মিঠাপুকুর, রংপুর প্রতিনিধিঃ-
মিঠাপুকুর উপজেলায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী মিঠাপুকুর উপজেলা শাখার আমীর, কাফ্রিখাল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও বরখাস্তকৃত প্রধান শিক্ষক জয়নাল আবেদীন মাস্টার কর্তৃক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে মারপিট ও গলাধাক্কা দিয়ে প্রতিষ্ঠান থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ঐ এলাকায় বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে ।
সোমবার (১৬ই মে) সকাল সাড়ে ১১ টায় উপজেলার কাফ্রিখাল ইউনিয়নের মিয়ারহাট নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ঘটনাটি ঘটে। এ সময় প্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বাদল মিয়াকে মারধর করে গলাধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়া হয়। বাধা দিতে গিয়ে হামলার শিকার হয় একই প্রতিষ্ঠানের মৌলভী শিক্ষক ও প্রতিষ্ঠানের কেরানী।
ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বাদল জানান- হঠাৎ করেই অফিস কক্ষে ঢুকে কাফ্রিখাল ইউনিয়নের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান ও মিয়ারহাট নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বরখাস্তকৃত প্রধান শিক্ষক জয়নাল আবেদীন মাস্টার ও তার ছোট ভাই সুজন অতর্কিত হামলা করেন। এ হামলায় ঐ বিদ্যালয়ের আরো দু’জন আহত হয়েছেন বলে জানা যায়। বর্তমানে তিনি মিঠাপুকুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন। তার একটি হাত ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক জানান- প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান শিক্ষক জয়নাল আবেদীন মাস্টারকে বিভিন্ন মামলার কারণে সাময়িক বরখাস্ত করেন তৎকালীন ম্যানেজিং কমিটি। দীর্ঘ দেড় বছর ধরে তিনি হাইকোর্টের রায় নিয়ে প্রতিষ্ঠানে আসলেও তাকে কোন দায়িত্ব অর্পণ করেনি বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক। তিনি আরোও বলেন, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির গাফিলতির কারনে সাময়িক বরখাস্তকৃত ঐ-প্রধান শিক্ষক বেতন ভাতা না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছিলেন। কমিটি এবং ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের যোগসাজশে তাকে প্রতিষ্ঠানে দায়িত্ব অর্পন করা হচ্ছেনা। দুটি নিয়োগে ২২ লক্ষ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করেন তিনি, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক এবং কমিটির সদস্যদের বিরুদ্ধে।
মিঠাপুকুর উপজেলা জামায়াতের আমির ও কাফ্রিখাল ইউনিয়ন পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন মাস্টার জানান- বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী দল করায় বিভিন্ন মামলা হওয়ার কারণে ২০১৪ সালে সাময়িক বরখাস্ত করেন তৎকালীন ম্যানেজিং কমিটি। হাইকোর্টে রিট করার পর ২০২০ সালে প্রতিষ্ঠানে পুর্নবহালের আদেশ পান তিনি। গত দুই বছর ধরে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের নানাবিধ টালবাহানার কারণে তিনি যোগদান করতে পারছেন না।
গেল সপ্তাহে প্রতিষ্ঠানে গিয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের সাথে কথা বললে বৃহস্পতিবার ম্যানেজিং কমিটির মিটিং করার কথা বলেন। ম্যানেজিং কমিটির কোনো মিটিংয়ের সভার কোন চিঠি না করেই নতুন করে টালবাহানা করেন। সোমবার সকালে মিটিং-এর আহ্বানের চিঠি দেখতে চাইলে এবং প্রতিষ্ঠানের আয়-ব্যয়ের হিসাব জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বলেন, আপনি হিসাব চাওয়ার কে? তিনি তাকে প্রতিষ্ঠান থেকে বের হয়ে যাওয়ার হুমকি দেন। ঠিক তখনই তিনি উল্টো ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে ঘাড় ধঁরে প্রতিষ্ঠান থেকে বের করে দেওয়ার চেষ্টা করেন। জয়নাল আবেদীন জানান, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির কারণে তার বেতনের অর্ধেক অংশ প্রায় ১০ লাখ টাকার বেশি রিফাইন্ড হয়েছে। নিয়োগের বিষয়ে তার কোন অভিযোগ নেই।
এ বিষয়ে ১৭ মে মঙ্গলবার ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বাদী হয়ে মিঠাপুকুর থানায় অভিযুক্ত ঐ বরখাস্তকৃত প্রধান শিক্ষক ও কাফ্রিখাল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীনসহ কয়েকজনকে আসামি করে মিঠাপুকুর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। নিয়োগ বানিজ্যের বিষয়ে জানতে চাইলে, ভারপ্রাপ্ত প্রধাণ শিক্ষক বাদল জানান, নিয়োগের বিষয়ে কারো কোন অভিযোগ নেই। শিক্ষক নিয়োগের বিষয়টি ২০১৭ সালে সম্পূর্ণ হয়েছে। তাছাড়া আমি কিভাবে নিয়োগ দেই? কমিটির লোকজন চাইলে তিনি প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব হস্তান্তর করতে প্রস্তুত।
এ বিষয়ে মিঠাপুকুর থানার অফিসার ইনচার্জ মোস্তাফিজার রহমান জানান, তদন্ত পূর্বক আইনি ব্যবস্হা নেওয়া হবে। ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও কাফ্রিখাল ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি এবং নবনির্বাচিত ইউপি সদস্য ফুয়াদ মন্ডল জানান- প্রতিষ্ঠানে মারামারি সংক্রান্ত বিষয়ে তিনি শুনেছেন, তবে এ বিষয়ে তিনি বিস্তারিত তেমন কিছু জানেন না।