ঝালকাঠি প্রতিনিধিঃ
ঝালকাঠি জেলার অন্তর্গত নলছিটি পৌরসভা। এটি দেশের অতি প্রাচীন পৌরসভা। ২৪.১৬ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের "খ" শ্রেনীর এই পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে ৫০,০০০ (পঞ্চাশ) হাজার মানুষের বাস।
দীর্ঘদিনেও এখানকার পৌর নাগরিকদের ভাগ্যের তেমন কোনো উন্নতি ঘটেনি। সম্প্রতীকালে উন্নয়ন কাজে বেশ বরাদ্দ আসলেও অভিযোগ রয়েছে বরাদ্দের সিংহভাগ অর্থ যাচ্ছে মেয়রের পকেটে।
এই পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী আবু সায়েম, পৌরকর্মচারী গোলাম মোস্তফা, মিরাজুল ইসলাম প্রিন্স এবং সাবেক পৌরসচিব রাশেদ ইকবালকে নিয়ে গত ১ বছরে ৪কোটি টাকা আত্মসাত করেছে মেয়র আব্দুল ওয়াহেদ কবির খান। এমনই অভিযোগ করেছেন বর্তমান পৌর পরিষদের ৬ জন কাউন্সিলর।
নলছিটি পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র পলাশ তালুকদার বলেন, শুধু বরাদ্দই নয়, সাবেক মেয়রের রেখে যাওয়া ৪৩ লাখ টাকা সোনালী ব্যাংকের নলছিটি শাখা থেকে কৃষি ব্যাংকের শাখায় ট্রান্সফার করে পুরোটাই উত্তোলন করে আত্মসাত করেছে মেয়র ওয়াহেদ কবির। ঐ টাকা কোন খাতে খরচ করা হয়েছে তার কোন হিসেব কাউন্সিলরদের দেখাতে পারেনি মেয়র।
অভিযোগের সত্যতা জানতে কথাহয় নলছিটি পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তাজুল ইসলাম দুলাল চৌধুরী, ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ফিরোজ আলম খান, ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রেজাউল চৌধুরী, ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শহিদুল ইসলাম টিটু এবং ৪,৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত কাউন্সিলর দিলরুবা বেগমের সাথে। তারা মেয়র কর্তৃক অর্থ আত্মসাতের বিষয়টি সঠিক বলে জানিয়েছেন।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়সহ ১২টি দপ্তরে মেয়রের বিরুদ্ধে অর্থ লুটপাটের বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পত্র দিয়েছেন মোহাম্মদ সাইদুর রহমান নামের একজন পৌর নাগরিক। অভিযোগপত্রে খাতওয়ারীভাবে তিনি লিখেছেন, নলছিটি পৌরসভায় ২০২০-২১ অর্থ বছরের বিভিন্ন সময়ে ডেঙ্গু নিধনে বরাদ্দ ২ লাখ ৮৮ হাজার টাকা, আয়লায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য বরাদ্দ ৮ লাখ ৭৫ হাজার টাকা, করোনার স্বাস্থ্য সামগ্রী বিতরনের জন্য ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা, ৯টি প্রকল্পে বিশেষ বরাদ্দের ২৫ লাখ টাকা, উন্নয়ন বাজেটের ২৭ লাখ ৩০ হাজার টাকা। পৌরসভার বিশেষ বরাদ্দ ২০লাখ টাকা, নগর উন্নয়ন প্রকল্প থেকে ২ কোটি ৭৫ লাখ টাকা উত্তোলন, জলবায়ু প্রকল্পের ৫০ লাখ টাকা এবং করোনার দ্বিতীয় বরাদ্দের ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকার নামমাত্র কাজ করে অর্থআত্বসাত করা হয়েছে।
পৌর কাউন্সিলর তাজুল ইসলাম দুলাল চৌধূরী বলেন, যেসব প্রকল্পে টাকা দেয়া হয়েছে, তার কোন বাস্তব প্রতিফলন জনগন দেখতে পায়নি। করোনার স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী বিতরন ও ডেঙ্গু নিধনে ওষুধ বিতরন করা হয়েছে নামমাত্র। বাকিটা হয়েছে হরিলুট।
পৌর কাউন্সিলর রেজাউল চৌধূরী বলেন, নগর উন্নয়ন প্রকল্পে ৭টি রাস্তা নির্মানের জন্য ২কোটি ৭৫ লাখ টাকা উত্তোলন করা হলেও ৩টি রাস্তার মাত্র ২০ কুড়ি ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বাকী ৪টি রাস্তার আদৌ কোন কাজ না করে বিল উত্তোলন করে আত্বসাত করা হয়েছে।
পৌর কাউন্সিলর ফিরোজ আলম খান বলেন, জলবায়ু প্রকল্পের বরাদ্দ ২ কোটি টাকার অনকুলে ১৫০টি ষ্ট্রিট লাইট ও ৫০টি গভীর নলকুপ বরাদ্দ ছিলো। এখানে ৮ টি গভীর নলকুপ ও ১৫টি স্ট্রিট লাইট স্থাপন করে বরাদ্দকৃত বাকী অর্থ আত্বসাত করা হয়েছে।
আরেক কাউন্সিলর সহিদুল ইসলাম টিটু বলেন, আমার ওয়ার্ডে রাস্তার কাজ না করে বিল তোলায় আমি মেয়রের কাছে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছি টিটু আরো বলেন, ২০২০-২১ অর্থ বছরে বিভিন্ন প্রকল্পে বরাদ্দের সব মিলিয়ে ৪ কোটি টাকার কোন কাজ না করেই অর্থ আত্বসাত করা হয়েছে।
পৌর কাউন্সিলর দিলরুবা বেগম বলেন, ১নং প্যানেল মেয়র টেন্ডার কমিটির আহবায়ক হওয়া সত্যেও তার সাথে কোন ধরনের আলোচনা না করেই সবগুলো টেন্ডার সম্পন্ন করেছে মেয়র ওয়াহেদ কবির খান।
সরকারী বরাদ্দের অর্থ লুটপাটের অভিযোগ অস্বিকার করে মুঠোফোনে নলছিটি পৌরসভার মেয়র ওয়াহেদ কবির খান বলেন, আমার বিরুদ্ধে প্রতিহিংসা পরায়ন হয়ে মিথ্যে অভিযোগ দেয়া হচ্ছে। কাজ না করে বিল উঠানো এবং হিসাব না দেয়ার অভিযোগ সঠিক নয়। অনেক প্রকল্পের কাজ এখনও চলমান রয়েছে।
প্রকাশক ও সম্পাদক মোঃ গোলাম মাওলা শাওন ০১৭১১-০০৬২১৪, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক 01762119992, প্রধান কার্যালয় ৩৪ নুরজাহান শরীফ প্লাজা ৮ম তলা, পুরানা পল্টন ঢাকা ১০০০। ০১৯৯৯-৯৫৩৯৭০ নিউজ ই-মেইল [email protected] সিভি পাঠান: [email protected]