীতে ভুট্টা চাষ বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন তারা।
কৃষি কর্মকর্তারা জানান, দেশে বাণিজ্যিকভাবে মাছ চাষ ও গবাদিপশু লালন-পালন বেড়েছে। মাছ ও গবাদিপশুর খাবার তৈরিতে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন পড়ছে ভুট্টার। তাই ভুট্টার চাহিদাও থাকছে সব সময়। এ কারণে দামটা বেড়েছে। চাষিরাও লাভবান হচ্ছেন। ভুট্টা চাষে আগ্রহও বাড়ছে।
সদর উপজেলার হাড়িভাসা ইউনিয়নের পৌটিয়াপাড়া এলাকার কৃষক আব্দুল আজিজের জানান, তিনি এ বছর ৩ একর জমিতে ভুট্টার আবাদ করেছেন। এতে খরচ হয়েছে ৭০ হাজার টাকা। ফলন ভালো হওয়ায় ৫ মেট্রিকটন ভুট্টা উৎপাদনের আশাবাদি তিনি। আশানুরূপ ফলন পেলে দুই লাখ টাকারও বেশি বিক্রি করতে পারবেন বলে জানিয়েছেন আব্দুল আজিজ।
৭ বিঘা জমি ইজারা নিয়ে ভুট্টার আবাদ করেছেন গোয়ালপাড়া এলাকার কৃষক সুজন মিয়া। তিনি বলেন, ‘জমির ভাড়া দিতে হয়েছে ৩৫ হাজার টাকা। এর বাইরে বিঘা প্রতি খরচ হয়েছে ৮ হাজার টাকার মতো। তারপরও দাম ঠিক থাকলে সব মিলিয়ে লাভ হবে এক লাখ টাকা। জমি নিজের হলে লাভ আরো বেশি হতো।’
হাড়িভাসা বাজারের শস্য ব্যবসায়ী সাবিনুর রহমান বলেন, ‘আমরা কৃষকের বাড়ি থেকে ভুট্টা কিনে নিয়ে আসি। পরে এসব ভুট্টা গুদামজাত করি এবং সুবিধামত সময়ে বিক্রি করি। আমাদের কাছ থেকে দেশের নানাপ্রান্তের ব্যবসায়ীরা এসে ভুট্টা নিয়ে যান।
পঞ্চগড় জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আনোয়ার সাদেক বলেন, এ জেলার মাটি ভুট্টা চাষের জন্য উপযোগী। তাই ভালো উৎপাদনের জন্য চাষিরা যেন ভালো বীজ পান, সেটা কৃষি বিভাগ থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে। এ বছর ভুট্টার বাজারও ভালো। উৎপাদনও হয়েছে ভালো। আমরা আশা করছি আগামী বছর ভুট্টা চাষ আরও বাড়বে।