আফতাব উদ্দিন সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি :
সয়াবিন তেলের মূল্য বাড়ানোর তিনদিন পরও বাজারে তেলের সরবরাহ নেই। কিছু দোকানে সয়াবিন থাকলেও তা নির্ধারিত দামের চেয়েও অনেক বেশিতে বিক্রি হচ্ছে। খুচরা দোকানিরা বলছেন, তেলের দাম বাড়ানো হলেও ডিলাররা তাদের থেকে এখনো কোনো অর্ডার নিচ্ছেন না। তাই তাদের কাছে বিক্রি করার মতো কোনো তেল নেই। পাইকারদের কাছ থেকে চেয়েও কোনো খোলা তেল পাচ্ছেন না তারা। তাই নিয়মিত ক্রেতাদের কাছে বিকল্প হিসেবে সরিষার তেল, কিংবা সূর্যমুখী তেল বিক্রি করছেন খুচরা বিক্রেতারা। ঈদের বন্ধের কারণে সরবরাহে ঘাটতির কথা জানিয়েছে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। তারা বলছে, দু’একদিনের মধ্যে বাজারে সরবরাহ স্বাভাবিক হবে। বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশিও এমন তথ্য জানিয়েছেন।
বাজারে ভোজ্য তেলর তেলেসমাতির কারণে খাবারে এটির ব্যবহার কমিয়ে দিয়েছেন ক্রেতারা। তৈল কিনতে আসা দিনমজুর সামায়ুনকে এ বেপারে জিঙাসা করলে তিনি বলেছেন ঈদের অনেক আগে দুই লিটার তেল কিনেছি। শুনছি এখন দাম বাড়ছে। তাও তেল কিনতে এসে দেখি বাজারে কোনো তেল নাই। না খাইয়াও তো পারি না। অভ্যাস করে ফেলছি।
খুচরা বাজারে তেলের সংকট মঙ্গলবারের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। তিনি বলেন, তেল ডেলিভারির জন্য আগে পেমেন্ট করতে হয়। ঈদের ছুটির জন্য ব্যাংক বন্ধ ছিল। এজন্য ব্যবসায়ীরা লেনদেন করতে পারেননি। এখন পেমেন্ট করলে মঙ্গলবারের মধ্যে সরবরাহ স্বাভাবিক হবে বলে আশা করছি।
তেলের সংকটের ব্যাপারে ব্যাবসায়ী ও তেলের ডিস্ট্রিবিউটের বলেন, গত বৃহস্পতিবার রাতে দাম বেড়েছে। দাম বাড়ার পর নতুন পণ্য পেতে একটু সময় লাগে। আমরা বৃহস্পতিবার, শুক্রবার আর শনিবার আগের রেটে আগের পণ্য ডেলিভারি দিয়েছি। নতুন পণ্য রোববার থেকে আমরা ডেলিভারি দিচ্ছি। এটা বাজারে সরবরাহ হতে দুই-একদিন সময় লাগবে। আমরা অন্য সময় যা ডেলিভারি করি এখন তাই করবো। আগের দামের তেল বাজারে ছাড়ার পরও তা কেন খুচরায় পাওয়া যাচ্ছে না। তাঁরা বলেন, আমরা কোম্পানীর ডিস্ট্রিবিউটের মাধ্যমে ডেলিভারি পাই । বাজারে কেন আগের রেটের পণ্য নাই সেটা আমি বলতে পারবো না।
বাজারে সয়াবিন না পেয়ে ক্রেতাদের ক্ষোভ: শহরের কোন দোকানেই পর্যাপ্ত তেল পাওয়া যাচ্ছেনা। কোন কোন দোকানে তেল নেই। তেল কোম্পানিগুলো ১৫ দিন আগে তেল সরবরাহ করলেও ঈদের পরে খুচরা বাজারে কোনো তেল দেয়নি বলে অভিযোগ করেন বিক্রেতারা। এদিকে তেল কিনতে এসে খালি হাতে ফিরে যেতে হচ্ছে ক্রেতাদের। দু’একটি দোকানে সয়াবিন তেল পাওয়া গেলেও বাধ্য হয়েই চড়া দামে কিনছেন তারা। সরজমিন ঘুরে দেখা যায়, শহরের মধ্যবাজারে হাফ লিটার বোতলের সয়াবিন তেল কিনতে এসেছেন ইজিবাইক চালক আঃকাদির । তিনি বলেন, প্যাকেটজাত তেল না পেয়ে বাধ্য হয়েই ১০৫ টাকায় হাফ কেজি খোলা সয়াবিন তেল কিনলাম। কিছু একটা দিয়ে ব্যবস্থা তো করতেই হবে। গরিবদের দেশে কোনো খাওয়া নেই। সারাদিন পরিশ্রমের কাজ করে দিনে ৫০০ টাকা পাই। তার মধ্যে বউ-বাচ্চাসহ নিজের খরচ আছে। ২০০ টাকায় তেল কিনে খাওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব না। জলিলপুর গ্রামের মোদি দোকানদার সইবুর বলেন, ঈদের এক সপ্তাহ আগে তীর কোম্পানি কিছু তেল দিয়েছিল, বসুন্ধরা আজ তিন মাস ধরে কোনো তেল দেয় না।
বোতলের কোনো তেল বাজারে নাই, ৫ লিটারের তেল ভেঙে ২১০ টাকা কেজিতে বিক্রি করছি। কাস্টমার আসলে সান্ত¡না দিয়ে কোনোভাবে বিদায় করে দেই। ১৫ দিন যাবৎ ডিস্ট্রিবিউটার খুচরা কোনো দোকানেই তেল দেয় না কোম্পানিগুলো। ওয়েজখালী বাজারে অবস্থিত মুদি দোকানের বিক্রেতা মইনুল বলেন, দোকানে কোনো সয়াবিন তেল নাই। তেলের কথা বলতেও লজ্জা করে। গত ১৬ ও ১৭ রমজানে তেল দিয়েছিল। আমাদের কাছে যা ছিল তা বিক্রি করে দিয়েছি। আজ কোম্পানি তেলের অর্ডার নিতে আসছে। কবে তেল দিবে তা জানি না। কোম্পানি তেল স্টক করে রেখে দেয়। কাস্টমার তেল কিনতে আসলে সরিষার তেল দিয়ে দিচ্ছি। সরিষার তেলেরও এক লিটারের কোনো বোতল নেই। হাফ লিটারের বোতল বিক্রি করছি। ইব্রাহিমপুরের ব্যাবসসয়ী ফরিদ বলেন, ১৫ দিন বাজারে কোনো তেল দেয় না। তেল রাখার স্থানে মুড়ি রাখছি। আমার কাস্টমার এখন অন্য দোকান থেকে তেল নিচ্ছে, যারা তেল স্টক রাখছিলো তারা দিতে পারছে। তেল থাকলে ৫ থেকে ১০ টাকা লাভ করতে পারতাম। এখন তা আর হচ্ছে না। তিনি বলেন, সব দোকানের একই অবস্থা। কোম্পানিগুলো বলছে, বাজারে পণ্য নাই তারা কীভাবে দেবে। কোন কোম্পানিও আসছেনা । একটা আসছিল তাদের সয়াবিন তেল নেই, পাম ওয়েল আছে। ওদের ১ লিটারের পলিব্যাগ আছে। ১৭৭ টাকা কেনা, ১৮০ টাকায় বিক্রি। বর্তমানে সয়াবিনের খুচরা মূল্য ১৯৮ টাকা করা হয়েছে।