তানোর প্রতিনিধি: রাজশাহীর তানোরে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে ও জমিতে সেচের পানি চাওয়ার কারনে দু দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। গত সোমবার বিকেলে ও সন্ধ্যার আগে উপজেলার চান্দুড়িয়া ইউপির গাগরন্দ গ্রামে এবং ফুটবল মাঠে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে মারপিটের ঘটনাটি ঘটেছে।
এঘটনায় নারী পুরুষসহ ৫ জন আহত হন। তাদের মধ্যে ২ জনকে আশঙ্কা জনক অবস্থায় মঙ্গলবারে রামেক হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়েছে।
আহতরা হলেন, নুর নবী, তার ছেলে শামিম ও নয়ন এবং ঝর্ণা বেগম, মিতু। এদের মধ্যে শামিম ও নয়নকে রামেকে পাঠানো হয়েছে। তাদের অবস্থা খুবই আশঙ্কা জনক বলে নিশ্চিত করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক।
এঘটনায় আহত নুর নবী বাদি হয়ে সোমবার রাতে এখলাস আলীকে প্রধান আসামী করে ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে থানায় এজহার দায়ের করেছেন। শুধু মারপিট করেই ক্লান্ত হননি তারা। বাড়ির আসবাব পত্র ভাংচুর করেছেন। এঘটনায় উভয় পক্ষের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।
এজহারে উল্লেখ জমি-জমা সংক্রান্ত পূর্ব শত্রুতার জের ধরে বিবাদীগনের সাথে দীর্ঘদিন যাবৎ বিরোধ চলে আসছে। উক্ত বিরোধের জের ধরে ইং ০৯/০৯/২০২৪ তারিখ বিকেল অনুমান ০৪:৩০ ঘটিকায় উল্লেখিত বিবাদীগন পূর্বপরিকল্পিত ভাবে একই উদ্দেশ্যে বে-আইনী জনতায় দলবদ্ধ হয়ে হাতে বাঁশের লাঠি, লোহার রড, ধারালো হাসুয়া, লোহার শাবল ইত্যাদি নিয়ে চাঁন্দুড়িয়া ইউনিয়নের গাগরন্দ গ্রামস্থ নিজ বসত-বাড়ির ভিতরে অনধিকার প্রবেশ করে আমাকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করতে থাকে।
আমি বিবাদীগনকে গালিগালাজ করতে নিষেধ করলে ১নং বিবাদী মোঃ এখলাস, ২নং বিবাদী মোঃ আজাদ ও ৬নং বিবাদী মোঃ কাউসার’গন অন্যান্য বিবাদীদের হুকুম দিয়ে বলে যে, “শালাকে মেরে জীবনের মত শেষ করে ফেল এবং ঘর-বাড়িতে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দে” এই বলে ১নং বিবাদী এখলাস তার হাতে থাকা লোহার শাবল দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে আমার মাথায় আঘাত করলে উক্ত আঘাত আমি আমার ডান হাত দিয়ে প্রতিহত করলে ডান হাত ও ডান হাতের কনুইয়ের উপরে লেগে গুরুতর হাড়ভাঙ্গা জখম হয়।
এমন সময় আমার বড় ছেলে মোঃ শামীম রেজা (৩০), ছোট ছেলে মোঃ নুরুল ইসলাম নয়ন (২৩), স্ত্রী মোসাঃ রুমা বেগম (৪৫) ও মেয়ে মোসাঃ নুরজাহান খাতুন মিতু (২০) এগিয়ে আসলে ৩নং বিবাদী মোঃ আফজাল তার হাতে থাকা বাঁশের লাঠি দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে আমার ছেলে শামীমের মাথায় আঘাত করলে উক্ত আঘাত লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে আমার ছেলে শামীমের নাকের