প্রেস বিজ্ঞপ্তি
র্যাবের অভিযানে রাজধানীর রামপুরা ও হাতিরঝিল এলাকা হতে সংঘবদ্ধ মানবপাচার ও প্রতারক চক্রের মূলহোতাসহ ০৪ সদস্য গ্রেফতার, বিপুল পরিমান পাসপোর্ট, জাল ভিসা ও টিকেট তৈরির জন্য ব্যবহৃত কম্পিউটার উদ্ধার।
এলিট ফোর্স হিসেবে র্যাব আত্মপ্রকাশের সূচনালগ্ন থেকেই আইনের শাসন সমুন্নত রেখে দেশের সকল নাগরিকের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার লক্ষ্যে অপরাধ চিহিৃতকরণ, প্রতিরোধ, শান্তি ও জনশৃংখলা রক্ষায় কাজ করে আসছে। বর্তমান সময়ে মানবপাচাকারী চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন ফাঁদ, যেমন বিদেশে উচ্চ বেতনে চাকুরী দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে সাধারণ জনগণের সরলতার সুযোগ নিয়ে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে এক শ্রেণীর সুযোগ সন্ধানী মানবপাচারকারী চক্র। এ ধরনের মানবপাচারকারী চক্রকে আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য র্যাব সদা সচেষ্ট।
কতিপয় ভিকটিমের অভিযোগের ভিত্তিতে র্যাব-৩ জানতে পারে যে, রামপুরা এলাকায় একটি মানবপাচার ও প্রতারক চক্র মধ্যপ্রাচ্য হয়ে ইউরোপে প্রেরণের প্রলোভন দেখিয়ে ভূয়া ভিসা ও টিকেট সরবরাহ করে বিদেশ গমনে ইচ্ছুক বেকার যুবক যুবতীদের নিকট হতে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়ে তাদেরকে সর্বশান্ত করছে। সহজ সরল বিদেশ গমনে ইচ্ছুক ব্যক্তিরা উক্ত ভূয়া ভিসা ও টিকেট বিমানবন্দরে প্রদর্শন করার পর ইমেগ্রেশন কর্তৃপক্ষ তাদের ভিসা ও টিকেট জাল হওয়ায় বিমানবন্দর হতে ফিরিয়ে দিয়েছে। এরকম কিছু সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে র্যাব-৩ এর একটি আভিযানিক দল গোয়েন্দা নজরদারী ও ছায়া তদন্ত শুরু করে। ইতোমধ্যে গত ১২/০৪/২০২২খ্রিঃ তারিখে উক্ত চক্র মৌলভীবাজার হতে একজন নারীকে মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে প্রেরণের প্রলোভন দেখিয়ে রামপুরা এলাকার ধৃত কামরুলের বাসায় নিয়ে আসে। উক্ত বাসায় উক্ত নারীকে আটক রেখে ধৃত তোফায়েল জোরপূর্বক তাকে ধর্ষণ করে। উক্ত নারী মোবাইল ফোনে র্যাবের নিকট সাহায্য চাইলে র্যাবের একটি আভিযানিক দল ১৩/০৪/২০২২খ্রিঃ তারিখ রাত ০২৪০ ঘটিকায় রামপুরা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে উক্ত নারীকে উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকৃত ভিকটিমকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, ভিকটিম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মোঃ সাইফুল ইসলাম শান্ত নামে এক ব্যক্তিকে বিবাহ করে। বিবাহের পর সাইফুল যৌতুক বাবদ ভিকটিমের নিকট হতে ধাপে ধাপে ৫,০০,০০০/-টাকা আদায় করে ভিকটিমকে ত্যাগ করে চলে যায়। মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে উক্ত যৌতুকের টাকা ভিকটিমের পিতা মানুষের নিকট হতে ধার দেনা করে জোগাড় করেছিলেন। পাওনাদাররা টাকার জন্য চাপ দিতে থাকলে ভিকটিম তার গ্রামের দালাল ধৃত তোফায়েলের শরণাপন্ন হয়। ভিকটিমের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে ধৃত তোফায়েল ভিকটিমকে গৃহকর্মী হিসেবে সৌদিআরব প্রেরণের প্রলোভন দেখায়। উক্ত প্রলোভনে পড়ে ভিকটিম সৌদিআরব যেতে রাজি হয়। এরপর সৌদিআরব যেতে হলে আরবী ভাষার ট্রেনিং করতে হবে, এই কথা বলে ভিকটিমকে ঢাকায় নিয়ে এসে কামরুলের বাসায় আটক রেখে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ভিকটিমকে রামপুরা থানায় প্রেরণ করা হয়। উক্ত ভিকটিম বাদী হয়ে ধৃত আসামীদের বিরুদ্ধে রামপুরা থানায় নারী শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করেন।
