মোঃ আজিজুল হক.পেকুয়া প্রতিনিধি:-
কক্সবাজারের পেকুয়ায় কর্মসৃজন প্রকল্পের শ্রমিকদের মজুরি হরিলুট করার গুরুত্বর অভিযোগ পাওয়া গেছে। অনেক দিন পর ঈদকে সামনে রেখে সরকার কর্মসৃজন প্রকল্পের শ্রমিকদের মজুরি প্রদান করে মোবাইল ফোনে। বিষয়টি পেকুয়া সদর ইউপি বেশ কয়জন সদস্য মিলে তাদের নিয়ন্ত্রিত শ্রমিকদের কাছ থেকে জোরপূর্বক টাকা আদায় করে নেন। এ টাকা নিয়ে ঈদ করবে এবার এ ইউপি সদস্যগণ।
তথ্যসূত্রে জানা যায়, বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে দেশের দারিদ্র বিমোচন তথা সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে সরকার একটি পাইলট প্রকল্পের (কর্মসৃজন) মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্টির অসচ্ছল ও বয়স্কদেরকে অন্তর্ভূক্ত করে। এ প্রকল্পের অধীনে নূন্যতম মজুরির ভিত্তিতে অবকাটামোর বা রাস্তার সংস্কারে তার শ্রমিকের কাজ করে। এ প্রকল্পের তদারকির দায়িত্ব দেয়া হয় উপজেলা প্রকল্প কার্যালয় তথা কার্যালয়ের কর্মকর্তা (পি আই ও)। প্রতি ৪০ দিন অন্তর তাদেরকে মজুরি প্রদান করা হত। মজুরি প্রদানের সময় প্রকল্প কমিটির প্রধান অর্থাৎ সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের মেম্বার বিভিন্ন অজুহাতে টাকা হাতিয়ে নিয়ে।
এতে সরকার প্রধান সাধারণ শ্রমিকেরা যাতে হয়রানি শিকার না হয়। এজন্য প্রতি শ্রমিককে মোবাইল ব্যাংকিং বিকাশের মাধ্যমে টাকা প্রদান করেন। কিন্তু এতেও শ্রমিকেরা বাচতে পারেনা জনপ্রতিনিধি নামক রাক্ষুস ও সংশ্লিষ্ট অফিসের দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের কবল থেকে। ঈদকে সামনে রেখে সরকার বাহাদুর শ্রমিকদেরকে সহজলভ্য ভাবে টাকা প্রেরণ করেন। টাকা পৌছানোর খবর পাওয়া মাত্র রাক্ষুসেরা হুমড়ি খেয়ো পড়ে টাকার জন্য শ্রমিকের বাড়িতে বাড়িতে। বিভিন্ন অজুহাতে এবং ভয়ভীতি দেখিয়ে তারা হাতিয়ে নেন।
পেকুয়া সদর ইউপির ১ নং ওয়ার্ডের ভুক্তভোগী আবু তৈয়ব জানান, আমি এক দিকে তো অসুস্থ লোক। সংসারে এক স্ত্রী ও ৫ কন্যা সন্তান নিয়ে খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছিলাম। সরকার কর্তৃক কর্মসৃজন প্রকল্পের আওতায় আমি শ্রমিক হিসাবে কাজ করি প্রতিদিন। মোট ৪০ দিন কাজের মধ্যে অসুস্থতার কারণে ৫ দিন কাজ করতে যেতে পারিনি। কাজের মজুরির টাকা নিয়ে স্কুল পড়ুয়া মেয়েদেরকে স্কুলের গাইড ও ঈদে নতুন জামা কিনে দেবো এ আশায় বুক বেঁধে ছিলাম এতদিন। মানবিক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে আমার মোবাইলের বিকাশ নং এ সময়মত টাকা পৌঁছে যায়। টাকা পৌঁছার খবরে স্থানীয় মেম্বার আজিম ও মাহমুদুল করিম পেকুয়া বাজার থেকে ঢেকে তার বাড়ির পাশে স্টেশনে নিয়ে গিয়ে জোরপূর্বক মোবাইলের সম্পূর্ণ টাকা উঠিয়ে আমাকে ৪ হাজার টাকা দিয়ে বকা দিয়ে তাড়িয়ে দেয় এবং আমাকে বলে এনিয়ে কোন বাড়াবাড়ি করলে তালিকা থেকে বাদ দেবো। এমনকি কোন সরকারী সাহায্যের আওতায় নাম অন্তর্ভূক্ত করবো না। এ টাকা গুলো নিচ্ছে জানতে চাইলে বলে এ টাকা থেকে চেয়ারম্যানকে ও পি আই ওকে দিতে হবে।
