নিজস্ব প্রতিনিধি
কুড়িগ্রামের রৌমারীতে থামছে না মাদক ব্যবসা। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছে মাদকের বড় বড় চালান। পুলিশ, বিজিবির বিশেষ অভিযানে দুই একটি ছোট চালান ধরা পড়লেও বড় চালানগুলো থাকছে ধরাছোঁয়ার বাইরে অভিযোগ এলাকাবাসির।
সরেজমিনে গিয়ে জানাযায়, কুড়িগ্রাম জেলার ৯টি উপজেলার মধ্যে রৌমারী ও রাজিবপুর দুটি উপজেলা ব্রহ্মপুত্র নদ দ্বারা বিচ্ছিন্ন। উপজেলা দুটির পশ্চিমে ব্রহ্মপুত্র নদ। পূর্ব ও উত্তরে ভারতের আসাম ও মেঘালয়। দক্ষিণে জামালপুর জেলা। রৌমারী উপজেলার যাদুরচর ইউনিয়নের কর্তিমারী গ্রামের আনিসুর রহমান বলেন, রৌমারী রাজিবপুর উপজেলায় রয়েছে প্রায় ৩০ কি.মি. সীমান্ত এলাকা।
আর্ন্তজাতিক সীমানা পিলার ১০৪৭ থেকে ১০৭৫। এ সীমান্ত এলাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল না থাকার সুযোগে এখানে ১১ টি পয়েন্ট দিয়ে খুব সহজে ভারত থেকে পাচার হয়ে আসছে ইয়াবা ট্যাবলেট, ফেন্সিডিলসহ মদ ও গাঁজা। তিনি আরও বলেন, ভারতের আসাম সীমান্ত দিয়ে নতুন ১৪ টি পয়েন্ট দিয়ে বাংলাদেশের ১৭টি পয়েন্টে ঢুকছে ইয়াবা। আর এসব ইয়াবা রৌমারী টু ঢাকা ভায়া জামালপুর, ময়মনসিংহ মহাসড়ক ও রৌমারী ফলুয়ারচর নৌকা ঘাট হতে বাহাদুরাবাদ ফেরীঘাট ভায়া গাইবান্ধা ফেরীঘাটকে ইয়াবা পাচারের নতুন রাস্তা হিসাবে বেছে নিয়েছে আর্ন্তজাতিক ইয়াবা পাচার চক্র।
এ রাস্তায় একাধিক হাত, পোশাক ও যান বদল করে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পাচার হয়ে যাচ্ছে ইয়াবার বড় বড় চালান। অনুসন্ধানে জানাযায়, বাংলাদেশের রৌমারী রাজিবপুর ্ধসঢ়;উপজেলার মাদকের ১৭ টি পয়েন্ট হচ্ছে, রাজিবপুর উপজেলার বালিয়ামারী ও মাখনের চর। রৌমারী উপজেলার যাদুর চর ইউনিয়নের আলগার চর, খেওয়ার চর, বকবান্দা, রৌমারী ইউনিয়নের ঝাউবাড়ি, বড়াইবাড়ি, চর ফুলবাড়ি, নওদাপাড়া, খাইটয়ামারী, চর বামনের চর, শৌলমারী ইউনিয়নের বেহুলার চর, গয়টাপাড়া, চর বোয়ালমারী ও দাঁতভাঙ্গা ইউনিয়নের ধর্মপুর, খেতার চর, চর গয়টাপাড়া ও ডিগ্রীর চর।
ভারতের সীমান্ত ঘেঁষা ১৪ টি পয়েন্ট, শিংমারী, শিশুমারা, আসামের আলগা, গোধুলী, দ্বীপচর, কুকুরমারা, দিয়ারারচর, ঢালের চর, কুসনিমারা, জোরডাংগা, সোনারপারা, মানকার চর, কাঁকরিপারা, কালাইর চর। ওখানেও আছে একটি শক্তিশালী মাদকপাচার চক্র। তারা কাঁটাতারে উপর দিয়ে স্থলপথে ও নদীপথে বাংলাদেশে পাঠাচ্ছে ইয়াবার চালান। বহনে সহজ ও বেশী লাভজনক হওয়ায় বাংলাদেশের সীমান্ত ঘেঁষা গ্রাম গুলোতে গড়ে উঠেছে ইয়াবার শক্তিশালী নেটওয়ার্ক। এই নেটওর্য়াকের মধ্যে ইয়াবার ট্রানজিট পয়েন্ট এখন রৌমারী রাজিবপুর উপজেলা।
পাচারের ক্যারিয়ার হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে কিশোর, যুবক, নারী, শিশুসহ বৃদ্ধদের। ১০ থেকে ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে ভাড়ায় খাটা এসব নারী-পুরুষ ও শিশু-কিশোররা রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পৌঁছে দিচ্ছে ইয়াবার চালান। অনুসন্ধানে আরও জানা য়ায়, রৌমারী থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া ট্রাক, পিকআপ ও নৈশ কোচের ড্রাইভার, হেলপার এই ইয়াবার পাচারের সাথে জড়িত। লোকাল হিসাবে ব্যবহার করছে মোটর বাইক, সিএনজিসহ নানা পরিবহন। নৌ-পথে ব্যবহার হচ্ছে ইঞ্জিন চালিত নৌকা।