উক্ত ভিকটিমের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় ১৬/০৪/২০২২খ্রিঃ তারিখ রাতে রামপুরা ও হাতিরঝিল এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে মানবপাচার ও প্রতারক চক্রের মূলহোতা ১। কামরুল আহম্মেদ(৪২), সাং-বড়বাড়ী, থানা ও জেলা-মৌলভীবাজার ও তার সহযোগী ২। মোঃ খালেদ মাসুদ হেলাল(৩৬), সাং-মোকামবাজার, থানা-রাজনগর, জেলা- মৌলভীবাজার, ৩। তোফায়েল আহম্মেদ(৩৮), সাং-মনিয়ার পাড়, থানা-রাজনগর, জেলা- মৌলভীবাজার এবং ৪। মোঃ জামাল (৪২), সাং-দড়িচর ভাসানী, থানা-মাধবদী, জেলা- নরসিংদীদেরকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। তাদের হেফাজত হতে ২৭ টি পাসপোর্ট, ০১ টি মনিটর, ০১ টি সিপিইউ, ০১ টি মাউস, ০১ টি কীবোর্ড, ০১ টি ইউপিএস, ১০০ টি ভিসার কপি, ১২৫ টি টিকেট, ০৪ টি মোবাইল ফোন, ০২ টি ফরম বই কোভিড-১৯ নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা(জঞ-চঈজ) এবং ০১ টি প্রিন্টার উদ্ধার করা হয়।
প্রাথমিক অনুসন্ধান ও ধৃত আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, ধৃত আসামীরা সংঘবদ্ধ মানবপাচার ও প্রতারক চক্রের সদস্য। ধৃত কামরুল উক্ত চক্রের মূলহোতা এবং অপরাপর ধৃত আসামীরা তার সহযোগী। তাদের জনশক্তি রপ্তানির কোন লাইসেন্স নেই। কিন্তু তারা দীর্ঘদিন ধরে জনশক্তি রপ্তানির নামে অবৈধভাবে ভ্রমণ ভিসার মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে লোক প্রেরণ করে আসছে। এছাড়াও উক্ত চক্র মধ্যপ্রাচ্য হয়ে ইউরোপে জনশক্তি প্রেরণের প্রলোভন দেখিয়ে বিদেশ গমনে ইচ্ছুক বেকার যুবক যুবতিদের নিকট থেকে ০৫ হতে ০৭ লক্ষ টাকা করে হাতিয়ে নিয়ে ভূয়া ভিসা এবং ভূয়া টিকেট ভুক্তভোগীদের হাতে ধরিয়ে দেয়। ভুক্তভোগীরা উক্ত ভিসা এবং টিকেট নিয়ে বিমানবন্দরে গেলে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ তাদের উক্ত ভিসা এবং টিকেট জাল হওয়ায় বিমানবন্দর হতে ফিরিয়ে দেন। ভুক্তভোগীরা এবিষয়ে প্রতিকার চাইলে ধৃত আসামীরা তাদের সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে বাসার ঠিকানা পরিবর্তন করে দেয়। এভাবে গত ০২ বছরে ধৃত আসামীরা আটবার বাসার ঠিকানা পরিবর্তন করে। গত ০৫ বছরে উক্ত চক্র অবৈধভাবে শতাধিক লোককে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে প্রেরণ করে। যারা বিদেশ গিয়ে কাজ না পেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। অন্যদিকে এই চক্র শতাধিক লোককে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে প্রেরণের প্রলোভন দেখিয়ে জনপ্রতি ০৫ হতে ০৭ লক্ষ টাকা করে হাতিয়ে নিয়ে ভূয়া ভিসা এবং ভূয়া টিকেট সরবরাহ করে প্রায় ৩ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়।
