প্রিন্ট এর তারিখঃ নভেম্বর ১৮, ২০২৪, ৪:৪৪ এ.এম || প্রকাশের তারিখঃ এপ্রিল ৪, ২০২২, ২:৩৩ পি.এম
সেই কোন শৈশবে বাবার হাত ধরে ‘দৈনিক পাকিস্তান’ দিয়ে পত্রিকার হকারি জীবনের শুরু।
সাইফুর নিশাদ নরসিংদী প্রতিনিধি
আজ ৫৭ বছর ধরে আছেন সেই একই পেশায়। সাইকেলে করে ঘুরে ঘুরে আগের মতোই পত্রিকা পৌঁছে দেন অফিসে অফিসে, মানুষের বাড়িতে বাড়িতে।
নরসিংদীর মনোহরদী পৌর এলাকার হাররদীয়া গ্রামের বাসিন্দা মতিউর রহমান। বয়স ৭০। স্থানীয়ভাবে সবাই তাকে হকার মতি হিসেবেই চেনেন।
আলাপকালে মতি ভাই জানান, বাবার হাত ধরে ‘দৈনিক পাকিস্তান’ ও ‘অবজারভার’ দিয়ে তার পত্রিকা ব্যবসার শুরু। মতি ভাইয়ের ভাষায়, পাক-ভারত যুদ্ধের সময় (৬৫ সাল) থেকে তিনি এ ব্যবসায় আছেন। তিনি তখন ১৩ কিলোমিটার দূরের শিবপুর থেকে সাইকেলে করে পত্রিকা আনতেন। আবার সাইকেলে করেই পাঠকদের বাড়ি ও অফিসে পৌঁছে দিতেন পত্রিকা। তার ব্যবসার গন্ডি একসময় মনোহরদী ছাড়িয়ে কাপাসিয়া উপজেলারও এক বিস্তীর্ণ গন্ডি পর্যন্ত ছড়িয়ে ছিলো।
গল্পে গল্পে মতি ভাই জানান, আগের দিনের পত্রিকা পরের দিন আসতো। তা'ও মাত্র ২০টি পত্রিকা। সেও আবার নিজের নামে নয়- শিবপুরের খালেক মাস্টারের নামে। সেখান থেকে পত্রিকা এনে বিক্রি করতেন তিনি। পরে নিজে এজেন্ট হন। পাশাপাশি ডাক বিভাগের রানার পদে চাকরি নেন।
১৩ কিলোমিটার দূরবর্তী শিবপুর থেকে সাইকেল চালিয়ে পত্রিকা আনতে যেতেন। সেইসঙ্গে আবার ডাক আনানেয়ার কাজও করতে হতো প্রতিদিন। এভাবে প্রত্যহ শিবপুর যাতায়াত করতে হতো তাকে। আবার সাইকেলে করে ঘুরে ঘুরে পত্রিকাও পৌঁছে দিতে হতো পাঠকদের হাতে হাতে। এ কাজে তাকে যেমন মনোহরদী সদরের এ বাড়ি- ও বাড়ি, এ অফিস- ও অফিস যেতে হতো, তেমনি কাপাসিয়া এলাকার খিরাটি, কামারগাঁও, চালা, ঘোরস্বাব ও আড়াল এলাকায়ও যাতায়াত করতে হতো। আর তা'ও মাঝেমধ্যে কিংবা কখনো-সখনো নয়, একেবারে নিয়মিত এবং প্রতিদিন।
মতিভাই জানান, এজন্য কম করে হলেও প্রতিদিন ৫০ থেকে ৬০ কিলোমিটার রাস্তা সাইকেল চালাতো হতো তাকে। পরে এ ব্যবসায় ছেলে আলমও সহায়তা করতো তাকে। এ কাজে রোদ-বৃষ্টি-ঝড় কোনটাকেই ভয় পেলে চলতো না তার।
মতি ভাই ডাক বিভাগের চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন সেও আজ প্রায় ১০ বছর। কিন্তু এখনো তিনি সাইকেলে করে পত্রিকা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন আগের মতোই। এখনো এলাকাবাসীসহ মনোহরদীর সরকারি-বেসরকারি অধিকাংশ অফিসই আছে এ পুরনো সংবাত্রসেবীর দখলেই।
আলাপকালে মতি ভাই আরও জানান, কালের পরিবর্তনে এ ব্যবসায় অনেক পরিবর্তন এসেছে। খুব কম সংবাদপত্রসেবীই এখন আর আগের মতো সাইকেলে করে পত্রিকা বিতরণ করে থাকেন। এখন অধিকাংশেরই মোটরসাইকেল আছে। কিন্তু মতি ভাই আছেন আগের মতোই।
কিন্তু আর কতোদিন এভাবে চলবে তার- জানতে চাইলে তিনি বলেন, পরিশ্রম করে সারা জীবন গেছে। এখন আর বসে বসে খেতে ভালো লাগে না। যতোদিন শরীর-স্বাস্থ্যে কুলোয়, ততোদিনই এ ব্যবসা চালিয়ে যাবার ইচ্ছে। আর তা আগের মতোই সাইকেলে করে ঘুরে ঘুরেই।
প্রকাশক ও সম্পাদক মোঃ গোলাম মাওলা শাওন ০১৭১১-০০৬২১৪, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক 01762119992, প্রধান কার্যালয় ৩৪ নুরজাহান শরীফ প্লাজা ৮ম তলা, পুরানা পল্টন ঢাকা ১০০০। ০১৯৯৯-৯৫৩৯৭০ নিউজ ই-মেইল [email protected] সিভি পাঠান: [email protected]
দৈনিক বাংলার আলো নিউজ জিএমএস বাংলার আলো গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান।