পুরাতন জীর্ণ মলিনতা ধুয়ে মুছে,সুন্দর আগামীর অসম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে সারাদেশের ন্যায় প্রাচীনঐতিহ্যের ধারক- বাহক যশোর শহরে মহা সাড়ম্বরে পালিত হলো বাঙালির সার্বজনীন প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ -১৪২৯।

বৈশ্বিক মহামারী করোনার সুনামির কারণে দীর্ঘ  দু'বছর কোন ধরনের সামাজিক,সাংস্কৃতিক ও জাতীয় অনুষ্ঠান পালনে বাধ্যবাদকতা থাকায় জনজীবনে ছিল না কোন আনন্দের হিল্লোল। আর তাই দু'বছর পর পালিত বাঙালি সমাজের প্রাণের উৎসব নববর্ষে দেখা যায় মহা আনন্দের মিলনমেলা। সকাল সাড়ে ৬টায় যশোর শহরের পুরাতন বিদ্যাপীঠ মুসলিম একাডেমি চত্বরে পুনশ্চের শিল্পীদের সুরের মুর্ছনায় আন্দোলিত হলো। প্রায়ই একই সাথে যশোর শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত টাউন হল ময়দানের শতাব্দী বৃক্ষের তলে সুরবিতানের বাদ্য সুরে আলো ছড়ালো।সকাল সাতটায় পৌর পার্কের শিশুদের নৃত্য গীতি ও ছন্দে বৈশাখীর মাতাল হাওয়া দোলা লাগালো।

যশোর জেলা বর্ষবরণ পরিষদের আমন্ত্রণে সকাল সাড়ে সাতটায় টাউন হল মাঠের শতাব্দী বৃক্ষ তলে এলো যশোর জেলার কমপক্ষে ২৫/ ৩০ টি সাংস্কৃতিক সংগঠন। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারন সম্পাদক সানোয়ার আলম খান দুলু উপস্থাপনায় যশোরের সমস্ত সাংস্কৃতিক সংগঠন আবৃত্তি, গান ও নৃত্যের যে কোন একটি করে উপাস্থপন করেন।  বিবর্তন যশোরের  আবৃত্তির মাধ্যমে শুরু হলো  বাঙালির সর্ববৃহৎ প্রাণের উৎসব বর্ষবরণের অনুষ্ঠান।

সকাল ৯টার পরে  মঞ্চে আসেন জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান, পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ার্দার, ডিডিএলজি হোসাইন শওকত সহ উদযাপন পর্ষদের আহবায়ক সুকুমার দাস, বীর মুক্তিযোদ্ধা এডঃ রবিউল আলম, হারুন অর রশীদ,ডাঃ আবুল কালাম আজাদ, জাহিদ হাসান টুকুন, এডঃ মাহমুদ হাসান বুলু সহ সাংস্কৃতিক জন। সুকুমার দাস স্বাগত বক্তব্য দিয়ে মঙ্গল শোভাযাত্রার উদ্বোধনী আলোচনা শুরু করেন পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়র্দার। এরপর  জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান  বক্তব্য রাখেন ও শোভাযাত্রার উদ্ধোধন ঘোষনা করেন।

যশোর টাউন হল ময়দানে জেলা প্রশাসন ও বর্ষবরণ উদযাপন পরিষদের আয়োজনে বর্ষবরণ ও মঙ্গল শোভাযাত্রা  সত্যিকার অর্থে পহেলা বৈশাখ উৎসবে  যোগ করে নতুন মাত্রা। মঙ্গল শোভাযাত্রাটি টাউন হল ময়দান থেকে শুরু করে দড়াটানা মোড় হয়ে চিত্রার মোড় দিয়ে পুনরায় টাউন হল ময়দানে এসে শেষ হয়।

এই মঙ্গল শোভাযাত্রায় যোগ দেন জেলা প্রশাসন যশোর পুলিশ প্রশাসন, , বিভিন্ন  সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেত্রীবৃন্দ সহ সর্বস্তরের জনগণ।

 শোভাযাত্রায় বাঙ্গালির ঐতিহ্যকে তুলে ধরা হয়। পরিশেষে সংক্ষিপ্ত পরিসরে দিবসটি উপলক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা সভায় যশোরের পুলিশ সুপার সকলকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন,এবারের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানকে নির্বিঘ্ন করতে সম্পূর্ণ যশোরে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।

যেকোন অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে জেলা পুলিশের প্রতিটি ইউনিট নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, পোশাকের পাশা-পাশি আমরা বিপুল সংখ্যক  সাদা পোশাকের পুলিশও নিয়োজিত করেছি। যদি কেউ কোন রকম বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করে তবে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এছাড়াও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নারীদের ইভটিজিং রোধে পুরা শহরে নেয়া হয়েছে বিশেষ নজরদারি।

জেলা প্রশাসক তার সংক্ষিপ্ত বক্তবে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, জেলা প্রশাসন ও নববর্ষ উদযাপন পরিষদের  আহ্বানে যশোরের সকল সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন স্বতঃস্ফূর্ত অংশ গ্রহনই বাংলাদেশকে অসম্প্রদায়িক ও সোনার বাংলাদেশ গড়ার পথে এগিয়ে নিতে সহযোগিতা করবে। যশোরের নববর্ষ উদযাপনে গ্রামীণ ঐতিহ্যসহ অসম্প্রদায়িক চেতনার মানসে তৈরী ছবিগুলো পেয়ে ছিল নতুন মাত্রা।