অপর ভূক্তভোগী মনজুরা বেগম বলেন, আমার স্বামী অসুস্থ। এজন্য আমরা অসহায়। খেয়ে না খেয়ে দিন পার করি। স্বামীর নামটি কর্মসৃজনের আওতায় নাম অন্তর্ভূক্ত হয়। স্বামীর পরিবর্তে কাজ করে আমার ছেলে। ৪০ দিন পর আমার মোবাইলের বিকাশে ১৭ হাজার ২ শত টাকা আসে। আর মোবাইলে টাকা জমা ছিল ২ শত টাকা। টাকা আসার খবর পেয়ে মেম্বার আজিম ও মাঝি মাহমুদুল করিম ক্ষণে ক্ষণে ফোন করতে থাকে। আমি ফোনে কথা না বলাই বাড়িতে এসে আমাকে ঢেকে নিয়ে বিকাশের দোকানে বসিয়ে জোরপূর্বক সিম কেড়ে নিয়ে টাকা উঠিয়ে নেয় মেম্বার আজিম। ঐ টাকা থেকে ৩ হাজার ৮ শত টাকা দিয়ে বাকি টাকা তারা নিয়ে নেয়। এ নিয়ে কোনখানে অভিযোগ দিলে বড় ধরণের ক্ষতি করবে বলে হুমকি দেয়। এমনকি তালিকা থেকে নাম কেটে দেবে এবং সরকারী কোন সুযোগ-সুবিধায় নাম অন্তভূক্ত করবে না বলেও সাফ জানিয়ে দেয়।
এমনিভাবে প্রায় ১ শত ২০ জন শ্রমিকের কাছ থেকে টাকা নিয়ে নেয়। সদর ইউপির ২ নং ওয়ার্ডের ভোলাইয়াঘোনার মনজুর আলম, দানু মিয়া, ছৈয়দ আলমসহ অনেকের কাছ থেকে একই কায়দায় ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নেয় মেম্বার সাজ্জাদুল ইসলাম।
এ বিষয়ে এ প্রতিবেদককে মেম্বার আজিম মোবাইল ফোনে জানান, আমি কারো কাছ থেকে টাকা নিই নাই। আমি কর্মসৃজনের কোন লোকের সাথে কোন দিন দেখা হয়নি, কথাও হয়নি, তারা যে অভিযোগটা করেছে এটা সম্পুর্ণ মিথ্যা ষড়যন্ত্র।
এদিকে মেম্বার সাজ্জাদুল ইসলাম জানান, কর্মসৃজনের কোন লোক থেকে টাকা কেটে নেওয়া হয়নি, তারা মিথ্যা ভিডিও বক্তব্য দিয়েছে, আমি ষড়যন্ত্রের শিকার, আমি ও আমার সাইডের মাঝি কোন ধরনের টাকা আত্মসাৎ করেনি। সদর ইউপির ৯ নং ওয়ার্ডের ভুক্তভোগি মোহাম্মদ হোছন জানান, আমার মোবাইলের বিকাশ নং এ ১৭.২০০ টাকা জমা হয়। মেম্বার আবু ছালেক আমাকে স্থানীয় ফোরকানের দোকান থেকে টাকা তুলতে বলে।
আমি টাকা তুলার জন্য দোকানে গিয়ে টাকা তুললে আমাকে ওই দোকানদার ১৭ হাজার টাকা দেয়। এ সময় কর্মসৃজন প্রকল্পের মাঝি নুরুল হক ১৭ হাজার টাকা নিয়ে নেয় পরে আমাকে সাড়ে ৭ হাজার টাকা দিয়ে দেয়। সে আরো বলেন এ নিয়ে কোন প্রকার অজুর আপত্তি করলে আগামী বার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হবে এ টাকা মেম্বার নিতে বলছে। মেম্বার আবু ছালেক এর কাছ থেকে জানতে চাইলে তিনি বলেন সাংবাদিকদের ম্যানেজ করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে পেকুয়া উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা (পিআইও) আমিনুল ইসলাম বলেন এ বিষয়ে আমি অবগত নই। আপনারা এ বিষয় নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করুন। আমি তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নিবো।
এ ব্যাপারে পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পূর্বিতা চাকমা বলেন ইউপি সদস্যরা শ্রমিকদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া অন্যায়। তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
চলবে…….