যে ভাবে আসে মোবাইল নেটওয়ার্কিংয়ের মাধ্যমে মাদকের বড় চালান গুলো ভারতের আসামের শিংমারী, শিশুমারা, আসামের আলগা, গোধুলী, দ্বীপচর, কুকুরমারা, দিয়ারার চর, ঝালোর চর, কুসনিমারা, জোরডাংগা, সোনারপারা, মানকার চর, কাঁকরিপারা, কালাইর চর ও বাংলাদেশের কুড়িগ্রামের রাজিবপুর উপজেলার বালিয়ামারী ও মাখনের চর এবং রৌমারী উপজেলার যাদুর চর ইউনিয়নের আলগার চর, খেওয়ার চর, বকবান্দা, রৌমারী ইউনিয়নের ঝাউবাড়ি, বড়াইবাড়ি, চরফুলবাড়ি, নওদাপাড়া, খাইটয়ামারী, শৌলমারী ইউনিয়নের বেহুলারচর, গয়টাপাড়া, চর বোয়ালমারী ও দাঁতভাঙ্গা ইউনিয়নের ধর্মপুর, খেতার চর, চর গয়টাপাড়া ও ডিগ্রীরচরের নোম্যান্সল্যান্ডে রাতের অন্ধকারে একত্রিত হয় ইয়াবা পাচারকারীরা। ফিল্মি ষ্টাইলে হাত বদল করে ইয়াবার বড় চালান। ইয়াবার ছোট চালান গুলো আসে অন্য ষ্টাইলে।
যেমন পলিথিনে ঢুকিয়ে ছোট ক্রিকেট বলের মতো সুতা দিয়ে পেচিয়ে, কাঁটাতারের ওপার থেকে ঢিল মেরে এপারের নির্দিষ্ট স্থানে ফেলা হয়। আগে থেকেই মোবাইলে স্থান ও সময় নির্ধারণ করা থাকে। নো ম্যানস ল্যান্ডে ছাগল বাধতে গিয়ে কিংবা ঘাস কাঁটার ছলে এসব ইয়াবা সংগ্রহ করে নারী-পুরুষ উভয়ে। ১ হাজার ট্যাবলেটের এক টোপলা এনে দিলে বিনিময়ে ১হাজার টাকা দেওয়া হয় তাদের। সীমান্ত এলাকায় যাদের জমি আছে তারাও কৃষিকাজের জন্য জমিতে কাজ করতে গিয়ে ইয়াবা পোটলা কুড়িয়ে নিয়ে পাচারকারীদের হাতে তুলে দিয়ে সুবিধা নিচ্ছে।
বাংলাদেশের ১৭টি পয়েন্টে রয়েছে কয়েকটি সক্রিয় মাদক ব্যবসায়ীচক্র। রয়েছে হুন্ডি ব্যবসায়ী। যাদের মাধ্যমে ইয়াবার টাকা পাচার করা হয় ভারতে। আলগারচর সিমান্তের হুন্ডি ব্যবসায়ী ছপিয়াল মুন্সি, ফুলবাড়ি সিমান্তে আঃ রউফ, খটিয়ামারী সিমান্তে মিনহাজ উদ্দিন, মজনু মিয়া, মজনু (২),আনিজ্জামান, শৌলমারী সিমান্তে বাবলু মিয়া, দাঁতভাঙ্গা সিমান্তে আজিজ। এসব টাকা যায়, কুমিল্লা চৌদ্দ গ্রামের আল নূর বহুমূখি র্ফাম,ঢাকার আমিন বাজরের সাবিনা ট্র্রের্ডাস, আমেনা এন্ড শিলা ট্রেডার্সসহ বিভিন্ন একাউন্টে। হত্যা ঘটনাও ঘটেছে। ইয়াবাকারবারীদের মধ্যে লেনদেন, মাল ও টাকা আত্মসাৎ গ্রুফ বদলানো নানা দ্বন্দে খুন করা হয় আতিক ও বাবু নামের ২ যুবককে। সীমান্তের কাছে তাদের নৃশংস ভাবে খুন করে ফেলে রেখে যায় সংঙ্গীরা।
পরে মামলার তদন্তে বেড়িয়ে আসে এসব তথ্য। এছাড়া গত একবছরে ভারতীয় সিমান্তরক্ষীর গুলিতে নিহত হয়েছে ৪ যুবক। ৩৫ জামালপুর বিজিজির অধিনায়ক লে.কর্নেল মোন্তাছির মামুন জানান, গত মাসে রৌমারী উপজেলা থেকে মাদকের ৩২ টি মামলা করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩টি মামলা আসামিসহ ২৮টি আসামি ছাড়া। মাদক উদ্ধার করা হয়েছে ৫০৮৪ পিস ভারতীয় ইয়াবা ট্যাবলেট, ২৫৬ বোতল মদ, ৫ কেজি গাঁজা। মাদক নিয়ন্ত্রনে আনতে সীমান্তে জনবল ও টহল বৃদ্ধি করা হয়েছে।
সেই সাথে গোয়েন্দা তৎপরতা জোরদার করা হয়েছে। রৌমারী থানার ওসি মোন্তাছের বিল্লাহ বলেন, গত মাসে রৌমারী থানায় মাদকের ৩টি মামলা হয়েছে। ২ জন মাদক কারবারিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মাদক উদ্ধার করা হয়েছে ৪৬ বোতল ভারতীয় মদ ও ৬০৫ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট। আমারা মাদকের জিরো টলারেন্স আনার লক্ষ্যে কাজ করছি।
প্রকাশক ও সম্পাদক মোঃ গোলাম মাওলা শাওন ০১৭১১-০০৬২১৪, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক 01762119992, প্রধান কার্যালয় ৩৪ নুরজাহান শরীফ প্লাজা ৮ম তলা, পুরানা পল্টন ঢাকা ১০০০। ০১৯৯৯-৯৫৩৯৭০ নিউজ ই-মেইল [email protected] সিভি পাঠান: [email protected]