উক্ত চক্রের মূলহোতা ধৃত কামরুল নবম শ্রেনী পর্যন্ত লেখাপড়া করেছে। তার কোন নির্দিষ্ট পেশা নেই। প্রতারণা এবং মানবপাচারই তার পেশা। ২০১৯ সালে সে ভ্রমণ ভিসায় দুবাই যায়। তারপর সেখানে মানবপাচারের মাধ্যমে অর্জিত অর্থ দিয়ে দুবাই এর রেসিডেন্স ভিসা লাভ করে এবং একটি প্রাইভেটকার ক্রয় করে নিজে ড্রাইভিং করে ভাড়ায় উক্ত প্রাইভেটকার পরিচালনা করে অর্থ উপার্জন করে। বিশ্বে করোনার প্রাদূর্ভাব হলে উক্ত প্রাইভেটকারটি বিক্রি করে মে/২০২১ সালে সে বাংলাদেশে ফিরে এসে পুনরায় প্রতারণা এবং মানবপাচারকে তার পেশা হিসেবে বেছে নেয়। তার জনশক্তি রপ্তানির কোন লাইসেন্স নেই। সে বিভিন্ন টুরস ও ট্রাভেলস এর সাথে যোগাযোগ করে অবৈধভাবে ভ্রমণ ভিসায় বিভিন্ন দেশে লোক প্রেরণ করে। যারা বিদেশ গিয়ে কাজ না পেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। এছাড়াও সে প্রতারণামূলকভাবে জনপ্রতি ০৫ হতে ০৭ লক্ষ টাকা করে হাতিয়ে নিয়ে ভূয়া ভিসা এবং ভূয়া টিকেট সরবরাহ করে প্রায় পাঁচশতাধিক লোকের নিকট হতে ০৩ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। ধৃত কামরুলের নামে চট্রগ্রাম কোর্টে একটি চেক জালিয়াতির মামলা এবং মৌলভীবাজার কোর্টে ডাচ বাংলা ব্যাংকে ১৮ লক্ষ টাকার একটি মামলা রয়েছে। তার বিভিন্ন ব্যাংক একাউন্টে ৩৮ লক্ষ টাকার উপরে আছে বলে জানায়।
তার অন্যতম সহযোগী জামাল মাহবুব ইন্টারন্যাশনাল এর এ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার। মাহবুব ইন্টারন্যাশনাল মানবপাচার এর সাথে সম্পৃক্ত থাকায় বিএমইটি কর্তৃক তাদের লাইসেন্স ব্লক করে দেওয়া হয়েছে। একমাস পূর্বে মাহবুব ইন্টারন্যাশনাল এর এমডি মানবপাচারের দায়ে র্যাব-৩ কর্তৃক ধৃত হয়। ধৃত জামাল সপ্তম শ্রেনী পর্যন্ত লেখাপড়া করেছে। পাঁচ বছর ধরে সে কামরুল এর সাথে প্রতারণা এবং মানবপাচারের কাজ করে আসছে। ধৃত জামালের নামে একটি মাদক মামলা রয়েছে।
ধৃত খালেদ ২০০১ সাল হতে দীর্ঘ ১৫ বছর সৌদিআরবে ছিল। ২০১৬ সালে বাংলাদেশে ফেরত এসে সে রাজনগর মৌলভীবাজারে রেস্টুরেন্টের ব্যবসা শুরু করে। কিন্তু উক্ত ব্যবসায় সে সফল হতে না পেরে কামরুলের সাথে প্রতারণা ও মানবপাচারের কাজে যোগ দেয়। সে অষ্টম শ্রেনী পর্যন্ত লেখাপড়া করেছে।
ধৃত তোফায়েলের পেশা ড্রাইভিং। এছাড়াও মৌলভীবাজারে তার সিএনজি পার্টস এবং ডেকোরেটরসের ব্যবসা রয়েছে। অতি লাভের আশায় সে কামরুলের সাথে প্রতারণা ও মানবপাচারের কাজে যোগ দেয়। কামরুলের বড় ভাইয়ের মাধ্যমে কামরুলের সাথে তার পরিচয় হয়। উদ্ধারকৃত ভিকটিম ধৃত তোফায়েলের গ্রাম সম্পর্কীয় আত্মীয়। ভিকটিমের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে তার সম্ভ্রম নষ্ট করার লক্ষ্য নিয়েই সে ভিকটিমকে সৌদিআরবে প্রেরণের প্রলোভন দেখিয়েছিল। এরপর সে ভিকটিমকে কৌশলে ঢাকায় নিয়ে এসে কামরুলের বাসায় আটক রেখে তাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। র্যাবের অভিযানে উক্ত ভিকটিম উদ্ধার হয়। ধৃত তোফায়েলের নামে একটি চুরি মামলা রয়েছে।
ধৃত আসামীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন। বীণা রানী দাস, পিপিএম, পিপিএম (সেবা) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার স্টাফ অফিসার (অপস্ধসঢ়; ও ইন্ট শাখা) পক্ষে পরিচালক
প্রকাশক ও সম্পাদক মোঃ গোলাম মাওলা শাওন ০১৭১১-০০৬২১৪, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক 01762119992, প্রধান কার্যালয় ৩৪ নুরজাহান শরীফ প্লাজা ৮ম তলা, পুরানা পল্টন ঢাকা ১০০০। ০১৯৯৯-৯৫৩৯৭০ নিউজ ই-মেইল [email protected] সিভি পাঠান: [email protected]