উপরে লেগে গুরুতর হাড়ভাঙ্গা জখম হয়। ৪নং বিবাদী মোঃ আব্বাস তার হাতে থাকা লোহার রড দিয়ে আমার ছেলে শামীমের মাথার পিছনে ও কপালে সজোরে আঘাত করে গুরুতর ফোলা, ছিলা ও রক্তাক্ত জখম করে। ২নং বিবাদী মোঃ আজাদ তার হাতে থাকা ধারালো হাসুয়া দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে আমার ছেলে নুরুল ইসলাম নয়নের মাথায় সজোরে কোপ মেরে মাথা ও কপালের ডান পার্শ্বে গুরুতর কাঁটা রক্তাক্ত জখম করে। সেখানে ২টি সেলাই পড়ে। ৫নং বিবাদী মোঃ আক্কাস তার হাতে থাকা ধারালো হাসুয়া দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে আমার ছেলে নুরুল ইসলাম নয়নের মাথায় আঘাত করলে উক্ত আঘাত লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে নয়নের ডান চোখের পার্শ্বে লেগে গুরুতর কাঁটা রক্তাক্ত জখম হয়।
অন্যান্য বিবাদীগন তাদের হাতে থাকা বাঁশের লাঠি, লোহার রড, লোহার শাবল দিয়ে আমার স্ত্রী ও মেয়েকে এলোপাথাড়ি আঘাত করে শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছিলা, ফোলা ও কালশিরা জখম করে। ১নং বিবাদী মোঃ এখলাস ও ১১নং বিবাদী মোঃ আলম আমার স্ত্রী ও মেয়ের পরণের কাপড়-চোপড় টানা-হেঁচড়া করে শ্লীলতাহানি ঘটায়। ৬নং বিবাদী মোঃ কাউসার ও ৯নং বিবাদী মোঃ মেজবাউল আমার শয়ন ঘরে প্রবেশ করে শয়ন ঘরের শো-কেসের ড্রয়ারে থাকা নগদ ২,৫০,০০০/-(দুই লক্ষ পঞ্চাশ হাজার) টাকা অসৎ উদ্দেশ্যে নিয়ে নেয়।
সকল বিবাদীগন তাদের হাতে থাকা লোহার রড, বাঁশের লাঠি ও লোহার শাবল দিয়ে আমার বসত-বাড়ির টিনসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র ভাংচুর করে প্রায় ১,৮০,০০০/-(এক লক্ষ আশি হাজার) টাকার ক্ষতিসাধন করে।
বিবাদীগন আমাকেসহ আমার ছেলে, মেয়ে ও স্ত্রীকে এলোপাথাড়ি ভাবে আঘাত করে আমাদের শরীরের বিভিন্ন ছিলা, ফোলা ও কালশিরা জখম করে। তাদের চিৎকারে গ্রামবাসী এগিয়ে এসে উদ্ধার করে রাস্তায় চালিত চার্জার ভ্যানযোগে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য একই তারিখ ০৫:৩০ ঘটিকায় থানাধীন ৭নং চাঁন্দুড়িয়া ইউনিয়নের চকদমদমা গ্রামস্থ ফুটবল মাঠের পূর্ব পার্শ্বে হেয়ারিং রাস্তার উপর পৌঁছা মাত্রই উপরোক্ত বিবাদীগন পথরোধ করে হত্যার উদ্দেশ্যে দ্বিতীয় দফায় হামলা করে এলোপাতাড়ি মারপিট করে।
বাদি নুরনবী জানান, দীর্ঘ দিন ধরে তাদের সাথে জমি জমা নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল। গত সোমবার জমিতে সেচের পানি চাওয়ার কারনে বাড়িতে ঢুকে আমিসহ আমার পরিবারের লোকজনের উপর নৃশংস ভাবে হামলা চালিয়ে আহত করে বাড়ির আসবাব পত্র ভাংচুর করাসহ টাকা লুট করে।
তানোর থানার নব নিযুক্ত ওসি মিজানুর রহমান মিজান বলেন, আমি মঙ্গলবারে থানায় যোগদান করেছি। মারপিটের ঘটনায় থানায় এজহার কিংবা অভিযোগ দায়ের হলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।