জাকিয়া সুলতানা মনি, সুনামগঞ্জ:-
এটিই দেশের সবচেয়ে বড় শিমুল বাগান যার অবস্থান সুনামগঞ্জের তাহিরপুর মানিগাঁওয়ের শিমুলবাগে।
প্রকৃতিপ্রেমীদের চোখের তৃষ্ণা মেটাতে সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে টাঙ্গুয়ার হাওরের সুবিশাল স্বচ্ছ জলরাশী, ফাঁকে ফাঁকে ছোট ছোট লেক, মেঘালয় পাহাড়ের পাদদেশে বয়ে চলা স্বচ্ছ নীলজল খ্যাত নীলাদ্রী বীরউত্তম সিরাজ লেক, স্বচ্ছজল বা ক্রিস্টাল ক্লিয়ার ওয়াটার খ্যাতি পাওয়া রূপবতী জাদুকাঁটা নদী আর মেঘালয়ের ঠিক মাঝখানে বারাম নদীর তীরে ধু ধু বালুচরে একজন প্রকৃতিপ্রেমী জয়নাল আবেদীন রেখে গেছেন তার অনন্য কীর্তি দেশের সর্ববৃহৎ সুবিশাল শিমুল বাগান।
দুর্গম হাওরের সবুজ বিপ্লবের এই নায়ক জেলার বিচ্ছিন্ন জনপদ বাদাঘাট ইউনিয়নের সোহালা গ্রামে পরিবারের সঙ্গে বসবাস শুরু করেন ১২ বছর বয়স থেকে। কিশোর বয়স থেকেই তিনি ছিলেন উদ্যমী বৃক্ষপ্রেমী। গাছপালার প্রতি ছিল তার অপরিসীম মমতা। গাছ লাগাতেই তিনি বেশি পছন্দ করতেন।
এমনি করে কালের সাক্ষী হতে প্রকৃতির বুকে একটু অলংকার জুড়ে দিতে প্রয়াত জয়নাল আবেদীন দেশের সবচেয়ে বড় শিমুল বাগানটি গড়ে তোলেন মেঘালয়ের পাদদেশ ও অপূর্ব জাদুকাঁটা নদীর মধ্যস্থলের বিস্তীর্ণ এলাকায়।
গাছ লাগানো ও পরিচর্যার পুরনো নেশাই তাকে বাগান করতে প্রভাবিত করে। বাগানটির নাম ‘শিমুলবাগ’। বিস্তীর্ণ পরিসরে এত বড় শিমুল বাগান দেশের আর কোথাও নেই।তাহিরপুর উপজেলার উত্তর বড়দল ইউনিয়নের সুদৃশ্য বারাম নদীর তীর ঘেঁষেই মানিগাঁও গ্রাম।
এ গ্রামে জয়নাল আবেদীনের নিজস্ব আড়াই হাজার শতক জায়গা একেবারেই অনাবাদী ছিল। পলির পরিবর্তে এখানে উজান থেকে ভেসে আসে বালি। এই ধু ধু বালিয়াড়িতে কীভাবে সবুজের প্রলেপ এঁকে দেওয়া যায় তারই এক অনন্য উদাহরণ এটি।
১৯৯৮ সালে এই জায়গাটির পাশে দুটো পরিণত শিমুল গাছ দেখে তিনি এখানে শিমুল বাগান করার পরিকল্পনা হাতে নেন! শেষমেশ ২০০৩ সালের দিকে শিমুল বাগান গড়ে তোলেন। সমান ১৪ ফুট দূরত্ব রেখে ২৪০০ শতক জায়গায় লাগিয়ে দিলেন ৩ হাজার শিমুলের চারা।
১৯ বছরে গাছগুলো বড় হয়ে যৌবনে পা রেখেছে। শিমুল বাগানের কাছেই আছে সুদৃশ্য বারেক টিলা। এই টিলায় বসে জাদুকাটা নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করা যায় খুব সহজেই। ফাগুনের অরুণ আলোয় ফোটে বাগানের শিমুল ফুলগুলো। ঠিক তেমনি বর্ষায় তীব্র সবুজের সমারোহ বিছিয়ে দেয় মনের কোনায়।
চোখের তৃষ্ণা মেটাতে মেঘলয় পাহাড়ের পাদদেশে ও রূপের নদী যাদুকাটার মধ্যস্থলের বিশাল শিমুল বাগানে দেখতে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসছেন শতশত পর্যটক।
সুনামগঞ্জ থেকে পর্যটক রাফি জানান, প্রকৃতির রূপ লাবণ্যে সজ্জিত শিমুল বাগানের সৌন্দর্য উপভোগ করতে এসেছি। প্রতিটি গাছে যখন ফুল ফুটেছে সত্যি খুব অসাধারণ। এখনো সবুজ রঙের ছোঁয়া লেগেছে আমার মনে। সত্যি আমার অনুভূতি বুঝানো যাবেনা। খুব খুব ভালো লাগছে।
দেখপাল ও দেখাশোনার দায়িত্বশীল মোঃ ফরিদ গাজী জানান, মরহুম জয়নাল আবেদীন শিমুল বাগানে প্রতিদিন হাজারো দর্শনার্থী আসেন, আমরা সবাইকে ভালো সার্বিস দিয়ে থাকি। এখানে এসে যেনো কেউ হয়রানির স্বীকার না হন আমরা করা নিরাপত্তার ব্যবস্হা করে রেখেছি।
শিমুল বাগান মালিক প্রয়াত জয়নাল আবেদীন এর কন্যা জেলা পরিষদের সম্মানিত সদস্য ও উইমেন্স চ্যাম্বার এন্ড কমার্সের পরিচালক সেলিনা আবেদীন বলেন, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অসংখ্য পর্যটক বাগানের সৌন্দর্য উপভোগ করতে এসেছে।তাই সরকারকে এবং প্রশাসনকে এই কথাটি বলতে চাই আমার বাবার রেখে যাওয়া দেশের সম্পদ শিমুল বাগানকে নদী ভাঙ্গনের হাত থেকে যেনো রক্ষা করা হয়। আমার ছিলেন বৃক্ষ প্রেমীক, ২০০৬ সালে আমার বাবা বৃক্ষরোপণের জন্য পুরস্কৃত হন। তিনি সবার কাছে প্রয়াত বাবার আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন।