পেকুয়া প্রতিনিধি:কক্সবাজারের পেকুয়ায় বেপরোয়া এক নৈশ প্রহরীর হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে পুরো একটি হাসপাতাল। প্রকল্পের অধীনে কর্মরত ওই নৈশ প্রহরীর ক্ষমতার দাপটে অতীষ্ট হয়ে উঠেছে হাসপাতালের ডাক্তার নার্স থেকে শুরু করে সাধারণ রোগীরা। হাসপাতালে সেবা নিতে আসা রোগীদেরকে হয়রানি, দুব্যবহার, রোগীদের মালামাল চুরি, এম্বুলেন্স সিন্ডিকেট বাণিজ্য ও নানা নৈরাজ্যের অভিযোগ ওঠেছে মিফতাহ উদ্দিন নামের ওই নৈশপ্রহরীর বিরুদ্ধে। মিফতাহ উদ্দিন সদর ইউনিয়নের সিকদার পাড়া মৃত এয়ার মোহাম্মদের ছেলে।
সম্প্রতি সরেজমিনে চাঞ্চল্যকর এসব তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে ওই মিফতাহ উদ্দিনের হামলার শিকার হন পেকুয়া প্রেস ক্লাবের সভাপতি ছফওয়ানুল করিম, পেকুয়া অনলাইন প্রেস ক্লাবের সভাপতি মো: ফারুক, সাংবাদিক মুফিজুর রহমান সিকদার।
গত ১৫ এপ্রিল সাংবাদিকদের উপর হামলার ঘটনায় পেকুয়া প্রেস ক্লাবের সভাপতি মো: ছফওয়ানুল করিম বাদী হয়ে অভিযুক্ত মিফতাহ উদ্দিনকে প্রধান আসামি করে পেকুয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। হাসপাতালে সেবা নিতে আসা বেশ কয়েকজন রোগী ও রোগীর স্বজনরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মিফতাহ উদ্দিন পেকুয়া হাসপাতালের জন্য একজন আতংক। সে এখানকার স্থানীয় হওয়ায় তার বিরুদ্ধে ভয়ে কেউ মুখ খুলতে চায়না। কেউ মুখ খুললেও তার উপর চালানো হয় নির্যাতন এবং করা হয় নাজেহাল। সেবা প্রার্থী শাকিরা বেগম, জন্নাত আরা, শাহাব উদ্দিন, লোকমান সহ আরো অনেকে জানান, মিফতাহ উদ্দিন নামের ওই নৈশপ্রহরী টাকার বিনিময়ে নানা অনিয়ম করে থাকেন।
এছাড়াও প্রতিনিয়ত রোগীদের সাথে অশালিন আচরণ ও রোগীদের মালামাল চুরি করেন এবং হাসপাতালে এলাকার চিহ্নিত দুবৃর্ত্তদের নিয়ে গড়ে তুলেন একটি শক্তিশালী ‘এম্বুলেন্স সিন্ডিকেট। এছাড়াও হাসপাতালের সরকারী ঔষধ বিক্রির অভিযোগও রয়েছে এই নৈশ প্রহরীর বিরুদ্ধে। হাসপাতালের একাধিক ডাক্তার, নার্স ও কর্মচারীর সাথে কথা বলে জানাযায়, মাস্টাররোলে কর্মরত নৈশ প্রহরী ক্ষমতাসীন নেতাদের নাম ব্যবহার করে এতই বেপরওয়া হয়ে উঠেছে যে, তার কাছে অনেকটা জিম্মি হয়ে আছে ডাক্তার, নার্স থেকে শুরু করে রোগী ও অন্যান্য কর্মচারীরা। তার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুললেই শিকার হন অত্যচার নির্যাতনের। সূত্র জানায়, বেশ কয়েকজন এমবিবিএস ডাক্তারকে পর্যন্ত মারতে উদ্দ্যত হয়েছিলেন বেপরোয়া এই নৈশ প্রহরী। মগনামা সাব মেরিণ ষ্টেশনে কর্মরত এক ইঞ্জিনিয়ারের মোটর সাইকেল চুরি করে চাপের মুখে তা আবার ফেরত দেয়ার অভিযোগও আছে এই নৈশ প্রহরীর বিরুদ্ধে।
তথ্যসূত্র জানায়, ২৫ মার্চ রাতে দিনে সেই অভিযুক্ত এই নৈশ প্রহরীর নেতৃত্বে হাসপাতালের এম্বুলেন্স সিন্ডিকেটের রেষারেষির কারণে এম্বুলেন্সেই প্রাণ হারান অসুস্থ এক বৃদ্ধ নারী। হাসপাতালের নিজস্ব এম্বুলেন্স থাকলেও একটি এম্বুলেন্স সিন্ডিকেট তৈরী করে মূমূর্ষ রোগীদের জিম্মি করে রেখেছে একটি অসাধু চক্র। হাসপাতাল থেকে কোন রোগীকে চট্টগ্রাম বা কক্সবাজারে রেফার করা হলে ওই সিন্ডিকেটের মূল হোতা মিফতাহ উদ্দিনকে ম্যানেজ করা যেন অঘোষিত নিয়মে পরিণত হয়েছে।
ঘটনার বিবরণে জানাযায়, ২৫ মার্চ রাতে রাজাখালী ইউনিয়নের মৃত এজহার মিয়ার স্ত্রী সিরাজ খাতুন (৬০) নামের এক বৃদ্ধাকে মূমূর্ষ অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসেন তার স্বজনরা। কিন্তু তার অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে রেফার করা হয় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। স্বজনরা তড়িগড়ি করে পরিচিত টইটং এলাকার শাহাদাতের মালিকনাধীন একটি এম্বুলেন্স এনে রোগীকে তড়িগড়ি করে চট্টগ্রাম নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এসময় ভয়ানক এই এম্বুলেন্স সিন্ডিকেটের সদস্যদের মারধরের শিকার হয় এম্বুলেন্স ড্রাইভার শাহাদাত। জিম্মি করে রাখা হয় রোগীসহ এম্বুলেন্সটি। এতে এম্বুলেন্সেই প্রাণ হারান হতভাগি বৃদ্ধা সিরাজ খাতুন।
এঘটনায় থানায় একটি হত্যা মামলা রুজু হলে সিন্ডিকেটের এক সদস্য আলমগীর কে আটক করে জেলে পাঠায় পুলিশ। কিন্তু অধরাই রয়ে যায় সিন্ডিকেটের মূল হোতা নৈশ প্রহরী মিফতাহ উদ্দিন। সাংবাদিকদের দায়ের করা মামলায় পলাতক থাকায় অভিযুক্ত মিফতাহ উদ্দিনের বক্তব্য সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরএমও ডা: মুজিবুর রহমান জানান, এ বিষয়ে আমাদের বক্তব্য না ছাপালেই আমাদের জন্য মঙ্গল হয়। এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে হাসপাতালটির স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মহিউদ্দিন চৌধুরী মাজেদ বলেন, এসব অনিয়ম বিষয়ে ইতিমধ্যে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া হবে।
জানা যায়, ১৯৯৪ সালে প্রতিষ্ঠার পর ২০ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নিত হওয়ার পর চরম জনবল সংকটে পড়ে হাসপাতালটি। জনবল সংকট নিরসনে ২০১৮ সালে এমপির বিশেষ বরাদ্দ থেকে হাসপাতাল পরিচালনা কমিটির রেজুলেশনের ভিত্তিতে স্থানীয় সিকদার পাড়ার মৃত এয়ার মোহাম্মদের পুত্র মিফতাহ উদ্দিনসহ তিন জনকে নৈশপ্রহরী হিসেবে নিয়োগ দেন কর্তৃপক্ষ।